Home » চোখের জলে রোহিঙ্গাদের ঈদ

চোখের জলে রোহিঙ্গাদের ঈদ

ডেস্ক নিউজ: নিজ দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো কোরবানির ঈদ কেটেছে রোহিঙ্গাদের। গতবছর এই দিনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপরে দেশটির সেনাবাহিনী বর্বর নির্যাতন চালায়। ফলে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে পালাতে থাকেন। ঈদের দিনে কেউ পাহাড়ে, কেউ সাগরে, আবার কেউবা সীমানা পেরিয়ে ঢুকে পড়েন বাংলাদেশে। অনেকে হারিয়েছেন বাবা-মা, কেউ আদরের সন্তান,আবার কেউবা ধর্ষণের শিকার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালিয়ে আসেন। সহায় সম্বল হারানো এই রোহিঙ্গারা  আশ্রয় নিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ অঞ্চলে। বিশ্বে নজির বিহীন নির্যাতনের শিকার এই রোহিঙ্গারা আজ  (বুধবার) শরণার্থী শিবিরে ঈদ উদযাপন করেছেন চোখের জলে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদের নামাজ আদায়ের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন ইমাম ও মুসল্লিরা। মসজিদে মসজিদে মোনাজাতে অংশ নেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম। নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেন তারা।এছাড়া, কোরবানির ঈদে সঠিক সময়ে কোরবানির পশু জবাই,পরিমাণ মতো মাংসও পাননি রোহিঙ্গারা।এজন্য হতাশাও প্রকাশ করেছেন তাদের অনেকে। কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং টিভি টাওয়ার সংলগ্ন বটতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘একব্যক্তি আমাদের দুই মাঝির জন্য একটি ছোট্ট কোরবানির গরু দান করেছেন। জবাইয়ের পর আনুমানিক ৮০ কেজির মতো মাংস হয়েছে। প্রায় ৪০০ পরিবারের মধ্যে এই মাংস ভাগ করে দেওয়া হয়। এতে প্রতি পরিবার আড়াই শত গ্রাম (এক পোয়া) করে মাংস পেয়েছে।’ একই ক্যাম্পের আরেক রোহিঙ্গা মাঝি মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘গত বছর কোরবানির ঈদের নামাজ আদায় করতে পারিনি। আজকের এই দিনে আমরা ছিলাম রাখাইনের একটি পাহাড়ি জঙ্গলে। তবে এবার কোরবানির মাংস খেতে না পারলেও ভালো লাগছে। কারণ, বাংলাদেশে এসে অন্তত ভালো করে ঈদের নামাজটি আদায় করতে পেরেছি।’ উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ লালু মাঝি বলেন, ‘রাখাইনে বর্বর ও নানা নির্যাতনের শিকার হলেও নিজ দেশের জন্য মায়া হয় আমাদের। আমরা চাই, নিরাপদে রাখাইনে ফিরতে। আজকে ঈদ জামাত শেষে আল্লাহর কাছে এই ছিল প্রার্থনা। কারণ, এই ছোট পরিসরে আমাদের জীবন বিষাদ হয়ে উঠেছে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। নেই কোনও আনন্দ।’ উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আয়ুব আলী মাঝি বলেন, ‘আকে ঈদের নামাজ শেষে শুধু ইমাম, মৌলভীরা নয়, মসজিদে উপস্থিত কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই। রাখাইনে আমরা কেউ বাব-মা ও বোনকে হারিয়েছি, আবার কেউ ভাই ও স্বজনকে হারিয়েছি। কবরে পড়ে রয়েছে আমার মা। অন্তত তাদের জন্য হলেও কিছু একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।  কারণ, একবছর হয়ে যাচ্ছে আমরা বাংলাদেশে এসেছি। এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কোনও সংস্থা আমাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *