ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডে এখন পর্যন্ত ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে পুলিশের হাতে আটক সাতজন। ওই হত্যাকান্ড মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে ঘটেছে বলে শনিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।পিবিআইয়ের প্রধান মনোজ কুমার মজুমদার বেলা একটার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করেন। ওই ব্রিফিংয়ে বলা হয়, অধ্যক্ষের নির্দেশে হত্যাকান্ডের এ ঘটনা ঘটেছে। ৪ এপ্রিল সিরাজ উদ দৌলার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন আসামি নুর উদ্দীনসহ কয়েকজন। পরে তারা সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে দেখা করেন।
পিবিআইয়ের ভাষ্য, নুর উদ্দিনসহ কয়েকজন সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে দেখা করে নির্দেশ নিয়ে আসেন। ৫ এপ্রিল সকাল নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার দিকে মাদ্রাসার কাছে থাকা হোস্টেলের পশ্চিম অংশে তার মূল পরিকল্পনা করেন। সেখানেই নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেন তারা। অধ্যক্ষকে আটক করায় আলেম সমাজকে হেয় করা হয়েছে বলে মনে করেন তারা। এই হেয় করা ও প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের ক্ষোভ থেকে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেন। এ ঘটনায় দুজন মাদ্রাসাছাত্রী ও তিনজন ছাত্র জড়িত। এদের একজন মাদ্রাসাসংলগ্ন সাইক্লোন সেন্টারে তিনটি বোরকা ও কেরোসিন শাহদাতকে দিয়েছেন। পরে দুজন ছাত্র ও দুজন ছাত্রী বোরকা পরে সাইক্লোন সেন্টারের টয়লেটে লুকিয়ে ছিলেন। তারাই নুসরাতের শরীরে আগুন লাগিয়েছেন।
নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা মামলায় ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার মুক্তির দাবিতে ‘সিরাজ উদ দৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামে কমিটি গঠন করা হয়। ২০ সদস্যের এ কমিটির আহ্বায়ক নুর উদ্দিন এবং যুগ্ম আহবায়ক হন শাহাদাত হোসেন। তাদের নেতৃত্বে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে গত ২৮ ও ৩০ মার্চ উপজেলা সদরে দুই দফা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। তারাই নুসরাতের সমর্থকদের হুমকিধমকি দিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
৬ এপ্রিল নুসরাত পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে আগুন দেন। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ওই দিন রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।এর আগে গত ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। গত রোববার নুসরাত চিকিৎসকদের কাছে দেয়া শেষ জবানবন্দিতে বলেছিলেন, নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরা চারজন তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই চারজনের একজনের নাম শম্পা।
প্রতিনিধি