আসন্ন রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জঙ্গি তত্পরতা ও গুজব রটানো রোধে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করার নির্দেশনা দিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ১২ জুলাই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে সিটি নির্বাচনে জঙ্গি তত্পরতা ও সহিংসতার আশঙ্কা করা হয়েছিল। বৈঠকের পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ নির্দেশনা সংক্রান্ত খসড়া পরিপত্র প্রস্তুত করে গতকালই নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি সার্কিট হাউজ ও রেস্ট হাউজে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের আগমন নিয়ন্ত্রণের কথাও বলা হয়েছে। এ ছাড়াও নির্বাচনী এলাকা, সরঞ্জাম, ভোটকেন্দ্র, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের তাগিদ দেয়া হয়েছে।”
তিন সিটি নির্বাচন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। ওই বৈঠকে আশঙ্কা করা হয়, বরিশাল সিটিতে সহিংসতা ও রাজশাহী সিটির মতিহার থানা এলাকায় জঙ্গি তত্পরতা দেখা দিতে পারে। থানার পাশে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এ সব এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় টাকার খেলা চলছে উল্লেখ করে তা নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সহিংসতা এড়াতে তিন সিটির কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মকাণ্ডের উপর দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিভিন্ন মহল তত্পরতা চালাতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বৈঠকের ওপর ভিত্তি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিন সিটিতে নির্বাচনকালীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নির্দেশনা সম্বলিত খসড়া পরিপত্র ইসিতে পাঠিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনা ভেটিংয়ের পর পরিপত্র আকারে জারি হবে।”
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ভোটারদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ ৭ জন, অস্ত্রসহ আনসার তিনজন, লাঠিসহ নারী-পুরুষ আনসার ও ভিডিপি ১২ জন মোতায়েন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত দুইজন অস্ত্রসহ ব্যাটালিয়ন আনসার মোতায়েন করা হবে। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া প্রতি সাধারণ ওয়ার্ডে র্যাবের একটি টিম ও প্রতি দুটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে বিজিবি মোতায়েন করা হবে। গড়ে ন্যূনপক্ষে ৫টি কেন্দ্রের জন্য একটি মোবাইল ফোর্স মোতায়েন করতে হবে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোট গ্রহণের দিন এবং তার আগে দুইদিন ও পরে একদিন করে মোট চারদিন দায়িত্ব পালন করবে। আচরণ বিধি প্রতিপালন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ভোট গ্রহণের দুইদিন আগে থেকে দুইদিন পরে পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য ওয়ার্ড প্রতি একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া নির্বাচনী অপরাধের বিচারের জন্য রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে ১০ জন করে এবং সিলেট সিটিতে ৯ জন করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খসড়া পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে সাহসী ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না।”
আইন ও নির্দেশনা অনুসারে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট নিয়োগদানে সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ভোট গণনার সময় যদি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট কিংবা পোলিং এজেন্ট উপস্থিত না থাকে অথবা কোনো প্রার্থী এজেন্ট নিয়োজিত না করেন তা হলে তার অনুপস্থিতির রেকর্ড প্রিজাইডিং অফিসার লিখিতভাবে রাখবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খসড়া থেকে নিরপরাধী বা বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেপ্তার না করার বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তা ছাড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও নির্বাচনী এলাকায় সন্দেহভাজন, বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী রোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ বিশেষভাবে প্রয়োজন। তবে কারও বিরুদ্ধে যেন হয়রানিমূলক বা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় অথবা নিরপরাধী বা বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেপ্তার না করা হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা অত্যাশ্যক।”