Home » অবাধে গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট আসছে সীমান্ত দিয়ে

অবাধে গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট আসছে সীমান্ত দিয়ে

ডেস্কনিউজ:

  হঠাৎ করেই দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণের নিষিদ্ধ ট্যাবলেটের চোরাচালান বেড়ে গেছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সংঘবদ্ধ চোরাচালানকারী চক্র  সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে দেশে পাচার করে আনছে কোটি-কোটি টাকার গরুমোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট। মাঝে মধ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে নিষিদ্ধ ট্যাবলেটের কিছু চালান ধরা পড়লেও অধিকাংশ চালানই চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। আবার সেখান থেকে হাতবদলের মাধ্যমে এসব ট্যাবলেট চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত গরুর খামারগুলোতে। অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যক্তি এসব ট্যাবলেট খাইয়ে অল্প দিনের মধ্যেই গরুকে মোটা দেখিয়ে বিভিন্ন হাটে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছে। হিলি সীমান্তের কয়েকটি বিজিবি ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ ও ৩০ জুন দুটি চালানের মাধ্যমে ২ লাখ ২৮ হাজার পিস ডেক্সিন ট্যাবলেট ও ২৮ হাজার প্রাকটিন ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। চলতি জুলাই মাসের ৩, ৭, ১২, ১৩ তারিখে ৪টি চালানের মাধ্যমে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৫০ পিস প্রাকটিন ট্যাবলেট, ৯ লাখ ৪০ হাজার ডেক্সিন ট্যাবলেট ও ৭২ হাজার ৬শ পিস সিজেট ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। দুই মাসে অন্তত ২০ লাখ ৩০ হাজার ৫৫০পিস নিষিদ্ধ গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর মধ্যে অধিকাংশ ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে বিজিবির বাসুদেবপুর ক্যাম্প। উদ্ধার করা এসব ট্যাবলেটের বিজিবি নির্ধারিত মূল্য ৬ কোটি ৯লাখ ১৬ হাজার ৫শ’ টাকা। তবে ধরা পড়ার পরও সীমান্ত দিয়ে থামছে না চোরাকারবারীদের তৎপরতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানের কথা বলছেন বিজিবি কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক  ট্যাবলেট ব্যবসায়ী জানান, দিনাজপুরের হিলিসহ আশপাশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে দেশে যেসব গরুমোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট আসে তার পুরোটাই সরবরাহ করে থাকেন ভারতের হিলির সোনু মোনু নামের এক  ব্যক্তি। তবে তার বিরুদ্ধে ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি জানান, ভারতে প্রতি হাজার প্রাকটিন ট্যাবলেটের দাম পড়ে ২২০ টাকা। আর  সাদা রংয়ের ডেক্সিন ট্যাবলেটের প্রতি হাজারে দাম পড়ে ২৯০ টাকা থেকে ৩শ’টাকা। এর পর প্রকারভেদে ১২, ১৫, ১৮ হাজার করে একেকটি প্লাষ্টিকের বস্তার ঢোপ (স্তূপ)বানানো হয়। প্রকারভেদে প্রতিটি ঢোপ ভারত থেকে সীমান্ত অতিক্রম বাংলাদেশে প্রবেশ এবং হিলির পাশের ঘোড়াঘাট থানায় পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি ঢোপে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে খরচ পড়ে। আর  ভারতের মহাজনের কাছ থেকে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য ভারত অংশের পাচারকারীরা প্রতি ঢোপে ৩ থেকে ৪ হাজার রুপি করে নিয়ে থাকে। ওই ব্যবসায়ীর দাবি,সীমান্ত পার করার সময় বিজিবি সদস্যরাও এই চোরাচালান থেকে বখরা আদায় করে থাকে। প্রতিটি ঢোপ দেশে ঢোকার বিনিময়ে দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে  থাকে বিজিবি সদস্যরা। গরু মোটাতাজাকরণের এসব ট্যাবলেট রাজধানী পর্যন্ত পাচারের রুটও বলে দেন ওই  ব্যবসায়ী। তিনি জানান, হিলি সীমান্ত পার করার পর এসব ট্যাবলেট চলে যায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকায়। সেখান থেকে সিএনজি, বাসসহ বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে এগুলো চলে যায় বগুড়ায় খান মার্কেটে। সেখান থেকে ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় চলে যায় এসব নিষিদ্ধ ট্যাবলেট। পরে সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় এসব ট্যাবলেট। তিনি জানান, বগুড়ায় এসব ট্যাবলেট সাদা রংয়ের ডেক্সিন ট্যাবলেট বিক্রি হয় ৩৯০ টাকা হাজার দরে এবং লাল রংয়ের প্রাকটিন ট্যাবলেট বিক্রি হয় ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা হাজার দরে। আর  ঢাকায় এসব ট্যাবলেটের দাম আরেকটু বেশি। সীমান্ত এলাকা ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে এসব ট্যাবলেট বহনে তেমন কোনও প্রশাসনিক ঝামেলা পোহাতে হয় না।

প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে এসব ট্যাবলেটের চোরাচালান বেশি হয়ে থাকে বলেও জানান ওই ট্যাবলেট ব্যবসায়ী।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *