Home » বাজারভর্তি শীতের সবজি-দাম চড়া

বাজারভর্তি শীতের সবজি-দাম চড়া

পালংশাক নিয়ে একটি পিকআপ ভ্যান রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারওয়ান বাজারে পৌঁছে। গত বুধবার রাতে সাভার থেকে আসা এই ট্রাক থেকে কয়েকটি করে পালং শাকের মুঠো নিচে ঢিল দিচ্ছিলেন দুজন শ্রমিক। অন্য দুজন নিচে দাঁড়িয়ে সেগুলো লুফে নিয়ে এক জায়গায় সাজিয়ে রাখছে। অনেকটা ফুলের মতো করে সাজানো শাকগুলোর মূল ভেতরের দিকে এবং পাতাগুলো বাইরের দিকে। গোলাকৃতির একটা স্তূপের আকার নিয়ে মাটি থেকে ওপরের দিকে উঠছে। পাশেই একই রকমভাবে লালশাক, পুঁইশাক, লাউশাক, পাটশাকেরও এ রকম স্তূপ দেখা গেল।

ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা প্রকার শাক আসা একটা নিয়মিত বিষয়। তবে পালংশাক আসাটা একটু ব্যতিক্রমী। এ শাক বাজারে আসার সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও নিয়ে আসে। সেটি হলো শীত চলে এসেছে। রাজধানীতে ইতিমধ্যে শীতের একটা আবহ তৈরি হয়েছে। এই সময় নানা ধরনের নতুন শাকসবজি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। যেগুলো মূলত শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত। শীত পুরোপুরি শুরুর আগেই এই সবজিগুলো বাজারে পাওয়া গেলেও দাম বেশ চড়া।

কারওয়ান বাজারে পাইকাররা (ফড়িয়া বিক্রেতা) প্রতি আঁটি পালংশাক বিক্রি করছিল ১৪-১৫ টাকা করে। অন্যান্য বছর শীতের মধ্যে এই শাক সাধারণত প্রতি আঁটি ৭ থেকে ১০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। এই শাকই গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ২০-২৫ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে, যা অনেক বেশি বলে মনে করছেন ভোক্তারা।”

কারওয়ান বাজারের শাকের পাইকারি ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অগ্রিম চাষের শাক, পরিমাণে কম, এ জন্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদার উপযোগী পালং শাকের সরবরাহ আসতে আরো অন্তত ১৫ দিনের মতো লাগবে।”

পুঁইশাক, কলমিশাক, লাশশাক ও লাউশাক বেশ কিছুদিন ধরেই বাজারে পাওয়া গেলেও নতুন করে পালংশাকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাটশাক ও মুলাশাক। তবে পাটশাক ও মুলাশাকের দাম তুলনামূলক কিছুটা কম। পাইকারিতে এগুলো ৬-৮ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে, যা আবার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকা আঁটি। লাউশাক ও পুঁইশাকের আঁটি একটু বড় বলেই দাম বেশি। প্রতি আঁটি খুচরায় ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৬ টাকা দরে।

তবে এগুলোর তুলনায় এখনো লালশাক ও কলমিশাকের দাম তুলনামূলক কম। প্রতি আঁটি খুচরা বাজারে ৮-১০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে, যা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৪-৬ টাকায়।”

রামপুরার মহানগর প্রজেক্টের একটি শাকের দোকানে গতকাল ভোরে শাক কিনছিলেন শাহনাজ বেগম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক রকমের শাক পাচ্ছি। শীতের শাকও আসতে শুরু করেছে। তবে এগুলো অনেক চড়া দামে কিনতে হচ্ছে।’ গুদারাঘাট কাঁচাবাজারে প্রতি দুই আঁটি লাউশাক ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিক্রেতা আবু মিয়া বলেন, কেনা দাম বেশি। আমরাও বেশি দিয়া বেচতাছি।”

শুধু শাকই নয়, শীতের কিছু সবজিরও দেখা মিলছে বাজারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে টমেটো, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম। তবে এগুলোর দামও খুব চড়া। যদিও এসব বাজারে মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরেই বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস মাঝারি সাইজের ফুলকপি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এর চেয়ে আকারে ছোট ফুলকপি বিক্রি করছে ৩৫-৪০ টাকায়। বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা পিস। প্রায় মাস দেড়েক ধরেই শীতের এই সবজিটি অগ্রিম বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ১৫০ টাকা কেজি দরে শুরু হয়েছে, যা এখনো ১০০ টাকার নিচে নামেনি।”

শীতকালীন যে গাজর ও টমেটো বাজারে আসে তার কোনোটাই এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। বড় সাইজের যে টমেটোগুলো বিক্রি হচ্ছে সেগুলো মূলত ভারত থেকে আমদানি করা। বিক্রিও হচ্ছে খুব চড়া দামে, ৮০-৯০ টাকা কেজি। তবে খুব ছোট কাঁচা কিছু টমেটো ফার্মগেটে ৫০-৬০ টাকা কেজি দাম চাইতে দেখা গেছে। এগুলো দেশি টমেটো বলে জানান বিক্রেতারা। তবে যে গাজরগুলো বিক্রি হচ্ছে সেগুলো কোল্ড স্টোরেজে রাখা হয়েছে গত বছর। নতুন গাজর এখনো বাজারে আসেনি। এগুলো বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ৮০-১০০ টাকা।”

কারওয়ান বাজার সবজি ভাণ্ডারের আড়তদার কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশি হলে আর ১৫ দিন লাগবে। শীতের সব সবজিই বাজারে পাওয়া যাবে। তখন দামও কমতে শুরু করবে। এখন পরিমাণে কম আসে বলে দামও চড়া।”

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *