Home » কক্সবাজারের গিয়ে নিখোঁজ সিলেটের ৬ জন অপহরণের শিকার!

কক্সবাজারের গিয়ে নিখোঁজ সিলেটের ৬ জন অপহরণের শিকার!

কক্সবাজারে রাজমিস্ত্রীর কাজে গিয়ে পাঁচদিন ধরে জকিগঞ্জ উপজেলার ৬ জন শ্রমিক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর থেকে নিখোঁজদের পরিবারের লোকজনসহ আত্মীয় স্বজনরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় সময় পার করছেন। জনমনেও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিরা কক্সবাজারে কাজে গিয়ে অপহরণের শিকার হয়েছেন নাকি তাদের সঙ্গে অন্য কোন ঘটনা ঘটেছে সেটা বুঝে ওঠতে পারছেন না নিখোঁজদের আত্মীয় স্বজনরা।

জকিগঞ্জ থানা পুলিশ বলছে- মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাকিং করে নিখোঁজ ৬ জনের মধ্যে দুজনের সর্বশেষ অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফ দেখা গেছে। কিন্তু কারো মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছেনা। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার থেকে দাবি করা হচ্ছে, নিখোঁজরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। ঈদের সময় কিংবা ওয়াজের মৌসুমে তারা বাড়িতে আসেন। তাছাড়া সারা বছরই তারা চট্টগ্রামে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। নিখোঁজরা আত্মগোপন করার কোন প্রশ্ন থাকতে পারেনা জানিয়ে তাদের পরিবার থেকে বলা হচ্ছে, চট্টগ্রামের রশিদ ও বাবুল নামের ঠিকাদার জকিগঞ্জের ৬ জনকে কাজের কথা বলে কক্সবাজারে নিয়ে গেছে। এখন রশিদ ও বাবুল নামের ঠিকাদারের মোবাইল নাম্বারও বন্ধ রয়েছে। ওই দুই ব্যক্তি হয়তো নিখোঁজ হওয়া লোকদেরকে কিছু করেছে।

জানা গেছে- গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের ৬ জন রাজমিস্ত্রী কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। তারা হলেন, পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ(২০), ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদি’র ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫)।

নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার সূত্র জানায়, ১৬ এপ্রিল কক্সবাজার পৌঁছার পর সবাই তাদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কর্মস্থলে পৌঁছার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কিন্তু এরপর থেকে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমে বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করা হলেও পরে ৬ জনের মধ্যে কারো সাথে কোন মাধ্যমে যোগাযোগ করতে না পারায় ঘটনাটি অস্বাভাবিক মনে হয়। এরপর উদ্বিগ্ন হয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।

জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, জকিগঞ্জ থেকে কাজের উদ্দেশ্য কক্সবাজার গিয়ে ৬ জন রাজমিস্ত্রী শ্রমিক নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ মৌখিকভাবে পেয়েছি। পুলিশ নিখোঁজদের মধ্যে দুজনের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের সর্বশেষ অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফে পেয়েছে। টেকনাফ থানার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়া লোকজনের অভিভাবকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারের সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করার জন্য। আমরাও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি।

নিখোঁজ রশিদের ভাই আব্দুল বাছিত জানান, রশিদ কয়েক বছর থেকে চট্টগ্রামে এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ কাজ করতো। এবারও চট্টগ্রামের ঠিকাদারের মাধ্যমে রশিদসহ মোট ৬জন কক্সবাজারে কাজে গিয়েছে। আগে কখনো তার কক্সবাজারে যায়নি। কক্সবাজার যাওয়ার পর প্রথমদিন যোগাযোগ হলেও তারপর থেকে রশিদসহ সবার মোবাইল ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, তাদের ধারণা ঠিকাদার তাদেরকে সেখানে নিয়ে কিছু করেছে। নিখোঁজদেরকে কেউ জিম্মি করলে কারো না কারো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা পয়সা দাবি করতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ মুক্তিপণ দাবি করেনি।

টেকনাফের স্থানীয় একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। অপহরণের ভয়ে ওই এলাকার লোকজন সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হন না। গত পাঁচ মাসে অন্তত অর্ধশতাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ওই এলাকায়। এর মধ্যে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরেছেন বেশিরভাগ। সূত্র জানায়, টেকনাফে কমপক্ষে ১০/১২টি ডাকাত গ্রুপের অন্তত দেড় শতাধিক ডাকাত সদস্য অপহরণ বাণিজ্যে জড়িত। তাদের হাতে রয়েছে, আধুনিক স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র। অপহরণের পর গহীন পাহাড়ে নিয়ে জিম্মি করে রাখে চক্রটি। পরে মুক্তিপণ দিয়ে কোনোমতে উদ্ধার হন অপহৃতরা।

নিখোঁজ এমাদ উদ্দিনের চাচাতো ভাই ও নিখোঁজ খালেদ হাসানের চাচা আব্দুল বাছিত দুলাল জানান, এমাদ উদ্দিন ও খালেদ আহমদসহ তাদের সঙ্গীয় সবাই ১৫ এপ্রিল বাড়ি থেকে বের হয়ে ১৬ এপ্রিল কক্সবাজার পৌঁছেন। ওইদিন সন্ধ্যা ৬ টার দিকে এমাদ উদ্দিন কল দিয়ে বাড়িতে জানিয়েছে তারা সবাই কর্মস্থলে পৌঁছেছেন। এরপর আর বাড়িতে যোগাযোগ করেনি। এ ঘটনায় জকিগঞ্জ থানায় জিডি করতে চাইলে পুলিশ পরামর্শ দিয়েছে কক্সবাজারে জিডি করার জন্য। সেখানের থানায় জকিগঞ্জ থানা থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমাদের লোকজন কক্সবাজারের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছেন। টেকনাফ থানায় জিডি করা হবে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *