ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়েছেন দাবি করে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্য মাতসুশিমা সুমাইয়া। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানী মতিঝিল থানায় জিডি করেন তিনি।
জিডি করার সময় সুমাইয়ার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মিডিয়া ম্যানেজার খালিদ মাহমুদ নওমী।
বেশ কয়েকদিন ধরে জাতীয় দলের ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে নারী ফুটবলারদের বিরোধ নিয়ে আলোচনা চলছে ফুটবল অঙ্গনে। বাটলারের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিলো না দলের কয়েকজন সিনিয়র সদস্যের সঙ্গে। যে কারণে তারাসহ পুরো নারী ফুটবল দল অনেকটা বিদ্রোহ করে বসে আছেন।
সমস্যা সমাধানে বাফুফে এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা। এরই মধ্যে গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন সুমাইয়া।
জাপান প্রবাসী সুমাইয়া ওই পোস্টে গেল কয়েকদিনে অনেকবার হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পেয়েছেন দাবি করেন। সে সঙ্গে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, কেন তিনি একজন ফুটবলার হতে গেলেন? কারণ, একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে যেভাবে দেশকে পাশে পাওয়ার কথা ছিল, সেভাবে পাচ্ছেন না।
সুমাইয়া লিখেছেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। আমার নাম মাতসুশিমা সুমাইয়া। আমি বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড়।
ইন্টার স্কুলে ইংলিশ মিডিয়াম স্টুডেন্ট হয়ে খেলা থেকে শুরু করে মালদ্বীপে লিগ জয় এবং বাংলাদেশের হয়ে ২০২৪ সালে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জত- এ যাত্রা আমার কাছে ছিল মিষ্টি-তিক্ততায় ভরা।
যখন থেকে আমি এই পথ (নারী ফুটবলার হিসেবে খেলা) বেছে নিয়েছি, তখন থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল সেসব তরুণ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবো, যাদের বাবা-মা চায় তারা শুধু পড়ালেখার ওপরই মনোযোগ নিবদ্ধ করে থাকুক। আমি দেখাতে চেয়েছিলাম যে আবেগ এবং নিষ্ঠা সব বাধা ভেঙে দিতে পারে।
কিন্তু আজ, আমি আফসোস নিয়ে বসে আছি। আক্ষেপ হচ্ছে আমার শিক্ষা, আমার পরিবার, ঈদ, সব বিসর্জন দিয়ে এমন একটি দেশের সেবা করার জন্য যে আমাদের সংগ্রামের প্রশংসা করতে জানে না। আমি আমার বাবা-মায়ের সাথে ফুটবল খেলার জন্য লড়াই করেছি- এই বিশ্বাসে যে আমার দেশ আমার পাশে থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভিন্ন। একজন ক্রীড়াবিদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা সত্যিই কেউ চিন্তা করে না। আমার এবং আমার সতীর্থদের জন্য আমরা যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি সে সম্পর্কে ইংরেজিতে একটি চিঠি লেখার ন্যূনতম ক্ষমতা আমার আছে।
কয়েকদিন ধরে, আমি অসংখ্য হত্যা এবং ধর্ষণের হুমকি পেয়েছি। এমন সব কথা যা আমাকে এমনভাবে ভেঙে দিয়েছে যা আমি কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করিনি।
আমি জানি না এই (ট্রমা) আঘাত থেকে সেরে উঠতে আমার কতক্ষণ লাগবে। তবে আমি জানি এবং চাই যে- কাউকে শুধু তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কখনো যেতে হবে না।’