চিংড়ির খোসা আর বর্জ্য নয়। সম্প্রতি চিংড়ির খোসা থেকে স্ট্রবেরির উৎপাদন ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধিতে কার্যকর ‘কিটোসান’ নামক বায়োপলিমার আবিষ্কার করেছেন, বাংলাদেশের দুই বিজ্ঞানী। তারা বলছেন, কিটোসান ব্যবহার করলে অন্য বালাইনাশক ছাড়াই স্ট্রবেরির ফলন ৪৮ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। চার বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় এসেছে এই সাফল্য। আসছে মৌসুমে স্বল্প পরিসরে মাঠ পর্যায়ে এই উদ্ভাবনের প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।”
বাংলাদেশে স্ট্রবেরির চাষ শুরু হয় ২০১০ সালে। দেখতে আকর্ষণীয় ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় মাত্র পাঁচ বছরে স্ট্রবেরির উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬শ’ টনে। তবে, এরপর থেকেই ছত্রাক’সহ নানা রোগবালাইয়ের সংক্রমণে উৎপাদন নেমে আসে ২২১ টনে। ফলন বাড়াতে পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক বালাইনাশকের ব্যবহার শুরু করেন কৃষকরা।”
তবে, এরআগেই ২০১৪ সালে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ছাড়া স্ট্রবেরি চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ শুরু করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। চার বছরের গবেষণায় চিংড়ির খোলস থেকে কিটোসান তৈরি করেন তারা। এরপর কয়েক দফায় গাজীপুরের চার কৃষকের স্ট্রবেরি ক্ষেতে এই বালাইনাশক ব্যবহার করে নিশ্চিত হন ফলন ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধির বিষয়টি।”
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, এটি ন্যাচারাল এন্টি অক্সিডেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে। এই এন্টি অক্সিডেন্টগুলো রিয়েক্টিভ অক্সিজেন স্পিসিসকে নিউট্রালাইজ করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।”
অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এটা অনেকটা গাছের ভেতর ভ্যাক্সিন হিসাবে কাজ করে। বালাইনাশক না দিয়ে শুধু এই বায়োপলিমার ব্যবহার করে ৪৮ ভাগ ফলন বেড়ে গেছে।”
বাংলাদেশি এই দুই বিজ্ঞানীর উদ্ভাবন প্রকাশ করা হয় মার্কিন বিজ্ঞান সাময়িকী প্লস ওয়ানে। গবেষকরা মনে করেন, স্ট্রবেরি চাষে এটি প্রয়োগ করে ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব।”
বিজ্ঞানীরা জানান, কাঁকড়ার খোলসেও পাওয়া যায় কিটোসান তৈরির উপাদন ক্রাইটিন। আর তুলনামূলক সাশ্রয়ী এই বালাইনাশক ধান ও গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন, তারা।”