‘দুর্ব্যবহারের’ অভিযোগ এনে অর্থ বিভাগের এক যুগ্মসচিবের অপসারণ এবং প্রশাসনিক (এও) ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) পদে পদোন্নতির দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো বাংলাদেশ সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন সেখানে কর্মরত কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল থেকে সচিবালয়ের তিন, ছয় ও সাত নম্বর ভবনের মাঝখানে ‘বাদাম তলা’ নামে পরিচিত পয়েন্টে কয়েকশ কর্মচারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন।
অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব ড. নাদিরা সুলতানা সচিবালয়ে ‘বিশৃঙ্খলা উসকে দিয়েছেন এবং কর্মচারীদের সঙ্গে অমানবিক, অসৌজন্যমূলক ও আক্রমণাত্মক আচরণ করেছেন’— এমন অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এই কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। যুগ্মসচিব নাদিরা সুলতানার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিবের কাছে লিখিত আবেদনও দেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার টানা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন তারা।
কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ তোয়াহার সভাপতিত্বে আজকের সমাবেশ থেকে বলা হয়েছে, দেশে এখন বৈষম্যবিরোধী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের ক্ষেত্রেও কোনও বৈষম্য হবে না। আমরা এই সরকারের সঙ্গে আছি।
এসময় এক বক্তা অভিযোগ করে বলেন, দেশের গুটি কয়েক মিডিয়া আমাদের এই আন্দোলনকে সুকৌশলে অন্যভাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করছে। আমরা তাদের সতর্ক করতে চাই, তারা যেন এ ধরনের কোনও সংবাদ পরিবেশন না করেন। যদি করেন আমরা তাদের চিনি, আমরা আপনাদের এই অঙ্গণে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবো।
এদিকে সচিবালয়ের কর্মচারীরা এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় সচিবালয়ের অধিকাংশ কাজই স্থবির হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে অসুস্থতাজনিত ছুটিতে রয়েছেন অভিযুক্ত যুগ্ম সচিব ড. নাদিরা সুলতানা।
বিক্ষোভকারী কর্মচারী কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব ও উপসচিব পদে ক্যাডার-বহির্ভূত কর্মচারীদের নির্দিষ্ট হারে পদোন্নতি পাওয়ার কোটা রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ক্যাডার-বহির্ভূত কর্মচারীরা বঞ্চিত হয়েছেন।
তারা জানান, বঞ্চিত কর্মচারীদের পদোন্নতি দেওয়ার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরই মধ্যে কমিটির অন্য সদস্যরা এই সমস্যা সমাধানে একমত পোষণ করে একটি প্রতিবেদনে সই করেছেন। কিন্তু কমিটির এক সদস্য নাদিরা সুলতানা শুরু থেকেই এ প্রতিবেদনে সই দিতে চাননি।
গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বেলা ৩টার দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জিয়াউর রহমানসহ কয়েকজন কর্মচারী নাদিরা সুলতানার সই আনতে যান অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তখন নাদিরা সুলতানা জিয়াউরের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করলে এক পর্যায়ে জিয়া অসুস্থ হয়ে যান বলে অভিযোগ করেছেন কর্মচারীরা। বুধবার তারা জানান, পরে জিয়াকে সচিবালয়ের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে রাজধানীর কর্মচারী হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ভালো।