Home » মহান বিজয় দিবসে লিটনদের বিজয়ের আনন্দ

মহান বিজয় দিবসে লিটনদের বিজয়ের আনন্দ

প্রথম টি-টোয়েন্টির স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯.৫ ওভারে ১৪০/১০, লক্ষ্য ১৪৮ (ম্যাককয় ০*; কিং ১, পুরান ১, চার্লস ২০, ফ্লেচার ০, চেজ ৭, মোটি ৬, আকিল ২, শেফার্ড ২২, পাওয়েল ৬০, জোসেফ ৯)

ফল; বাংলাদেশ ৭ রানে জয়ী।

বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৪৭/৬ (মেহেদী ২৬*, রিশাদ ২*; তানজিদ ৬, লিটন ০, আফিফ ৮, সৌম্য ৪৩, শামীম ২৭)

মহান বিজয় দিবসকে ঘিরে ঘরে ঘরে আনন্দ, ঠিক তখন ক্যারিবিয়ানে সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনের আর্নস ভেল স্টেডিয়ামে চলছিল বাংলাদেশ দল আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট লড়াই। বিজয় দিবসের এই আনন্দকে দ্বিগুণ করে তুলেছে লিটন দাসের দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ দল।

১৪৮ রানের লক্ষ্য দিয়ে ৬১ রানে ৭ উইকেট তুলে ম্যাচটা প্রায় নিজেদের করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল ম্যাচটা জমিয়ে দেন তার পর। শেফার্ডকে সঙ্গে নিয়ে বিধ্বংসী হাফসেঞ্চরিতে অষ্টম উইকেটে ৩৩ বলে ৬৭ রান যোগ করে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তিনি। ১৮তম ওভারে শেফার্ডকে ফিরিয়ে জুটি ভেঙে ছন্দপতন ঘটান তাসকিন। তার পরেও পাওয়েল প্রান্ত আগলে কাঁটা হয়ে ছিলেন। তার ব্যাটে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে থ্রিলারে পরিণত হয় ম্যাচ। শেষ ৬ বলে প্রয়োজন ছিল ১০ রান। শুরুতে টাইট লেংথের বলে তাদের আটকে রাখতে সমর্থ হন হাসান মাহমুদ। সেই নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়েই তৃতীয় ডেলিভারিতে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ানো পাওয়েলকে লিটনের গ্লাভসবন্দি করিয়ে লড়াইয়ের ইতি টানেন তিনি। তার পর আলজারি জোসেফের উইকেট তুলে লেজ ছেঁটে দিলে ১৪০ রানেই শেষ হয় ক্যারিবীয়দের ইনিংস।

শুরুতে নিজের স্পিনে ক্যারিবীয়দের ব্যাটিং এলোমেলো করে দেন মেহেদী হাসান। তার বোলিংয়েই ৬১ রানে পড়ে ৭ উইকেট। মেহেদী ১৩ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ম্যাচসেরাও তিনি। হাসান ১৮ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন শেষটায়। ২৮ রানে দুটি শিকার করেছেন তাসকিন আহমেদও। একটি করে নিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব ও রিশাদ হোসেন।

পাওয়েল-শেফার্ড জুটি ভাঙলেন তাসকিন

১১.৪ ওভারে ৬১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে প্রায় ছিটকে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে তারা ১৫ ওভারে ১০৮ রান তুলে ফেলে পাওয়েল-শেফার্ড জুটির কল্যাণে। মূল ঝড়টা তুলেছেন অধিনায়ক পাওয়েল। শুরুর ১৮ বলে ১৮ রান করা এই ব্যাটার পরের ১০ বলে মেরে পূরণ করেছেন ফিফটি। ৩৩ বলে ৬৭ রান আসা অষ্টম উইকেটের এই জুটি ভেঙেছেন তাসকিন। তালুবন্দি করিয়েছেন শেফার্ডকে (২২)।

ম্যাচের একটি দৃশ্য।
ম্যাচের একটি দৃশ্য।
সপ্তম উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

তানজিম সাকিবের পরের ওভারে আঘাত হানেন রিশাদ হোসেনও। তাকে মেরে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন নতুন ব্যাটার আকিল হোসেন (২)। তার বিদায়ে ৬১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে স্বাগতিক দল।

