Home » গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডব, তিন দিনে নিহত ৬০০

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডব, তিন দিনে নিহত ৬০০

অনলাইন ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৮৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। এ নিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভাঙার পর গত তিন দিনে অন্তত ৬০০ মানুষ নিহত হয়েছে। খবর আল-জাজিরার।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজায় ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। দক্ষিণ গাজার রাফায় স্থল অভিযান চলছে এবং সেনারা বেইত লাহিয়া শহর ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলের কাছে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই অঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাদের কোনো সতর্কতা ছাড়াই আক্রমণ চালানো হয়েছে। আকাশে অবিরাম বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ চলছে।

গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গত ৭২ ঘণ্টায় অন্তত ৫৯১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, গাজার হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। গত ১৮ দিন ধরে গাজায় কোনো মানবিক সাহায্য প্রবেশ করেনি। চিকিৎসকদের দাবি, শিশু, মহিলা ও বয়স্কদের মধ্যে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তারা তীব্র সংকটে আছেন।

জাবালিয়া অঞ্চলের ছয় সন্তানের বাবা খাদের জুনায়েদ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিদ্যালয়ের একটি শেল্টারে থাকছেন তিনি। জুনায়েদ তার পরিবার নিয়ে বারবার বাস্তুচ্যুত হওয়ার ক্লান্তি, অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি ও আর্থিক কষ্টের কথা তুলে ধরে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

উত্তর থেকে দক্ষিণে যেতে চাওয়া এই ফিলিস্তিনিরা মূলত ইসরায়েলের নতুন করে হামলার মুখে আবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন। মাস দুয়েক আগেই যুদ্ধবিরতির শুরুতে তারা উত্তরে নিজেদের ঠিকানায় ফিরেছিলেন। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী নেটজারিম করিডোর দখল করেছে, যা গাজা উপত্যকার দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ পথ। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিরা গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের ওপর গুলি চালিয়েছেন ইসরায়েলি সেনারা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা গাজার আক্রমণের ফলস্বরূপ যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তারা যুদ্ধবিরতি এবং অপহৃতদের মুক্তির জন্য আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে ‘যুদ্ধবিরতি-অপহৃতদের মুক্তির চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে’ জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ নতুন এই হামলাকে ‘বিপ্লব’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল এই অঞ্চলে ‘একটি বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছে’।

এদিকে, গতকাল দক্ষিণ গাজা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছুড়েছে হামাস। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা থেকে ইসরায়েলে গুশ দান ও হাশফেলা এলাকায় তিনটি রকেট ছোড়া হয়। এর মধ্যে একটি আকাশে থাকতেই ধ্বংস করা হয়েছে। আর দুটি রকেট উন্মুক্ত স্থানে পড়েছে।

কয়েক মাসের আলোচনার পর মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি ১ মার্চ শেষ হয়েছে। এরপর আলোচনা করেও যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি ইসরায়েল ও হামাস। তবে ২ মার্চ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়ানোর বিষয়ে অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের সরকার। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান ও ইহুদিদের ‘পাসওভার’ উৎসব উপলক্ষে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চলার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে গত মঙ্গলবার আকাশপথে হামলা শুরুর পাশাপাশি বুধবার থেকে উত্তর গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *