করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিকল্প পন্থায় ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া চালু রাখার উদ্যোগ নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।
রেকর্ড করা বিষয়ভিত্তিক লেকচার টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে। পাশাপাশি ইউটিউব ও অনলাইনে আপলোড করা হবে লেকচার।
আগামী শনিবার থেকে এই তিন মাধ্যমেই সেবা কার্যক্রমটি শুরু হবে। প্রস্তুতি শেষ হলে এর আগে মঙ্গলবার পরীক্ষামূলক সম্প্রচার করা হবে। আপাতত ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পাবে এই সেবা।
এ লক্ষ্যে বর্তমানে লেকচার রেকর্ডিং, সম্পাদনা ও মূল্যায়নের কাজ চলছে।
অপরদিকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিকল্প পন্থায় লেখাপড়া চালু রাখার চিন্তাও চলছে। এ লক্ষ্যে আজ (সোমবার) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে (ডিপিই) বৈঠক ডাকা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা অধিদফতরের ফেসবুক পেজে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ।
মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম গোলাম ফারুক যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের বিদ্যমান পরিস্থিতি কতদিন বিরাজ করে সেটা নিশ্চিত নয়। তাই শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালু রাখার স্বার্থে বিষয়ভিত্তিক লেকচার টেলিভিশনে সম্প্রচারের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে শিক্ষকদের পাঠদান রেকর্ডিং শুরু হয়েছে। কোন কোন টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে, সেটা এখন ঠিক হয়নি। তবে বিভিন্ন টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের কাজ চলছে।
তিনি জানান, প্রস্তুতি শেষ হয়ে গেলে শনিবার থেকেই টেলিভিশনে সম্প্রচারের কাজটি শুরু হবে। এছাড়া একই লেকচার ইউটিউবে দেয়া হবে; যাতে শিক্ষার্থীরা পরে দেখতে পারে। অনলাইনেও (www.connect.gov.bd) রাখা হবে।
অনলাইনে লেকচারের পাশাপাশি প্রশ্নোত্তর রাখার চিন্তাও আমরা করছি, যেটা দেখে শিক্ষার্থীরা হোমওয়ার্ক করবে। ওই হোমওয়ার্কের ভিত্তিতে স্কুল খোলার পর শিক্ষক নম্বর দেবেন।
করোনাভাইরাসের কারণে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে এই ছুটি আরও বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
তারা আরও জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিতরণ ও এসএসসি পরীক্ষার ফল তৈরির কিছু কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক স্তরের আছে দুই কোটি ৯ লাখ আর প্রাথমিক পরবর্তী স্তরে ১ কোটি ৯৭ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে।
মাউশি পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৫টির প্রত্যেকটির জন্য দৈনিক ৩৫টি পাঠদান বা লেকচারের চিন্তা করা হয়েছে। ক্লাস রুটিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিটি শ্রেণির জন্য দৈনিক ৭টি লেকচার থাকবে। ঢাকার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ, মতিঝিল সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, মতিঝিল মডেল স্কুল ও কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজসহ সেরা স্কুলের শিক্ষকরা এই লেকচার দেবেন। শনিবার ৩৮ জনকে ডেকে আলোচনা শেষে রেকর্ডিং শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ২১টি লেকচার তৈরি করা হয়েছে।
জানা যায়, এই প্রক্রিয়ার নাম দেয়া হয়েছে ভেলিডেশন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু), শিক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রমুখের সমন্বয়ে গঠিত টিম লেকচারগুলো ভেলিডেট বা মূল্যায়ন করবেন। এরপর তা সম্প্রচারের লক্ষ্যে ছাড়পত্র পাবে। স্কুল না খোলা পর্যন্ত এই লেকচার সম্প্রচারের কাজ চলবে। অর্থাৎ টেলিভিশনেই অব্যাহত থাকবে স্কুলের পাঠদান। এজন্য একদিকে রেকর্ডিং আরেক দিকে ভেলিডেশন ও সম্প্রচার কাজ অব্যাহত থাকবে। এখন পর্যন্ত তিনটি স্টুডিওতে ক্লাস রেকর্ডিং হচ্ছে।
এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং মোবাইল ফোন অপারেটর রবির স্টুডিও। মাউশি মহাপরিচালক জানান, কোন টিভিতে সম্প্রচার করা হবে সেটি এখন পর্যন্ত নির্ধারিত হয়নি। তবে বিটিভি অবশ্যই থাকবে। সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টার মধ্যবর্তী সময়ে ক্লাসগুলো সম্প্রচারের চিন্তা আছে।
ডিপিই’র পদক্ষেপ : মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে এভাবে টেলিভিশনে লেকচার সম্প্রচার করে পাঠদানের ব্যবস্থা করা কঠিন। এর কারণ হল শিক্ষার্থীদের বয়স, অবস্থানগত পরিস্থিতি ইত্যাদি। তবে লেখাপড়া অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণে সোমবার (আজ) বৈঠক হবে। আপাতত অভিভাবকদের এসএসএম পাঠানোর চিন্তা আছে। জানা গেছে ছুটিকালীন সময়ের নির্দেশনা দিয়ে ২০ মার্চ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন মহাপরিচালক। এতে করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে প্রতিরোধের আহ্বান জানান তিনি।
বার্তায় বলা হয়, এখন স্কুল বন্ধ। স্কুল বন্ধ থাকলেও রুটিন করে পড়ালেখা করতে হবে। পাশাপাশি মা-বাবাকে কাজে সাহায্য করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। আর মা-বাবাদের শিশু ও শিক্ষার্থীদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস : এদিকে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কাজ চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অন্যতম। আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও অনলাইনে ক্লাস চলছে বলে জানা গেছে। সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য প্রকৌশলী আবদুল আজিজ জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। অনলাইনে কুইজ, ক্লাস টেস্ট ও অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেয়া হচ্ছে।
This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.