Home » নিয়ন্ত্রণহীন কাঁচাবাজার, দায় কার?

নিয়ন্ত্রণহীন কাঁচাবাজার, দায় কার?

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হুট করে দাম কমে গিয়েছিল শাকসবজির। তবে এই অবস্থা টেকেনি এক বা দুদিনের বেশি। বৃষ্টি ও বন্যার অজুহাত দেখিয়ে আগের চেয়েও বেড়ে যায় বিভিন্ন সবজির দাম। এখন কোনও কারণ ছাড়াই লাগামছাড়া দাম কাঁচাবাজারের প্রায় সব পণ্যের। বেশিরভাগ সবজির কেজি ৮০ বা ১০০ টাকার ওপরে। ফলে ব্যাগ নিয়ে বাজারে ঢুকে হিমশিম খেতে দেখা যায় সীমিত আয়ের ক্রেতাদের। বাজার কে নিয়ন্ত্রণ করছে বা আদৌ কারও নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা এই প্রশ্ন রেখে কেনাকাটায় কাটছাঁট করে চলে যাচ্ছেন তারা।

কেবল সবজিই নয়, প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে ডিম, মুরগি, মাছের দামও। আর আগে থেকেই উচ্চমূল্যে অবস্থান করছে গরু ও খাসির মাংস। এখন নাগালের মধ্যে নেই আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো পণ্যও।

image_6487327 (7)
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ৪০ টাকা

আকাশচুম্বী সবজির বাজার

আজকের বাজারে প্রায় সব সবজির দামই বেড়েছে বড় অঙ্কে। ভারতীয় টমেটো ১৭০ টাকা, দেশি গাজর ১৪০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ -১৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১৬০ টাকা, শসা ৮০-১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা  ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৬০-১০০ টাকা,  চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি  ১৪০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩২০ টাকা, ধনেপাতা ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।

image_6487327 (6)
বৃষ্টি, বন্যাসহ নানা অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে সবজির দাম

গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনায় গেলে দেখা যায় আজ সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। ৮০ টাকা বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। গত সপ্তাহে এই বাজারে কাঁচা মরিচের সর্বোচ্চ দাম ছিল প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে দাম বেড়েছে ভারতীয় টমেটো, দেশি গাজর, করলা, পেঁপে, মুলা, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া ও লাউয়ের। ২০ টাকা করে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে চিচিঙ্গা, শসা, উচ্ছে, কাঁকরোল, পটল, ধুন্দল, কচুর লতি ও কচুরমুখীর।

ঝিঙার দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা। আর কেজিতে ৪০ টাকা করে দাম বেড়েছে সাদা গোল বেগুন, কালো গোল বেগুন ও বরবটির। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে আগের মতোই।

04-10-24-Polashi Bazar-15
অনেক ক্রেতা দাম শুনে পণ্য না কিনেই ফিরছেন

 

সবজির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, বাজারে বন্যার পরের প্রভাব পড়েছে, তাই দাম বেশি। আমরা মোকামে গিয়ে আগের মতো দাম পাই না। আগে যদি পাঁচ জায়গায় মাল বিক্রি হতো, এখন হয় দুই জায়গায়। ওই দুই জায়গায়ই সব ব্যবসায়ী যায়। এতে তখন মাল নেওয়ার জন্য একেক ব্যবসায়ী একেক দাম বলে। তখনই দামটা বেড়ে যায়। আমরাও বুঝি যে ক্রেতাদের সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু আমাদের আর কী করার আছে? যেরকম কেনা সেভাবেই আমাদের বিক্রি করতে হয়।

বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শেখ সাজিদ আহমেদ বলেন, বাজারে সবজির দাম অনেক বেড়েছে। এই দায় আসলে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও। তারা ঠিকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তারা যদি ঠিকভাবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতো, তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো বলে আমার মনে হয়।

১১২
বারোমাসি সবজির দাম আরও বেশি

বেসরকারি চাকরিজীবী এস এম মুহিদ বলেন, আগের সরকারও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নাই, এই সরকারও পারছে না। তবে এই সরকার এসেছে বেশি দিন হয়নি। তাদের সময় দিলে হয়তো অবস্থা ঠিক হবে। এদিকে নজর দিতে হবে।

বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন মিসেস রায়দা। তিনি বলেন, বাজারের যে অবস্থা তাতে ঢাকা শহরে থাকতে পারবো কিনা চিন্তায় আছি। বাজারে কোনও নিয়ন্ত্রণই নাই। অনেকের কাছে থেকে অনেক আশ্বাস পেয়েছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে, কিন্তু এখনও সবকিছুর অত্যধিক দাম। জানি না এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে কিনা।

image_6487327 (3)
আলু, পেঁয়াজ, রসুনের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল

এদিকে আজকের বাজারে উচ্চ মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও চায়না আদার।আর নতুন আসা ভারতীয় আদা পাওয়া যাচ্ছে কম দামেই। আজ আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ১১০ টাকা ও বড় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা করে। এছাড়া লাল ও সাদা আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা, দেশি রসুন ২৪০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২৮০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০-১৬০ দরে বিক্রি হচ্ছে।

image_6487327
স্বল্প আয়ের মানুষের সামর্থের বাইরে চলে যাচ্ছে ডিম

 

ডিম, ব্রয়লার ও কক মুরগির দাম বাড়ছেই

বিভিন্ন দোকানে মুরগির লাল ডিম ১৬০-১৬৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১৬০ টাকা দরে ডজন বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৯০-১৯৭ টাকা, কক মুরগি ২৪৫-২৫৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০-২৯৫ টাকা, দেশি মুরগি  ৫২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এক সপ্তাহের মধ্যে মুরগির লাল ও  সাদা ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ৫ টাকা করে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২-৭ টাকা। কক মুরগির দাম বেড়েছে ৭ টাকা কেজিতে। এছাড়া প্রতি কেজিতে লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৫-১০ টাকা।

মুরগি
ব্রয়লার ও পাকিস্তানি মুরগির দাম বেড়েই চলেছে

ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, আড়তে ডিমের সংকট, এ কারণে দাম বেড়ে গিয়েছে।

এছাড়া আজ গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি দরে।

04-10-24-Polashi Bazar-22
ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম কমার কোনও লক্ষণ নেই

এছাড়া আজ বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৪০০-২২০০ টাকা কেজি, রুই মাছ ৩৫০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৮০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০-১৬০০ টাকা, কাঁচকি ৬০০ টাকা, কৈ ২০০-৩০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৮০০ টাকা, শিং ৫০০-১২০০ টাকা, টেংরা ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৭০০-১৪০০ টাকা, বোয়াল ৬০০-১২০০ টাকা, কাজলী মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা ৮০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলেন, বাজারে মাছের দাম অত্যধিক। দাম আর কমছে না।

image_6487327 (10)
ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রায় সব ধরনের মাছেরই দাম বেশি

স্থিতিশীল মুদিপণ্যের দাম

এদিকে মুদি দোকানে প্রায় অপরিবর্তিত আছে বেশিরভাগ পণ্যের দাম। আজ ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা,  ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪০ টাকা, মাষকলাই ডাল ২০০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাওর চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওর চাল মানভেদে ১১০- ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

image_6487327 (4)
চাল-ডাল-তেলের দাম প্রায় আগের মতোই আছে

আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের তুলনায় ছোট মুগ ডালের দাম কমেছে ১০ টাকা, খেসারির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ছোলার দাম বেড়েছে ৫ টাকা।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *