ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শিগগিরই আন্দোলনে নামতে পারে আওয়ামী লীগ। আগামী দুই সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে এ আন্দোলন শুরু হতে পারে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের উদ্ধৃতি দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ)।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছিলেন শেখ হাসিনা। তবে গেল আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ চলে গেছেন আওয়ামী লীগের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক।
বুধবার আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এছাড়া চলতি মাসের শুরুর দিকে শেখ হাসিনাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেছেন, আমরা দলের নেতাদের একত্রিত করার জন্য কাজ করছি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করার জন্য অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
আওয়ামী লীগ কবে নাগাদ মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ কিংবা এক মাস পরে আমরা আন্দোলন করতে পারি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দ্রুত ফেরানোর কাজ নিশ্চিত করতে ইউনূস সরকারকে প্রকাশ্যে চাপও দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রগতিতে অসন্তুষ্ট দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতে, ‘এই সরকার কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেনি।’
এদিকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে ১০টি কমিশনকে বিচার বিভাগ, পুলিশ, সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, গণমাধ্যম এবং শ্রম অধিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব করার দায়িত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের প্রস্তাব জমা দিতে হবে। সেই প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করতে এবং তাদের জন্য রাজনৈতিক মতৈক্য চাওয়া ও সেগুলো বাস্তবায়ন করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
মির্জা ফখরুল মনে করেন, নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা দীর্ঘায়িত হবে এবং আওয়ামী লীগ হারানো রাজনৈতিক স্থান ফিরে পাওয়ার সুযোগ পাবে। আওয়ামী লীগ অনেক বড় ও পুরনো একটি রাজনৈতিক দল। দেশে তাদের বৃহৎ সমর্থক গোষ্ঠী আছে। তাই নির্বাচন বিলম্বিত হলে তারা একত্রিত হওয়ার এবং সমস্যা তৈরি করার জন্য সময় পাবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক শক্তি নই। প্রথমবারের মতো আমরা একটি গ্রুপ হয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নেই, কিন্তু আমাদের প্রতিশ্রুতি আছে। আমাদের পরিশ্রমী মনোভাব ও সততা আছে।
বিশ্লেষকরা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো- সহায়ক নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার অভাব। কারণ, যা আছে তার বেশিরভাগই শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনী সংস্কার কমিশনের সদস্য জাহেদ উর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইন প্রয়োগকারী ও আমলাতন্ত্রের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কাজ করছে।
ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ‘অবশিষ্টাংশের ব্যবস্থা’ থেকে মুক্তি পেতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঢাকার ভেতরে ও বাইরে পুলিশ কর্মকর্তা এবং আমলাদের বদলি ও পুনর্নিয়োগ করছে। বাংলাদেশের জন্য সামনের পথ নির্ধারণ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য, ইউনূস সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগকে এখন পর্যন্ত আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে।
এ নিয়ে জাহেদ উর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক জায়গা দেওয়া উচিত। তাদের রাজনীতি করার অধিকার দেওয়া উচিত এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশ নেয়ারও সুযোগ দেওয়া উচিত। এখানে আমি একমত। তবে শিগগিরই আওয়ামী লীগকে সংস্কারের আলোচনার জন্য ডাকলে সমাজে কিছু তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বসতে আওয়ামী লীগ আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, এই সরকার সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। আমরা যদি তাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করি তাহলে এই সরকার টিকবে না।