ফেসবুকে নিজের অবস্থান পরিস্কার করলেন সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা লুবানা ইয়াসমিন শম্পা। ১৭ এপ্রিল সিলেট উইমেন চেম্বারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথা বলার পর তাকে নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। অনেকেই লুবানার উপর রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের মতো করে লিখে যাচ্ছেন। এসব ঘটনায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে তিনি মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি লেখা পোস্ট করেন। সেখানে তিনি অপপ্রচারকারী চক্রের প্রতি সম্মান রেখে বলেন, ‘আমি যদি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত থাকি, তবে পদ-পদবী ও প্রমাণসহ বিস্তারিত লিখুন। অহেতুক ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করবেন না।’ তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করি না। তবে ৭১ আমার চেতনা আর ২৪ আমাদের চৈতন্য। এই বোধ আমার মধ্যে আমৃত্যু থাকবে।
লুবানা ইয়াসমিনের এই লেখাটি পাঠকদের জন্য হুবুহু তোলে ধরছি –
গার্বেস ইন গার্বেস আউট
লুবানা ইয়াসমিন শম্পা
.
কম্পিউটারের ভাষায় একটি কথা আছে, গার্বেস ইন গার্বেস আউট; যা ইনপুট করা হবে, তাই আউটপুট হবে। চিন্তার ক্ষেত্রেও এমন, যা জানব তাই দেব। এই দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছুটা পরিশীলিত জ্ঞান থাকা দরকার। যাদের নেই, তারা আলোচনার যোগ্য না। কিন্তু যাদের মধ্যে সেই বোধটুকু আছে, তাদের অনেক কিছুই করণীয় থাকে।
এবার আসি মূল আলোচনায়। আমি মূলত কাজের মানুষ। তাই বলে কথা বলি না-এমনটাও না। যা বলি-ভেবে চিন্তে এবং যৌক্তিক ভাবে বলার চেষ্টা করি। যারা সিলেটের সচেতন মানুষ, তাদের সকলেই অবগত রয়েছেন যে, সিলেটে নারী ব্যবসায়ীদের সর্ববৃহৎ একটি অরাজনৈতিক প্লাটফর্মের নাম সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। যে প্রতিষ্ঠানে আমি আমি লুবানা ইয়াসমিন শম্পা ছিলাম ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। চেম্বারের সকল সদস্যদের একটি প্রাণের দাবি ছিল চেম্বারকে স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে রক্ষা করে গণতন্ত্রের দিকে ধাবিতে করা। এরই প্রেক্ষিতে গেল ১৯ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রে এই প্রতিষ্ঠানটিতে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মো. নুরের জামান চৌধুরীকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে।
দায়িত্বপ্রাপ্তি পরবর্তী নতুন প্রশাসক গেল ২৩ মার্চ উইমেন চেম্বারের সকল স্তরের সদস্যদের নিয়ে একটি সফল সভা করেন। সভার সিদ্বান্ত অনুযায়ী একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য চলতি মাসের ১৭ এপ্রিল বিকাল ৫ ঘটিকা পর্যন্ত সদস্যদের নবায়ন ফি’র সময়সীমা নির্ধারণ করেন। ওইদিন আমি চেম্বার কার্যালয়ে আমরা কয়েকজন নারী উদোক্তা মিলে তাৎক্ষণিক একটি সংবাদ সম্মেলন করি। যেখানে আমার বক্তব্য ছিল-‘উইমেন চেম্বার কারো নিজস্ব সম্পত্তি নয়। কিংবা এটি কোনো দলেরও প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং দল-মতের উর্ধ্বে উঠে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা বান্ধব অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করাই হবে এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।’ কাউকে উদ্দেশ্যে করে না বললেও হয়তোবা আমার এই বক্তব্য কিছু মানুষের মনোক্ষুন্নের কারণ হয়েছে।
মূলত এই বক্তব্যের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে নিয়ে শুরু হয় একটি গোষ্ঠীর অপপ্রচার। নানা রকম সমালোচনাসহ আমার উপর রাজনৈতিক ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা এখনও চলমান রয়েছে। বলা বাহুল্য, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ততোটা সক্রিয় নই। অপপ্রচারের পর দেশে-বিদেশে অবস্থানরত আমার অনেক শুভাকাঙ্খি ও স্বজনদের মাধ্যমে আমি এ বিষয়ে অবগত হই। ফলে এ বিষয়ে কিছু বলা আমার জন্য প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছি।
বোঝে কিংবা না বোঝে অপপ্রচার করা সম্মানীত সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলছি, সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রীর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সুতরাং যে দলই সরকার পরিচালনা করবে, উইমেন চেম্বারকে সেই সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক এবং মুখাপেক্ষি হতেই হবে। তাছাড়া, বিভিন্ন সরকারি প্রোগ্রামেও এই প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ম অনুযায়ী অংশগ্রহণ করতে হবে। সে হিসেবে চেম্বারের প্রতিনিধি হিসেবে সাবেক সভাপতি স্বর্ণলতা রায়ের সাথে বিগত সরকারের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এবং সিলেটে সফররত মন্ত্রি পরিষদের সদস্যবৃন্দের সাথে আমাদের সাক্ষাত করতেই হয়। এর অর্থ এই নয় যে, আমি কোনো একটি দলের সদস্য। দলের সদস্য হিসেবে কাউকে উল্লেখ করতে হলে,তার একটি পদ-পদবী থাকা বাঞ্চনীয়। যদি কোনো দলের সেই পদ-পদবী উল্লেখ করে আমার ব্যাপারে কিছু বলা হতো-আমার তাতে কোনো আক্ষেপ থাকতো না। সুতরাং আমি দৃঢ়তার সাথে বলছি, কোনোকালেই আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না, আগামীতেও থাকবো না। আমি নিজেকে একজন নারী উদ্যোক্তা এবং তৃণমূল পর্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত নারী উদ্যোক্তাদের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টিতে আমার কাজ অব্যাহত থাকবে।
আসল সত্য হলো, উইমেন চেম্বারের ভোটার তালিকা হাল নাগাদের পর একটি অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে হয়তোবা কোনো একটি গোষ্ঠী ( আমি প্রতিপক্ষ বলতে রাজি নই) ইচ্ছেকৃত ভাবে এমন অপপ্রচার চালিয়ে নিজেদের হীন উদ্দেশ্য হাসিল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমি সকলের প্রতি বিনীত ভাবে অনুরোধ রাখতে চাই-আমার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকলে পদ-পদবীসহ তা উল্লেখ করবেন। যদি তা না পারেন, দোহাই লাগে-রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে আমাকে মিথ্যা অপবাদে জড়াবেন না।
পরিশেষে, আপনাদের সকলের সর্বাঙ্গীন সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করছি। জয় হোক-নৈতিকতার, জয় হোক চিন্তার, জয় হোক মানুষের।