Home » বাংলাদেশে সিলেটে ৫শ’ কোটি টাকার বাড়ি

বাংলাদেশে সিলেটে ৫শ’ কোটি টাকার বাড়ি

কারো মতে রাজপ্রাসাদ, আবার কারো মূল্যায়ন স্বর্গপূরী হিসাবে। প্রাসাদসম এই বাড়িটিই এখন সিলেটের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রাসাদসম এই বাড়িটির নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধতার পাশাপাশি এই বাড়ির নির্মাণ ব্যয় নিয়ে সিলেটের মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। প্রায় ৮ একর জায়গার উপর নির্মিত এই বাড়ির ছাদে রয়েছে হেলিপ্যাড, আছে সুইমিং পুল, স্টিম বাথ, লিফটসহ আধুনিক স্নানাগার।

প্রায় ২৯টি দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে সিলেট শহরতলীর ইসলামপুরে ‘কাজী প্যালেস’ নামের তিনতলা এ বাড়িটি নির্মাণ করেছেন বিশ্বখ্যাত আল হারামাইন গ্রুপের কর্ণধার এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান শিল্পপতি মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান নাসির। ২০০৮ সালে সিলেটের ইসলামপুর এলাকায় ৩ তলা বিশিষ্ট এই বাড়ির কাজ শুরু করা হয়। দুবাই, ফ্রান্স, লেবানন ও জার্মানি এই চার দেশের প্রকৌশলী দ্বারা বাড়িটি নির্মাণ করা হয়।

এ বিষয়ে মাহতাবুর রহমান বলেন, প্রথমে আমি দুবাই থেকে একজন ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে এসেছিলাম, উনি প্রথমে ডিজাইনটা করেছিলেন, পরবর্তীতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনটা দিয়েছিলাম একজন লেবানিসকে। পুরো বাড়িটির লাইটিং-এর কাজ করেছে জার্মানের কোম্পানি টিফেনি লাইটিং। আর ফ্লোরগুলো করে দিয়েছে ফ্রান্সের একটি কোম্পানী।

কেউ বলছেন বাড়িটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি টাকা, আবার কারো মতে সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা। তবে বাড়িটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে এমন আভাস দিলেন বাড়ির মালিক শিল্পপতি নাসির। তিনি বলেন, এইটা যদি আমার ব্যবসা হতো তাহলে আমি হিসাব রাখতাম।

কত দিয়ে কিনেছি আর কত বিক্রি করবো, লাভ ক্ষতির হিসাব রাখতাম। বাড়ির প্রয়োজনে যখন যা লেগেছে আমি তা খরচ করেছি। গত ৮ বছর থেকে একাধারে ২শ’ ৫০ জন শ্রমিক নিরলস কাজ করে তৈরী করেছেন বাড়িটি। বর্তমানে বাড়ির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। ৩ তলা বিশিষ্ট এই বাড়িটির বিল্ডার এরিয়া প্রায় ৮০ হাজার স্কোয়ার ফুট।

৫ হাজার মানুষের অনুষ্ঠান করার বন্দোবস্ত আছে এই বাড়িতেই। পারিবারিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক কক্ষ। ভবনের শুধু নিচ তলায় রয়েছে ৯টি ডায়নিং রুম, ১৪টি ড্রইং রুম, আছে দুটি লিফট। এছাড়া আভিজাত্যময় ইতালিয়ান বুক ম্যাচিং ওয়ান প্লেট মার্বেলের আধিক্য আছে পুরো বাড়ি জুড়ে।

বাড়ির ভেতরে সৌদিআরবের ওয়াকফ মিনিষ্ট্রির উপহার দেয়া পবিত্র কাবা শরীফের দরজার র‌্যাপ্লিকাও রাখা হয়েছে অতি যত্ন করে। কেউ সরাসরি না দেখলে বুঝানো যাবেনা এই বাড়ির সৌন্দর্য ও মাহাত্ম্য। ‘কাজি ক্যাসল’ নামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে ঢুকলেও জানা যাবে এই বাড়ির খুটিনাটি। রাত হলেই লাইটিং দিয়ে একটার পর একটা রঙের খেলায় মেতে উঠে পুরো বাড়িটি। আলোর এমন ঝলকানি আগে কখনো দেখেননি সিলেটের মানুষ।

লোক দেখানোর জন্য নয় একান্নবর্তী পরিবারের সকলকে নিয়ে একসাথে থাকার জন্যই এই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন বলে জানান মাহতাবুর রহমান। একটি টিভি চ্যানেলকে দেয়া স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমি থাকার জন্য বাড়িটি তৈরী করেছি, রুচির মধ্যে যদি ভালো হয়ে যায় তাহলে আমার কিছু করার নাই।

তিনি আরও বলেন, আমি বাংলাদেশের মধ্যে বড় বাড়ি বানাবো এইটা কখনোই আমার স্বপ্ন ছিলো না। আমার স্বপ্ন ছিলো আমার ভাই-বোনসহ পরিবারের সবাই কোন একটা প্রোগ্রামে একসাথে থাকবো। সেই জন্যই বাড়িটি বানানো।

উল্লেখ্য, ‘কাজি ক্যাসল’র স্বত্তাধিকারী স্বানামধন্য ব্যবসায়ী মাহতাবুর রহমান বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড আল-হারামাইন পারফিউমস্ গ্রুপ অব কোম্পানীজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বর্তমানে তিনি এনআরবি ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান। তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক টানা তিনবার সিআইপি নির্বাচিত হন। মাহতাবুর রহমান ২০১৩ ও ১৪ সালে বাংলাদেশে সর্বাধিক রেমিটেন্স পাঠানোর স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ ব্যাংক র‌্যামিটেন্স এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন!

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *