রাজধানীর বড় কাঁচাবাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম মিরপুর-১ নম্বরের শাহ আলী কাঁচা বাজার। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের উপস্থিতি থাকে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই কাঁচাবাজার হয়ে পড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমশূন্য। বাজারের কোনও ডিমের দোকানে ফার্মের মুরগির লাল কিংবা সাদা ডিম পাওয়া যায়নি। ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে, আর বিক্রেতারা দোকানে বসে আছেন একরাশ ক্ষোভ-অভিযোগ নিয়ে। তারা বিক্রি করছেন হাঁসের, দেশি ও পাকিস্তানি মুরগির ও কোয়েল পাখির ডিম।
প্রশ্ন করা হলে বিক্রেতাদের কয়েকজন জানান, গত সপ্তাহে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযান ও জরিমানার পর থেকে তারা ডিম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।
এদিকে বাজারে ডিম কিনতে আসা ক্রেতারা বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের জরিমানা করে খুব একটা উপকার পাওয়া যাবে না। ধরতে হবে মূল জায়গায়। তা না হলে খুচরা বিক্রেতাদের যেমন ক্ষতি হবে, তেমনি ক্রেতাদেরও পড়তে হবে ভোগান্তিতে।
কেন ডিম নেই?
ডিমের খুচরা বিক্রেতারা দাবি করছেন, ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি করতে না পেরে তারা ক্ষুব্ধ। ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন কারণ পাইকারের কাছে থেকে ডিম পান না। আর পাইকাররা ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন কারণ তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডিম কিনতে পারেন না এই যুক্তিতে। এই পরিস্থিতিতে পুরো বাজার হয়ে পড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমশূন্য।
উল্লেখ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) মিরপুরের এই বাজার মনিটরিংয়ে আসেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের দুই সহকারী পরিচালক রোজিনা সুলতানা ও ফারহানা ইসলাম অজন্তা। এসম ক্রয় রশিদ দেখাতে না পারায় খুচরা ডিমের বিক্রেতা আব্দুল জব্বার ডিমের দোকানের বিক্রেতাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডিম না কেনায় পাইকারি বিক্রেতা রাজিব পুষ্টি বিতানকে জরিমানা করা হয় ৫০ হাজার টাকা।
আজকে আব্দুল জব্বারের ডিমের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, তিনি হাঁস ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি করছেন। তার কাছে নেই কোন ফার্মের মুরগির ডিম। তিনি বলেন, গত সপ্তাহ থেকে ডিম পাই না। পাইকার ডিম আনে না। আমরা কীভাবে পাবো? গত সপ্তাহে অভিযান চলার পর থেকে তারা ডিম আনে না। আমরা কীভাবে বিক্রি করব? ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছি আপাতত।
একই কথা বলেন আরেক খুচরা ডিম বিক্রেতা। তিনি বলেন, গত সপ্তাহ থেকে ডিম পাই না। এখন শুধু হাঁসের ডিম বিক্রি করি। আমি রাজিব পুষ্টি বিতান থেকে ডিম আনি। কিন্তু ওরা ডিম আনে না, আর আমিও বিক্রি করতে পারি না। তেজগাঁও কাপ্তান বাজার খোঁজ নিয়েও ডিম পাই না। তারা বলে যে ডিম নাই।
ক্ষোভ প্রকাশ করেন ডিমের আড়তের এক খুচরা বিক্রেতা। ‘হেলাল ডিমের আড়ত’ নামে দোকানের বিক্রেতা মো. মনির বলেন, ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছি। এতো ঝামেলা ভালো লাগে না। এর থেকে বিক্রি বন্ধ রাখাই ভালো। কিছু হলেই আমাদের দোষ। আমাদের জরিমানা করে। আমরা তাহলে চলবো কীভাবে? আমরা কি দাম বাড়ানো-কমানোর সাথে যুক্ত?
সাইদ ডিম ঘরের মো. সামিউল ইসলামও একজন খুচরা বিক্রেতা। তিনি বলেন, আমরা কীভাবে ব্যবসা করব, কীভাবে খাবো? রাজিব (রাজিব পুষ্টি বিতান) আমাদের ডিম দেয় না। তারাও ডিম আনে না। শুধু হাঁসের ডিম বিক্রি করে চলা যায় না। মুরগির ডিমের চাহিদা বেশি। গত সপ্তাহ থেকেই ডিম নাই। আমরা যে তেঁজগাও বা অন্য জায়গা থেকে আনবো সেটাও তো হয় না। আমাদের খরচ পড়ে বেশি। আবার বেশি বিক্রি করলেও তো সমস্যা। আমরা এখন কী করব?
এই বাজারের ডিমের পাইকারি বিক্রেতা রাজিব পুষ্টি বিতান। বাজারের বেশিরভাগ খুচরা বিক্রেতাই এই ব্যবসায়ীর থেকে ডিম সংগ্রহ করে থাকেন। গত শুক্রবার এই ব্যবসায়ীকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর জরিমানা করে। আজও রাজিব পুষ্টি বিতান খোলা ছিল। তবে ডিম ছিল না।
রাজিব পুষ্টি বিতানের বিক্রেতা রানা আহমেদ সাদ্দাম বলেন, গত সপ্তাহ থেকে আমরা ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছি। আমরা বেশি দামে ডিম কিনেছিলাম বলে আমাদের জরিমানা করা হয়েছিল। আমরা তো সত্যি সত্যিই বেশি দামে কিনেছিলাম। ক্রয় রশিদও দেখিয়েছিলাম। তবুও আমাদের জরিমানা করা হয়। আমরা কম দামে কিনতে পারি না, এখন কী করব? তাই এখন ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছি। আমরা টাঙ্গাইল থেকে ডিম আনি। কিন্তু সেখান থেকে সরকারি মূল্যে ডিম কেনা যায় না। তাই এখন ডিম বিক্রি বন্ধ আমাদের।
তেজগাঁও কিংবা কাপ্তানবাজার থেকে কেন আনা হয় না এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা ডিম দেয় না। তারা বলে যেতাদের যে ফিক্সড ক্রেতা আছে। তাদের দিয়ে আর ডিম থাকে না। তিনি ঢাকার বাইরের বড় খামারগুলোতে অভিযান চালিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন।
এদিকে বাজারে ডিম কিনতে আসা ক্রেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। রাসেল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, শুধু খুচরাবাজারে অভিযান চালালে ফল পাওয়া যাবে না। মূল জায়গায় অভিযান চালাতে হবে। খুচরা বাজারে অভিযান চালালেআমাদের ভোগান্তি বাড়ে। আর কিছুই হয় না।
আরেক ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের জরিমানা করলে কেবল তাদের ক্ষতিই হবে। প্রকৃতপক্ষে কোনও লাভ হবে না। বড় বড় ফার্ম, যারা ডিম উৎপাদন করে তাদের তাদের ধরতে হবে। জরিমানা করতে হবে।