Home » অস্থিরতায় রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টরা

অস্থিরতায় রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টরা

অনলাইন ডেস্ক : রোহিঙ্গা শিবিরের গত ক’দিনের ঘটনা নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে এনজিও, রোহিঙ্গা প্রশাসনে কর্মরত ক্যাম্প ইনচার্জ অফিস, রোহিঙ্গা শিবিরের শেড মাঝি থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টদের মাঝে। ইতিমধ্যে এনজিওগুলোর নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দিতে কর্মকর্তাদের মধ্যে দৌঁড়ঝাপও শুরু হয়েছে। গত ক’দিন ধরে রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হওয়ায় রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় গত ২২ আগস্টের প্রত্যাবাসন ভেস্তে যাবার পর স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এসব লোকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং নানা সভাসমাবেশের মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রশাসনের প্রতি তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা প্রত্যাবাসন ভেস্তে যাবার অন্যতম কারণ হিসাবে রোহিঙ্গা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দুষছেন।

এমন অস্থির পরিস্থিতিতে আজ বুধবার ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রোহিঙ্গা বিষয়ক টাস্কফোর্স কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সভা। গত ২২ আগস্ট সর্বশেষ দফায় প্রত্যাবাসন ভেস্তে যাওয়া সহ ২৫ আগস্টের বিশাল রোহিঙ্গা সমাবেশ এবং রোহিঙ্গা নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও নানা কৌশল প্রসঙ্গে এতে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। সভায় যোগ দিতে কক্সবাজারের শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি), জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার গতকালই ঢাকায় রওয়ানা হয়েছেন।

তদারকির অভাবে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুর্নীতির নেপথ্য খবরা-খবর প্রচারের ভয়েও তটস্থ রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়েছে বলে জানা গেছে। সেই সাথে এনজিওগুলোতে অবৈধভাবে কর্মরত শত শত রোহিঙ্গা চাকুরিচ্যুতির শংকায়ও রয়েছেন। সরকারি অনুমতি ব্যতিরেকেই রোহিঙ্গা শিবিরের এনজিওগুলোতে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থদের চাকরি দেয়ার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে শত শত রোহিঙ্গাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট কুতুপালং ৪ নম্বর শিবিরের বর্ধিতাংশ খোলা মাঠে লাখো রোহিঙ্গার সমাবেশ অনুষ্ঠানের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা রোহিঙ্গা প্রশাসনের প্রতিও ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেন। সেই সাথে সমাবেশ আয়োজনে কিছু এনজিও’র আর্থিক সহযোগিতার অভিযোগ নিয়ে এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এনজিওগুলোর প্রতিও।

প্রত্যাবাসন ভেস্তে যাবার পর ওই রাতেই টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা শিবিরের সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের হাতে স্থানীয় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক নিহত হন। এ ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে রোহিঙ্গাদের ওপর। যুবলীগ নেতা হত্যাকাণ্ডের পর থেকে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে দুরত্ব বেড়ে যায়। এমনকি এক পর্যায়ে গ্রামবাসী ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থানেরও সৃষ্টি হয়।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবারের রোহিঙ্গা সমাবেশ নিয়ে প্রশ্ন, উদ্বেগ’ এবং ‘রোহিঙ্গা শিবিরগুলো দেশি অস্ত্রের ভাণ্ডার’ শীর্ষক দু’টি পৃথক সংবাদ প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে একদিকে এনজিও এবং সেই সাথে বিদেশী লোকজন সমাবেশটি আয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার তথ্য প্রকাশ পাওয়ায় এনজিওকর্মীদের মধ্যে এক প্রকার দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় মুক্তি নামের একটি স্থানীয় এনজিও তাড়াহুড়ো করে এক সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করে। কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনজিওটির প্রধান নির্বাহী বিমল দে সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ বলেছেন-এনজিওটি কোন অবৈধ কাজে জড়িত নেই।

এসব মিলে রোহিঙ্গা শিবিরের প্রশাসনে জড়িত ৬০ জনের বেশী কর্মকর্তা, দেশী-বিদেশী ১৫০ টি এনজিও, ২ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা ব্লক মাঝিসহ শিবিরের এনজিও গুলোতে কর্মরত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা এক প্রকার শংকায় রয়েছেন। গত ক’দিনের ধারবাহিক ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে নানা তদন্ত এবং রদবদলের কানাঘুষাও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *