সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীর পাড়ে দীর্ঘদিনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা কাটিয়ে অত্যাধুনিক ১২ তলা বিল্ডিংয়ের নতুন মার্কেট তৈরি করবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। দীর্ঘদিন ধরে বেদখলে থাকা জায়গা উদ্ধার করেছে সিসিক। উদ্ধার কাজ শেষে এখন চলছে জায়গা পরিস্কারের কাজ। শীঘ্রই মার্কেটে তৈরির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান।
সিলেট নগরীকে কেউ কেউ দিঘীর শহর বলে থাকেন। এ নগরীতেই রয়েছে ধোপাদিঘী, সাগরদিঘী, দস্তিদারবাড়ি দিঘী, লালদিঘী, সৈদানীবাগ দিঘীও, মজুমদার দিঘী, রামেরদিঘী, কাষ্টঘর দিঘী, সোবাহানিঘাট দিঘী, কাজলশাহ দিঘী, চারাদিঘী। এসব দিঘীর নামেই পরিচিতি পায় সিলেট নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লা।
গত কয়েক দশকে রামের দিঘী, লালদিঘীসহ কয়েকটি ইতোমধ্যে দখল করে স্থাপনা গড়ে তুলেছে প্রভাবশালীরা। বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর সিলেট নগরীর দিঘী পুকুরগুলো উদ্ধারে উদ্যোগী নেন। এরই অংশ হিসেবে বর্তমানে চলছে সিলেট নগরীর সবচেয়ে বড় ধোপাদিঘী উদ্ধার এবং সংস্কার কাজ। চলছে সৌন্দর্যবর্ধন।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা জানায়, বর্তমানে ধোপাদিঘীটির আকার অনেক বড় থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে আশেপাশের দোকানপাট গড়ে তোলার মাধ্যমে অনেকে এই দিঘীর জায়গাও অবৈধভাবে দখল করে আছেন। এই প্রকল্পের আওতায় এসব অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করে দিঘীতে পুরাতন অবয়বে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এবং ব্যবসায়ীদের জন্য ধোপাদিঘির উত্তর-পূর্ব অংশে ১২তলা মার্কেট নির্মাণ করা হবে।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘যারা ধোপাদিঘির পাড়ে র্দীঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন তাদের তালিকা করা হয়েছে। নতুন মার্কেটে তাদের কে অগ্রধিকার ভিত্তিতে দোকান কোটা ভাড়া দেওয়া হবে। সিসিকের পক্ষ থেকে ১২তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে অত্যাধুনিক মার্কেট তৈরির ডিজাইন করা হয়েছে। সিসিকের অথয়ানে মার্কেটের প্রথম তিন তলা পযন্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে। পরে ধীরে ধীরে বাকি কাজ সমাপ্ত করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ধোপাদিঘীরপাড়স্থ ধোপাদিঘীতে প্রায় ২২ কোটি টাকায় ‘সৌন্দর্যবর্ধন কাজ’ চলছে, দিঘী দিঘীর মতোই থাকবে এটি, বরং নোংরা দুর্গন্ধময় পরিত্যক্ত এই দিঘীর আসল রূপ বের করতেই বর্তমানে সৌন্দয্যবর্ধন কাজ করা হচ্ছে। দিঘীর আশেপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ফলে বরং দিঘীর আকার আরও বাড়বে।’
নুর আজিজুর রহমান বলেন, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ধোপাদিঘী ‘এরিয়া ফর বেটার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড বিউটিফিকেশন’ নামে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে ধোপাদীঘির চারপাশে হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে) নির্মাণ করা হচ্ছে।‘ভারতীয় সরকার যে তিনটি প্রকল্পে বরাদ্দ দিয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধোপাদিঘীরপাড় প্রকল্প। পরিবেশের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েই সকল মন্ত্রণালয়ের যাচাইবাছাই করে এই প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই এলাকার চেহারার আমূল পরিবর্তন হবে। নির্মল পরিবেশে কিছুটা সময় ব্যয় করার জন্য এই স্থানটি মহানগরবাসীর জন্য একটি আদর্শ জায়গা হয়ে উঠবে।’
এ ব্যাপারে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমার একটি স্বপ্ন ছিল সিলেট মহানগরবাসীর হাঁটাচলার জন্য একটি নির্মল পরিবেশময় স্থান গড়ে তোলা, যেখানে নগরবাসী কিছুটা সময় নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে উপভোগ করবেন। ধোপাদিঘীকে কেন্দ্র করে এই রকম একটি আবহ তৈরী করা হচ্ছে।’ বর্তমানে বাস্তবায়িত প্রকল্পের মাধ্যমে দিঘীর সাথে আশেপাশের বিভিন্ন দোকানপাট অপসারণ করা হবে, অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হবে। সিসিকের পক্ষ থেকে এখানে তৈরি করা হবে বহুতল ভবনের মার্কেট। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অগ্রধিকার ভিত্তিতে দোকান পাবেন এই ১২তলা মার্কেটে।
উল্লেখ্য, সিলেট নগরীর বন্দরবাজার ও সোবাহানিঘাটের মাঝে অবস্থিত ধোপাদিঘীর নামেই এলাকার নাম ধোপাদিঘীর পাড়। একপাশে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থাকায় কিছুটা সুরক্ষিত ছিল এই দিঘীটি। তবে ২০০০ সালে শিশুপার্কের জন্য এর অনেকাংশ ইজারা দেয় সিটি করপোরেশন। ফলে দিঘীতেই গড়ে ওঠে ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত বঙ্গবীর এমএজি ওসমানী শিশুপার্ক। দিঘীর আরেকাংশ ভরাট করে ২০১২ সালে মসজিদ নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন। এরপর থেকেই চলছে দখল প্রক্রিয়া। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আর মাইক্রোবাসের স্ট্যান্ডের নামে এরই মধ্যে দখল করে ফেলা হয়েছে এই দিঘীর বেশিরভাগ অংশ। সামান্য যেটুকু বাকি ছিল, তাও দখলের চেষ্টায় ছিলো ভূমিখেকো চক্র।
নির্বাহী সম্পাদক