পোশাক শিল্পে কর্মপরিবেশ উন্নয়নে মালিকপক্ষ যথেষ্ট উন্নতি করলেও এখনও অনেকখানি পিছিয়ে শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে।’ ‘শ্রমিক নেতাদের এই অভিযোগ মানছেন কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরও। এজন্য আইনের সীমাদ্ধতাকেই দায়ী করছে সংস্থাটি। আর বিজিএমইএ বলছে, পোশাক শ্রমিকের যেকোন অভিযোগ নিষ্পত্তিতে আন্তরিক তারা।’
‘অজিফা বেগম। বছরখানেক আগেও ছিলেন কর্মক্ষম, কাজ করতেন একটি তৈরি পোশাক কারখানায়। এই পঙ্গু জীবনের শুরুও সেখানেই। কর্মক্ষেত্রে হঠাৎ অসুস্থ হলে ছুটি তো জোটেইনি বরং হারাতে হয়েছে চাকরি, পাওনাদি না পেলেও দুই দশকের কর্মস্থল থেকে পেয়েছেন লাঞ্ছনা।’
‘অজিফা জানান, ‘আমি ছুটি চেয়েছ। বলে, মামাবাড়ির আবদার? ছুটি চাইলেই কি ছুটি পাওয়া যায়? এই কথা বলে আমাকে বের করে দিয়েছে। বলে আমি এত বছর চাকরি করেছি, কিন্তু টাকা-পয়সা কিছু পাব না।’
এমন ঘটনা হয়তো তৈরি পোশাক শিল্পের প্রতিচ্ছবি হতে চাইবে না। কিন্তু অতিরিক্ত কাজের চাপ, মাতৃত্বকালীন সুবিধা বঞ্চিত করাসহ নানা ইস্যুতে লাঞ্ছনার ঘটনা পিছুও ছাড়ছে না এই শিল্পের।’
এক নারী জানান, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে গর্ভবতী হয়েছি। ১৯ তারিখে আমাকে ছুটি দিয়েছে। ফিরে যাওয়ার পর আমাকে আর নেয়নি। এরমধ্যে যে ছুটির টাকাটা দেবে, সেটাও দেয়নি।’
এক পুরুষ জানান, কিছু না, শুধু এই টেবিলের মাল অন্য টেবিলে নিয়ে গেছি। এতেই ধাক্কা দিয়ে আমার এই হাত ভেঙে ফেলেছে।
কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর ডাইফি’র তথ্যে দেখা যায়, শ্রম আইন না মানায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংস্থাটিতে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে ১ হাজার ৭২০টি। অথচ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই অভিযোগের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৮৪৪টিতে।’
শ্রমিক নেতারা বলছেন, শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার পেছনে মালিকদের পাশাপাশি অনেকটাই দায়ী ডাইফির কর্মকর্তারাও। আর বিজিএমইএ বলছে, অনেক ক্ষেত্রে তারাও ব্যর্থ হন আইন অমান্যকারী মালিকপক্ষের কাছে।’
বাংলাদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাক্টরি ঈদের আগেরদিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তার ইনস্পেক্টরকে ডেকে আনা হলো।’ শ্রমিককে প্রাপ্য বেতন থেকে অর্ধেক দিতে বলছে এবং ডাইফি ইন্সপেক্টর বলছে, নিয়ে নাও। মালিক দিতে পারছে না, এটাও পাবে না। তার মানেটা কী? তাহলে এই ইনস্পেক্টর ডেকে আমার লাভটা কী?
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এই পর্যন্ত এরকম হাজার হাজার কেইস কিন্তু সলভ করে দিয়েছি। এত বড় একটা সেক্টরে দুয়েকজন এদিক-সেদিক থাকবে। সেটাও কিন্তু আমরা সলভ করে দিচ্ছি।’
শ্রমিকরা অধিকার বঞ্চিত হওয়ার জন্য অনেকটাই দায়ী শ্রম-আইনের দুর্বলতা, এমন পর্যবেক্ষণ ডাইফি’র মহাপরিদর্শকের। তার যুক্তি, শ্রম বিধিমালায় অধিকার সুরক্ষার কথা বলা হলেও আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রাখা হয়নি শ্রম আইনে।’
ডাইফির মহাপরিদর্শক মো. সামছুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আইন সংশোধন না করে দিতে পারবো, ততক্ষণ পর্যন্ত তো এটা মেনে নেযা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’ আমাদের হয়তো বা একটা অসন্তুষ্টি থেকে যেতে পারে, কিন্তু এটাই মেনে নিতে হবে।
শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় এখনই গুরুত্ব বাড়ানো না হলে আবারও বড় কোন শর্তের বেড়াজালে আটকে যেতে পারে এই শিল্পখাত, এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।’