Home » অনেক কষ্ট বুকে চেপে দেশটাকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি –

অনেক কষ্ট বুকে চেপে দেশটাকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি –

অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষকে সামনে রেখে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, কারও প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে চলি না বা কারও প্রতি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেও যাইনি। তবে যেখানে অন্যায় হয়েছে, সেখানে ন্যায় করার চেষ্টা করেছি। অনেক কষ্ট, ব্যথা-বেদনা বুকে চেপে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যাতে বাংলাদেশের মানুষ একটু যেন সুখের মুখ দেখে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে- সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, ইনশাল্লাহ এগিয়ে যাবে।

স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গী-সন্ত্রাস ও ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা তুলে ধরে দেশবাসীকে এদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদী-মাদক ও ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি, কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, নানা ষড়যন্ত্রসহ বৈরী অবস্থা মোকাবেলা করেই আমরা দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশের এই অগ্রযাত্রার ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতাও কামনা করেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনীত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। আলোচনার শেষ দিনে আরও বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু ও চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। এরপর স্পীকার তাঁর সমাপনী বক্তব্যে শেষে একাদশ জাতীয় সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনের সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করেন।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা ও সমাপনী বক্তব্যে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণের মধ্য দিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেছেন। উন্নয়নের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। প্রত্যেক এমপিরা এই ভাষণ ভালভাবে পড়লে দেশের জন্য আমরা যে উন্নয়ন করেছি তা জানতে পারবেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এটা সর্বজন স্বীকৃত। আগে মানুষের জীবনে কোন নিরাপদ ছিল না, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। আগে বাংলাদেশকে অনেকে করুণার চোখে দেখত, কিন্তু এক দশকে বাংলাদেশের সেই অবস্থান পরিবর্তন করতে পেরেছি। কারণ আমরা বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এত উন্নয়ন যদি কেউ না দেখে, সেটা তাদের দেখার ভুল। আমরা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন করেছি, যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে।

বিরোধী দল উপস্থিত থেকে সংসদকে প্রাণবন্ত করে রাখায় ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝেমধ্যে কিছু সমস্যা দেখা যায়, আমরা দ্রুত সমাধান করছি। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি। এয়ারপোর্টসহ সব জায়গায় বিদেশ থেকে আগতদের পরীক্ষা করা হচ্ছে, যেন কেউ করোনাভাইরাস নিয়ে দেশে আসতে না পারে। ডেঙ্গু সমস্যা সমাধানে দেশবাসীকে নিজেদের বাড়ি-ঘর পরিষ্কার করার অনুরোধ করব। নিজেরা ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করতে পারলে মশা উৎপাদন হবে না।

ধর্ষকরা পশুরও অধম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা শিশু-কিশোরীদের ধর্ষণ করে তারা মানুষ নামে পশু, এরা পশুরও অধম। তাদেরও তো মা-বোন-মেয়ে আছে। এমন জঘন্য চরিত্রের মানুষ কীভাবে হতে পারে? জঙ্গীবাদ-মাদক-ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। দেশবাসীও যেন এদের ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করেন। রমজান আসলেই অনেকে অনেক খেলার চেষ্টা করে। কেউ যেন গুজবে আতঙ্কে না পড়েন। আমরা এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি। চীনে সৃষ্ট সমস্যার কারণে বিকল্প পথ খুঁজছি, তাই আতঙ্কের কিছু নেই।

সংসদ নেতা বলেন, দেশে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়নের ওপরে রয়েছে, দেশের অর্থনীতিও অনেক শক্তিশালী। ব্যাংকে টাকার কোন সমস্যা নেই। প্রণোদনা দিচ্ছি বলেই ১৮ বিলিয়ন রেমিটেন্স এসেছে। সামাজিক নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাপকভাবে হচ্ছে। টাকা যদি নাই থাকত তবে এত উন্নয়ন হচ্ছে কীভাবে? ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। এটাও দেশের জন্য একটা বড় অর্জন।

বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কিছু ক্ষেত্রে তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ভাষণ যদি উনি ভাল করে পড়েন, তবে হতাশ না হয়ে উজ্জীবিত হবেন। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, তথ্যপ্রযুক্তি বিদেশে রফতানিও শুরু করেছি। কর্মসংস্থানের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছি। কর্মসংস্থানের জন্য স্বপ্রণোদিত কর্মোদ্যোক্তায় পরিণত করতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রেখেছি। বিদেশে অনেকে বিপুল টাকা খরচ করে যায়, কিন্তু চাকরির গ্যারান্টি নেই। যারা ভুল পথে যায়, দালালের খপ্পরে পড়ে তারাই বিপদে পড়ে। এত টাকা খরচ করে বিদেশে না গিয়ে দেশেই বিনিয়োগ করে একেকজন কর্মোদ্যোক্তায় পরিণত হতে পারে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *