নিহত সুজাতা চিরানের ভাগ্নে সঞ্জীব চিরান (২১) এবং তার বন্ধু রাজু সাংমা ওরফে রাসেল (২৪), প্রবীণ সাংমা (১৯) ও শুভ চিসিম ওরফে শান্তকে (১৮) বুধবার রাতে শেরপুরের নলিতাবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই চারজন মিলে মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে গুলশানের কালাচাঁদপুরের শিশু মালঞ্চ স্কুল রোডে একটি বাড়ির চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে সুজাতা চিরান (৪০) ও তার মা বেসেত চিরানকে (৬৫) হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
এদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে আব্দুল্লাহপুরে একটি বাস কাউন্টারের পেছন থেকে ওই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের পর চারজনই শেরপুরের নালিতাবাড়ি ফিরে যায়। তাদের তিনজন সেখানকার একটি রাইস মিলে চাকরি করে। অপরজন রাজু ঢাকার একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করত।
“জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়- সঞ্জীবের খালা নিহত সুজাতার পরিবাবের সবাই চাকরীজীবী, তাই তাদের কাছে ৫-৬ লাখ টাকা থাকতে পারে বলে তারা মনে করেছিল। মূলত ওই টাকা চুরি করে উৎসব উদযাপন করতে সঞ্জীবের পরিকল্পনায় তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
“পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৯ মার্চ সঞ্জীব, শান্ত ও প্রবীণ ঢাকায় আসে এবং কুড়িলে তাদের বন্ধু রাজুর সঙ্গে দেখা করে। রাজুর বাসায় স্থান সংকট থাকায় উত্তরায় তার আরেক বন্ধুর বাসায় রাত্রি যাপন করে তারা। পরের দিন সকালে সঞ্জীব, শান্ত ও প্রবীণ কুড়িলে রাজুর সঙ্গে দেখা করে পরিকল্পনাটি রাজুকে জানায়। পরে রাজুর বাসা থেকে একটি ছোরা নিয়ে কালাচাঁদপুরে ওই বাসায় যায়।”
মুফতি মাহমুদ বলেন, প্রথমে রাজু ও প্রবীণ ওই বাসায় গিয়ে সুজাতা, বেসেত ও সুজাতার এক মেয়েকে দেখে ফিরে এসে সঞ্জীবকে জানায়। এরপর তারা ৫-৬ ঘণ্টা বাইরে ঘোরাঘুরি করে।
“পরে বিকাল ৩ টার দিকে সঞ্জীবসহ তার বন্ধুরা সুজাতার বাসায় প্রবেশ করে এবং সেখানে হালকা নাশতা করে। পরে সঞ্জীব তার খালাকে ২০০ টাকা দেয় দেশি মদ আনার জন্য। তখন সুজাতার মেয়ে তার কর্মস্থলে চলে যায়। পরে সবাই মিলে মদ পান করে। এরপর সুজাতা বেহুঁশ হয়ে বিছানায় পড়ে যায়।”
পরে তারা চুরির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সুজাতার মা (সঞ্জীবের নানী) বাসায় চলে আসে বলে গ্রেপ্তারদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
“চুরিতে বাধা দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে নানী বেসেতের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তারা। পরে পাশের ঘরে থাকা সুজাতার ওপর সঞ্জীব চড়ে বসে এবং রাজু মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ধরে। তখন সঞ্জীব ছোরা দিয়ে গলায় আঘাত করে তাকে হত্যা করে।”
পরে তারা পুরো ঘরে টাকা-পয়সা খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে উত্তরায় ফিরে আসে এবং সেখান থেকে নালিতাবাড়িতে চলে যায় বলে মাহমুদ খান জানান।
নির্বাহী সম্পাদক