তানজিম সাকিবের আঘাতে পড়লো ষষ্ঠ উইকেট

মেহেদী তার কাজটা করে মঞ্চ গড়ে দিয়েছেন। এবার স্বাগতিকদের আরও চাপে ফেলার কাজটা বাকি বোলারদের। সেই লক্ষ্যে সফল তানজিম সাকিব। ১১তম ওভারে গুডাকেশ মোটিকে (৬) লিটনের গ্লাভসবন্দি করে ষষ্ঠ উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। তাতে ৫৮ রানে পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ষষ্ঠ উইকেট।

মেহেদীর চার শিকারে বিপদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

মেহেদীর ঘূর্ণিতে ব্যাটিং অর্ডার পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সপ্তম ওভারে তার জোড়া আঘাতে ৩৮ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ৬.৩ ওভারে শুরুতে আন্দ্রে ফ্লেচারকে শূন্য রানে গ্লাভসবন্দি করিয়েছেন। এক বল পর চেজকেও (৭) ফিরিয়েছেন লিটনের গ্লাভসবন্দি করে। যা ছিল মেহেদীর চতুর্থ শিকার! শুরুতে অবশ্য চেজকে আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউ নেওয়াতেই মিলেছে সাফল্য।

চার্লসকে থামালেন মেহেদী

২ রানে দুই উইকেট হারানোর পর ক্যারিবিয়ানদের হয়ে হাত খোলার চেষ্টা করছিলেন ওপেনার জনসন চার্লস। ১২ বলে ২টি চার ও ২ ছক্কা মেরে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। পঞ্চম ওভারে তাকে ২০ রানে থামিয়েছেন মেহেদী। তাতে পাওয়ার প্লেতেই ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিক দল। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ উইকেট হারিয়ে যোগ করেছে ৩৬ রান।

তাসকিনের পর মেহেদীর আঘাতে দুই উইকেট নেই ক্যারিবিয়ানদের

তাসকিনের আঘাতে দ্বিতীয় ওভারে এক রানে পড়েছে প্রথম উইকেট। পরের ওভারে বোলিংয়ে পরিবর্তন আনলে নতুন নামা নিকোলাস পুরানকেও টিকতে দেননি অফ স্পিনার মেহেদী হাসান। আর ১ রান যোগ হতেই ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে দারুণ ডেলিভারিতে স্টাম্পড করিয়েছেন মেহেদী। তাতে ২ রানে দুই উইকেট হারিয়ে শুরুতেই বিপদে পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

দ্বিতীয় ওভারেই তাসকিনের আঘাত

১৪৮ রানের লক্ষ্য দিয়ে বল হাতেও দারুণ সূচনা করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হেনেছেন তাসকিন আহমেদ। তার বলে মেরে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং। ক্যারিবিয়ান ওপেনার ১ রানে ফিরেছেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ

সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাট করতে নামা সফরকারী দল পাওয়ার প্লেতে ৩০ রানে হারায় তিন উইকেট। ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন তানজিদ, লিটন ও আফিফ। তার পর বাংলাদেশের ইনিংসের গতিপথ নির্ধারণ করেছে দুটি জুটি। শুরুতে সৌম্য সরকার-জাকের আলী জুটি ৪২ বলে ৫৭ রান যোগ করেছেন। তার পর দারুণভাবে ফিনিশিংয়ের ভূমিকা রাখেন মেহেদী হাসান ও শামিম হোসেন। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ২৯ বলে ৪৯ রান যোগ করেছেন তারা। সবচেয়ে বেশি চড়াও ছিলেন শামীম। ১৩ বলের ক্যামিও ইনিংসে ১ চার ও ৩ ছক্কায় ২৭ রান করেছেন তিনি। ১৯.৫ ওভারে তাকে ফেরান ম্যাককয়। মেহেদীও দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ভূমিকা রেখেছেন। ২৪ বলে ২৬ রানে অপরাজিত থেকেছেন তিনি। মেহেদীর ইনিংসে ছিল ২টি চার ও ১টি ছয়ের মার।

তাদের আগে জাকের-সৌম্য মিলে চতুর্থ উইকেটে যোগ করেছেন ৫৭ রান। এই জুটি গড়ার পথেই সৌম্য সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন। ৩২ বলে উপহার দেন ৪৩ রানের দারুণ একটি ইনিংস। তাছাড়া জাকের আলীর ব্যাট থেকে আসে ২৭ রান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১৩ রানে দুটি নিয়েছেন আকিল হোসেন। ৩০ রানে দুটি নিয়েছেন ওবেড ম্যাককয়ও। একটি করে নিয়েছেন রোস্টন চেজ ও রোমারিও শেফার্ড।

