পাঁচ বছর বয়সেই বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা মেসির প্রতি নিখাদ ভালবাসা তাকে এনে দিয়েছিল দুনিয়া জোড়া খ্যাতি। ফেলে দেওয়া সাদা-নীল প্লাস্টিক দিয়ে বানানো নিজের প্রিয় ফুটবলারের নামাঙ্কিত জার্সি গায়ে দিয়েই ফুটবল পেটাতেন যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটে। যা জানতে পেরে তাকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলেন মেসি নিজেই। স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল পাঁচ বছরের মুর্তাজার। নিজের হিরো মেসির সঙ্গে ফুটবল খেলেছিলেন ছোট্ট মুর্তাজা। সেই স্বপ্ন পূরণ হলেও এখন অন্য দুঃস্বপ্ন ঘিরে ধরেছে মুর্তাজাকে। তালিবানি হামলার জেরে পরিবারের সঙ্গে ঘরছাড়া হতে হল সাত বছরের মুর্তাজাকে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের গজনীর জাঘোরি জেলায় বাড়ি মুর্তাজা আহমদির। হাজারা উপজাতির এই শিশুর ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন মেসির মতো ফুটবল খেলা। নিয়মিত খাওয়াই জোটে না, তাই মেসির মতো জার্সি কেনার পয়সা ছিল না। অগত্যা দাদার সঙ্গে আশপাশের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে নিজেই বানিয়ে নিয়েছিলেন ১০ নম্বর জার্সি, যা পরে দেশের হয়ে খেলেন আর্জেন্টিনার মহাতারকা। এই খবর পৌঁছে গিয়েছিল খোদ মেসির কাছেও। আর দেরি করেননি। নিজের সব থেকে প্রিয় ফ্যানের খোঁজ পেয়ে ডেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন, খেলেছিলেন ফুটবলও। হঠাৎই আফগানিস্তানের যুদ্ধের ভয়াবহতা পেরিয়ে স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন পাঁচ বছরের ছোট্ট মুর্তাজা।
যদিও ঠিক দু’বছরের মধ্যেই সেই স্বপ্নকে পিছনে ফেলে আবার বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে পা রাখতে হল মুর্তাজাকে। তালিবানি হামলার জেরে পরিবারের সঙ্গে ঘর ছাড়তে হল মুর্তাজাকে। ফুটবল নয়, কোনও রকমে বেঁচে থাকাই এখন বাস্তবতা উদ্বাস্তু মুর্তাজার।
গত কয়েক দিন ধরে তালিবানি হামলা চলছে কাবুলের দক্ষিণে গজনী শহরে। অগস্টেই শহরের দখল নিয়েছে তালিবানি জঙ্গিরা। এখন শহরের বাইরে চলছে লাগাতার সংঘর্ষ। জাগোরি জেলাতেও নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে তালিবান। সংঘর্ষের জেরে প্রতিদিন দলে দলে মানুষ এলাকাও ছাড়ছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেবে এই এলাকায় এখনও পর্যন্ত প্রায় চার হাজার মানুষ ঘর ছেড়েছেন।
‘আমাদের গ্রামে প্রতিদিন রাতে লড়াই হচ্ছে। সন্দেহজনক লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিরাপত্তার কারণেই গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হল আমাদের। তালিবান আমাদের এই হুমকিও দিয়েছে, ‘মেসি তোমাদের অনেক টাকা দিয়েছে। আমাদেরও সেই টাকার ভাগ চাই। ’’ সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন মুর্তাজার মা শফিকা আহমদি।
আর ছোট্ট মুর্তাজা বলেছে, ‘‘সব সময় যুদ্ধ হচ্ছে, আমার বাইরে বেরোতেই ভয় লাগে। আমি মেসির মতো ফুটবল খেলতে চাই। আমি স্কুলে যেতে চাই।’’
তালিবানের হুমকিতে এর আগেও একবার ঘর ছাড়তে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তাঁর মা শফিকা। আশ্রয় নিতে হয়েছিল পাকিস্তানের উদ্বাস্তু শিবিরে। কিন্তু টাকা পয়সা শেষ হয়ে যাওয়ায় বিপদের আশঙ্কা সত্ত্বেও ফিরতে হয়েছিল গ্রামে।
আপাতত নিজের গ্রাম ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে কাবুলে আশ্রয় নিয়েছে মুর্তাজা। তাড়াহুড়োর মধ্যে নিজের প্রিয় ফুটবলারের ছবি আর জার্সি গ্রামের বাড়িতে ফেলে এসেছে সে। যুদ্ধ থামলে গ্রামে ফিরে সেই ছবি আর জার্সি ফেরত পাওয়াই এখন এক মাত্র লক্ষ্য তার। যদিও টাকার খোঁজে তার পরিবারকে যে ভাবে খুঁজে বেড়াচ্ছে তালিবান, তাতে সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
নির্বাহী সম্পাদক