যাত্রা শুরুর প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর বিধিমালা হতে যাচ্ছে পর্যটকদের নিরাপত্তায় গঠিত ট্যুরিস্ট পুলিশের। এছাড়া পেতে যাচ্ছে নিজস্ব কার্যালয় ভবনও। সম্প্রতি বিধিমালা চূড়ান্ত করার পর তা পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে অনুমোদন ও বিধিমালাটি পাশের জন্য পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে।’
জানা গেছে, পর্যটন খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়ানো ও পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে ট্যুরিস্ট পুলিশ ইউনিট। ট্যুরিস্টদের সব ধরনের সহায়তা দিতে উদার মনোবল ও উৎসাহ নিয়ে মাত্র ৬৯৯ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এ ইউনিটের। বর্তমানে বাহিনীতে ৮৮০ জন সদস্য রয়েছে। এ বাহিনীর ভিশন হচ্ছে- পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাংলাদেশের মনোরম প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যমন্ডিত পরিবেশ। মিশন হচ্ছে ভদ্র, সৌজন্যমূলক ও সদাচরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিটি পর্যটন স্থলে পর্যটকদের ভ্রমণে উৎসাহিত করা। এছাড়া নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, মনোরম পরিবেশ প্রস্তুত, আস্থা বৃদ্ধি, আইনগত সহায়তা প্রদান, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করা। তবে পর্যটন শিল্পের সহায়তার জন্য বাহিনীতে রয়েছে জনবলের স্বল্পতা। এছাড়াও রয়েছে অবকাঠামোর অভাব, যানবাহন, যোগাযোগ মাধ্যমের স্বল্পতা, উন্নয়নে প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতাসহ উপযুক্ত প্রশিক্ষনের অভাব। ট্যুরিস্ট পুলিশের খোদ প্রধান কার্যালয়েরই নেই নিজস্ব ভবন। বনশ্রীর একটি ভাড়া বাড়িতে চলছে এর কার্যক্রম। তবে বাহিনীর সদর দফতরের জন্য ডেমরার কায়েতপাড়ায় ২.৪১ একর জমি সম্প্রতি বরাদ্দ হয়েছে। যা পুলিশ সদর দফতর তদারকি করছে।’
বর্তমানে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি জোনে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ঢাকা বিভাগের সিলেট ও মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের কক্সবাজার, বান্দরবন, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আন্তরিকভাবে সেবা প্রদান করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতার মাঝেও একজন পর্যটকের নিরাপত্তা, থাকা-খাওয়া থেকে চলাচলসহ সব ক্ষেত্রে সাধ্যমত সহায়তা করে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ইউনিট।’
ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি (প্রশাসন, অর্থ ও লজিস্টিক) সরদার নুরুল আমিন বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশকে পর্যটকদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে। এ বাহিনীর লক্ষ্য হচ্ছে পর্যটন এলাকা, পর্যটকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিরাপত্তা ও পর্যটন সম্পদ রক্ষা করে পর্যটনের অনুকুল পরিবেশ তৈরী করা। এছাড়া পর্যটকদের ভ্রমণ ও নিরাপত্তার তথ্য প্রদান করা এবং পর্যটন সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ করা।’
তিনি জানান, পর্যটকদের সেবা প্রদানের জন্য বাহিনীতে কর্মরত মাঠ পর্যায়ের কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ব্যাচ করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশন ও ট্যুরিস্ট পুলিশ যৌথভাবে এসব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।’
নুরুল আমিন জানান, ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাহিনীর সদস্যদের কর্মদক্ষতার উন্নয়ন করা। কক্সবাজার, কুয়াকাটা ও সুন্দরবন এলাকায় বাহিনীর ২৪ ঘন্টা ক্রাইসিস রেসপন্স টিম গঠন করে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিকের মধ্যমে আধুনিকায়ন করা। পর্যটকদের জন্য গেস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস তৈরি। ইকো-ট্যুরিজম, ব্লু-ইকোনোমির ক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করা। গুরুত্বপূর্ণ ট্যুরিস্ট স্পটে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা। কলসেন্টার স্থাপন ও দ্রুত তথ্য আদান-প্রদানে সকল অফিসের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালুকরণ। এছাড়া প্রতিটি বিমান ও স্থলবন্দরে দেশে ঢোকার সময়ই পর্যটককে ভ্রমণের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য প্রদান করা। বাহিনীর জন্য আন্তর্জাতিক মানের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক ট্রেনিং ইন্সিটিউট প্রতিষ্ঠা, অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী সকল অফিস চালু, ড্রোন প্রজেক্ট চালু, সকল পর্যটন এলাকায় তথ্যকেন্দ্র, চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা ও ডিজিটাল ব্যবস্থায় দেশের সব ট্যুরিস্ট স্পট সম্পর্কে প্রামাণ্যচিত্র (ডকুমেন্টারি) প্রদর্শনসহ বাহিনীর জন্য ডাটাবেজ তৈরী করা।’
এক প্রশ্নের জবাবে ট্যুরিস্ট পুলিশের এই এসপি জানান, কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে হয়তো এখনো বিধিমালা হয়নি। তবে সম্প্রতি এর কাজ শেষ হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে এটি আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং সেকশনে রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই বিধিমালাটি অনুমোদন হয়ে যাবে।’
তিনি আরো জানান, বর্তমানে বনশ্রীতে ভাড়াকৃত একটি বাড়িতে বাহিনীর কাজ চলছে। তবে সম্প্রতি বাহিনীর সদর দফতরের জন্য ডেমরার কায়েতপাড়ায় জমি বরাদ্দ হয়েছে। ইতিমধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক কৃষি জমিকে প্রতিষ্ঠানিক জমিতে পরিবর্তন করে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ সদর দফতরের তদারকিতে রয়েছে। এছাড়া ঢাকা জোনের অফিসের জন্য খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় ০.৯৬ একর জমি বরাদ্দ হয়েছে। যার মূল্য পরিশোধ বাবাদ ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে চেক জমা দেয়া হয়েছে।’
বাহিনীর লোকবলের বিষয়ে নুরুল আমিন জানান, ৮৩ জন সিভিল স্টাফসহ ১ হাজার ৩৮৮ জনের মঞ্জুরী থাকলেও বাহিনীতে বর্তমানে ৮৮০ জন লোকবল রয়েছে। আরো লোকবল বাড়ানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’প