৪৩ রানে থামলেন সৌম্য

১৩তম ওভারে জীবন পেয়েছেন। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি সৌম্য সরকার। ১৫তম ওভারের শেষ বলে তাকে বোল্ড করেছেন ওবেড ম্যাককয়। সৌম্য থেমেছেন ৪৩ রানে। স্কোরবোর্ড সচল রাখা এই ব্যাটারের ৩২ বলের ইনিংসে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা।

জাকের আলীর বিদায়ে ভাঙলো ৫৭ রানের জুটি

পাওয়ার প্লেতে ৩০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে ছিল বাংলাদেশ। রানের চাকাও সেভাবে সচল চিল না। কিন্তু প্রান্ত আগলে জাকের আলীর সঙ্গে দারুণ জুটিতে স্কোরবোর্ডে রান জমা করেছেন সৌম্য সরকার। তারা আক্রমণাত্মক হওয়াতেই চতুর্থ উইকেটে ৪২ বলে যোগ হয় ৫৭ রান। সেই ‍জুটি ভেঙেছে জাকের আলীর বিদায়ে। তাকে দর্শনীয় ক্যাচে ফিরিয়েছেন রোমারিও শেফার্ড। বিদায়ের আগে জাকের ২৭ বলে ২৭ রানে ফিরেছেন। একই ওভারে সৌম্যও ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ক্যাচ বৈধভাবে নিতে পারেননি মোটি।

পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে পাওয়ার প্লেতে সেভাবে রানই করতে পারেনি বাংলাদেশ। পঞ্চম ওভারে রোস্টন চেজের বলে রানের খোঁজে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন আফিফ হোসেন (৮)। তাতে পাওয়ার প্লেতেই তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ চাপে রয়েছে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তাদের রান এসেছে ৩২।

একই ওভারে সৌম্যকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কট বিহাইন্ডের আবেদন উঠেছিল। কিন্তু সৌম্য রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন। রিপ্লেতেও দেখা গেছে বল ব্যাটে লাগেনি।

এক ওভারেই সাজঘরে তানজিদ, লিটন

টস হেরে শুরুটা দেখে শুনেই করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। প্রথম ওভারে চার মারেন সৌম্য। তার পরের ওভারে তানজিদ হাসান। কিন্তু তৃতীয় ওভারে এসেই আকিল হোসেনের বলে পর পর দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। শুরুতে আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন তানজিদ হাসান। তিনি ফিরেছেন ৬ রানে। পরের বলে নতুন নামা ব্যাটার অধিনায়ক লিটন দাস তো সরাসরি আকিল হোসেনকেই ক্যাচ তুলে শূন্য রানে ফিরেছেন। তাতে ১৫ রানে ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ

টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে শুরুর ম্যাচে টসভাগ্য বাংলাদেশের পক্ষে থাকেনি। টস জিতে তাদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

গত জুনে সেন্ট ভিনসেন্টেই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ তিনটি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। দুটি ম্যাচ জিতলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে হার টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দেয় নাজমুল হোসেন শান্তদের। কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই সেন্ট ভিনসেন্টেই বাংলাদেশ দল টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামছে। পুরোনো দুঃখ যখন সঙ্গী, তখন নতুন করে সেন্ট কিটসে ওয়ানডেতে ধবলধোলাই হওয়ার তাজা ক্ষত ক্রিকেটারদের হৃদয়ে।

টস হেরেও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিটন দাস বলেছেন, উইকেট দেখে ভালো মনে হয়েছে। ১৮০ রান হলে সেটা হবে ভালো স্কোর। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেমন পিচ দেখা গেছে, তার চেয়ে এটা ব্যতিক্রম।

একাদশে কারা

বাংলাদেশের একাদশে রয়েছেন তিনজন পেসার, দুজন স্পিনার। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর দলে ফিরেছেন শামীম হোসেন।

বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), শামিম হোসেন, তানজিদ হাসান, সৌম্য সরকার, আফিফ হোসেন, জাকের আলী, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান সাকিব, মেহেদী হাসান, তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: ব্র্যান্ডন কিং, জনসন চার্লস, নিকোলাস পুরান, আন্দ্রে ফ্লেচার, রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), রোমারিও শেফার্ড, রোস্টন চেজ, আকিল হোসেন, গুডাকেশ মোটি, আলজারি জোসেফ ও ওবেড ম্যাককয়।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *