Home » ঘৃণার জবাব মাঠেই দিলেন ডি মারিয়া

ঘৃণার জবাব মাঠেই দিলেন ডি মারিয়া

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার বিদায়টা ঠিক সুখকর হয়নি। এ নিয়ে ইউনাইটেড সমর্থকদের আর্জেন্টাইন উইঙ্গারের প্রতি রয়েছে অনেক ক্ষোভ, অনেক ঘৃণা। সেটি গত রাতে পিএসজির সঙ্গে ম্যাচের সময়েই বারবার বুঝিয়েছে তারা। তবে দুর্দান্ত পারফর্ম করে ম্যাচশেষে ডি মারিয়াও বুঝিয়ে দিয়েছেন, ওসবে তার কিছু আসে যায় না!

পানি-বিয়ারের বোতল ছোড়া, চিৎকার করে গালি দেওয়া— গতকাল পিএসজির বিপক্ষে ম্যাচে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার ওপর সম্ভব যতভাবে ক্ষোভ ঝাড়া সম্ভব, প্রায় সবই করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থকেরা। ওল্ড ট্রাফোর্ডে থেকে আর্জেন্টাইন উইঙ্গারের বিদায়টা যে মোটেও ভালো ছিল না। ইউনাইটেডের অধিনায়ক অ্যাশলি ইয়াংও ডি মারিয়াকে জঘন্যভাবে ট্যাকল করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সাবেক সতীর্থের প্রতি তাঁরও কোনো মায়াদয়া নেই। তবে ডি মারিয়াও কম যান না। কাঁটার জবাব ফুল দিয়ে নয়, বরং কাঁটা দিয়েই দিতে পছন্দ করেন তিনি, ম্যাচশেষে সেটিই বলেছেন। ডি মারিয়ার জ্বলে ওঠার ম্যাচে গত রাতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ২-০ গোলে হারিয়েছে পিএসজি।

কিন্তু ডি মারিয়ার প্রতি ইউনাইটেডের এত ক্ষোভ কেন? ক্যালেন্ডারের পাতা পিছিয়ে নেওয়া যাক সেই ২০১৪ সালে। ডেভিড ময়েসকে ছাঁটাই করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তখন নিয়ে এসেছে ডাচ ম্যানেজার লুই ফন গালকে। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের পথ ধরে ফন গালও ইউনাইটেডকে একের পর এক শিরোপা জেতাবেন, ভক্ত—সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল সেটাই। সে লক্ষ্যেই দলে বেশ কিছু নতুন মুখ নিয়ে আসেন এই ডাচ কোচ। নতুন আসা তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে দামি তারকা ছিলেন আর্জেন্টাইন উইঙ্গার অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়ে ৫৯.৬ মিলিয়ন পাউন্ডের বিশাল ট্রান্সফার ফি তে ইউনাইটেডে চলে এসেছিলেন তিনি। আর্জেন্টিনার হয়ে সেবার বিশ্বকাপ ফাইনালও খেলেছিলেন। সব মিলিয়ে ডি মারিয়াই হবেন তাঁদের নতুন ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো’, এমন প্রত্যাশা ছিল ইউনাইটেড সমর্থকদের।

কিন্তু ইংলিশ ফুটবলের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি তিনি। এমনকি ইংল্যান্ডেও মানিয়ে নিতে পারেনি ডি মারিয়ার পরিবার। এর প্রভাব পড়ে ডি মারিয়ার মাঠের পারফরম্যান্সে। আস্তে আস্তে ডি মারিয়ার প্রতি ধৈর্যহারা হয়ে পড়ে ইউনাইটেড সমর্থকেরা। ডি মারিয়াও ইংল্যান্ড ছাড়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। ইংল্যান্ড ছেড়ে প্যারিসে যাবেন, পিএসজিতে খেলবেন—ডি মারিয়ার এই গুপ্ত বাসনার কথা আস্তে আস্তে প্রকাশ হয়ে গেলে ইউনাইটেড সমর্থকদের চক্ষুশূলে পরিণত হন তিনি। এক মৌসুম খেলেই শেষ হয় ডি মারিয়ার ইংল্যান্ড-অভিযান। পরের মৌসুমেই পাড়ি জমান পিএসজিতে। পিএসজিতে গিয়ে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ডি মারিয়া ইউনাইটেড সমর্থকদের প্রতি নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এদিকে ইউনাইটেডের সমর্থকেরাও ডি মারিয়াকে সাপের মতো বিশ্বাসঘাতক বলে মনে করে, সকল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডি মারিয়ার প্রসঙ্গ উঠলেই তারা ‘স্নেক’ বলা হয় ডি মারিয়াকে।

প্রতিপক্ষ সমর্থকদের দুয়ো আর সাবেক সতীর্থের অবজ্ঞা দেখেই যেন দ্বিতীয়ার্ধে জ্বলে ওঠেন ডি মারিয়া। আর সে আগুনে ঝলসে যায় ওলে গুনার সুলশারের শিষ্যরা। এই ম্যাচের আগে টানা ১১ ম্যাচ ধরে অপরাজিত ছিল ইউনাইটেড, ওদিকে নেইমার-কাভানিকে হারিয়ে পিএসজি ছিল নখদন্তহীন। কিন্তু ডি মারিয়ার মতো প্রতিভাবান কোনো খেলোয়াড় যদি মাঠে নিজেকে প্রমাণ করার মিশনে নামেন, তাহলে যে এসব পরিসংখ্যানের কোনো মূল্য থাকে না, সেটাই আরেকবার বুঝিয়ে দিলেন তিনি। ৫৩ মিনিটে ডিফেন্ডার প্রেসনেল কিমপেমবের গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি। গোল কিমপেমবে করলেও, গোল করানোর পেছনের কারিগর ছিলেন কিন্তু ‘সাপ’ ডি মারিয়াই! ডি মারিয়ার হাওয়ায় ভাসানো কর্নার কিক ফাঁকায় থাকা কিমপেমবে ইউনাইটেডের গোলরক্ষক ডি গিয়া কে বোকা বানিয়ে জালে জড়ান। ৭ মিনিটের মাথায় আবারও স্বাগতিকদের জালে বল। এবার ব্যবধান বাড়ান কিলিয়ান এমবাপ্পে। এবারও ডি মারিয়ার বাড়ানো বল থেকে গোল পায় পিএসজি। আর্জেন্টাইন এই তারকার নিচু করে বাড়ানো বলে গোল করেন এমবাপ্পে। দুটো গোল করিয়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি ডি মারিয়া। ইউনাইটেড সমর্থকদের সামনেই মন খুলে উদ্‌যাপন করে তাদের জ্বলুনিটা বাড়িয়ে দিয়েছেন বহুগুণ। শুধু উদ্‌যাপন করেই থেমে থাকেননি তিনি। ইউনাইটেড সমর্থকদের দিকে তাকিয়ে বেশ খানিক খিস্তি-খেউড়ও করেছেন!

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *