নিউজ ডেস্ক:রংপুরে গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ এবং হুকুম দখলের কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন ও ভূ-উপরিস্থ অন্যান্য আনুষঙ্গিক নির্মাণের অংশ হিসেবে চলতি বছরের ১ নভেম্বরের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেছেন বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রকল্পের সমন্বয়ক।
এরই প্রেক্ষিতে রংপুরের ৫ উপজেলার (পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, বদরগঞ্জ এবং তারাগঞ্জ) ৮৯টি মৌজার প্রায় ৩০৯ দশমিক ৫হাজার৬২৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট উপজেলার সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছেন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৩শ’৭৮ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সঞ্চালন পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনও করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
সূত্রে জানা যায়, সরকারের নির্দেশে এ অঞ্চলে বিদ্যমান ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ শিল্প কারখানার পাশাপাশি নতুন শিল্পায়নের প্রসার এবং নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় দেড় বছর আগে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) নিয়োগকৃত প্রকৌশলীরা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য ৩ দফা ফিল্ড ভিজিট করেছেন। তাদের দেয়া রূপরেখা অনুযায়ী গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ মুহম্মদ ফয়েজুল আলম বলেন, জিটিসিএল এর প্রস্তাবিত প্রায় ১৬৮ দশমিক ৫হাজার৫০৮ একর জমি অধিগ্রহণের চাহিদার বিপরীতে জেলা প্রশাসন থেকে তাদের কাজের সুবিধার জন্য রংপুরের ৫ উপজেলার ৮৯টি মৌজায় ৩০৯ দশমিক ৫হাজার৬২৬ একর জমি অধিগ্রহণ এবং হুকুম দখলের কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, অধিগ্রহণকৃত জমি স্থায়ীভাবে নেয়া হবে এবং হুকুম দখলকৃত জমি কাজের সুবিধার জন্য কিছুদিন ব্যবহার করা হবে। কাজ শেষে তা ফেরত দেয়া হবে জমির মালিককে। রংপুর চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, গ্যাস আসলে এ অঞ্চলের শিল্প কারখানার ব্যাপক উন্নতি হবে। জ্বালানী খরচ কমে যাওয়ায় পণ্যের উৎপাদন খরচ কমে আসবে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এ অঞ্চলের পণ্য যোগ হবে।
গ্যাস নির্ভর পোশাক শিল্পের প্রসার ঘটবে। ফলে বর্তমানে ঢাকাসহ দূরদূরান্তের পোশাক শিল্পে কর্মরত এ অঞ্চলের মানুষ বাড়িতে থেকে কাজ করতে পারবেন। এতে আর্থিকভাবে তারা লাভবান হবেন। তিনি বলেন, জ্বালানীর অভাবে গড়ে উঠা সিরামিক শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে পাশাপাশি উত্তরা ইপিজেডে বেশ কিছু শিল্প বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গ্যাস আসলে নতুন শিল্প করাখানার পাশাপাশি ঘুরে দাাঁড়াবে রুগ্ন ও বন্ধ শিল্প কারখানা।
রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, বর্তমানে যে শিল্প কারখানা আছে সেগুলো চলছে ডিজেল অথবা ফার্নেস ওয়েল দিয়ে। কিন্তু গ্যাস আসলে ওই কারখানায় উৎপাদন খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু রংপুরে কমদামে জমি ও শ্রমিকদের কাজে নেয়া যায় তাই গ্যাস আসলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্যোক্তারা এখানে শিল্পকারখানা স্থাপনে আগ্রহী হবেন। পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষের মূল্যায়ন হবে এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রকল্পের সমন্বয়ক খন্দকার আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৩শ’৭৮ কোটি টাকা।
২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হবে। প্রকল্প বাস্তাবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশাকরি জমি বুঝে পাওয়ার পর কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে। রংপুর জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব বলেন, গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন স্থাপন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে একটি। জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ এবং হুকুম দখলের কাজ শুরু করেছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগে জমি বুঝে দেয়া সম্ভব হবে।
নির্বাহী সম্পাদক