সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। এদিকে, সোনা গায়েবের এ ঘটনায় আগে থেকেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলা চলমান রয়েছে। সেখানে সাত হাজার ভরির কিছু বেশি সোনার খোঁজ না পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। মামলায় সোনা প্রকৃত গ্রাহককে না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় খোঁজ না পাওয়া সোনার প্রকৃত পরিমাণ নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।
গত রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমির (বার্ড) ৫৭তম বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, ‘সমবায় দাঁড়াতে পারছে না, কারণ সমবায়ীদের মধ্যে সমবায়ের মনমানসিকতার অভাব। সমবায়ীরা শুধু কমিটিতে ঢুকতে চায়, কী উন্নয়ন হলো সেটির দিকে তাদের লক্ষ্য নেই। তাছাড়া গ্রাহকের রাখা ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১২ হাজার ভরি নয়, প্রায় সাড়ে সাত হাজার ভরি গ্রাহকদের সোনা ব্যাংকটির কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ নিয়ে ২০২১ সালে দুদকের করা একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমবায় ব্যাংকের এই সোনা গায়েবের ঘটনায় অনুসন্ধান শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা ১-এ একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহিসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি করেছিলেন দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক ও বর্তমানে পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম। মামলাটির তদন্তও করেন তিনি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা সমবায় ব্যাংকের দুই হাজার ৩১৬ জন গ্রাহকের জামানত হিসেবে জমা রাখা সাত হাজার ৩৯৮ ভরি ১১ আনা সোনা জমা রাখতে বিদ্যমান আইন-কানুন অনুসরণ করেননি। এসব সোনার বাজার মূল্য ৪০ কোটি আট লাখ ৬০ হাজার ৮৮৮ টাকা। আসামিরা অসাধুভাবে প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে আত্মসাতের জন্য ষড়যন্ত্র করেন। এরমধ্যে ভুয়া ব্যক্তিকে প্রকৃত ব্যক্তি সাজিয়ে ব্যাংকের আসল ও সুদ ২৮ কোটি ৬৮ লাখ ৭২ হাজার ২০২ টাকা পরিশোধ দেখিয়ে ১১ কোটি ৩৯ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৬ টাকার সোনা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সোনা গায়েবের ঘটনায় দায়ের করা দুদকের মামলার আসামিরা হলেন— সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, উপ-মহাব্যবস্থাপক আব্দুল আলিম, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) হেদায়েত কবীর, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (স্বর্ণ বন্ধকী ঋণ বিভাগ), মো. আশফাকুজ্জামান, প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মাহাবুবুল হক, প্রিন্সিপাল অফিসার মো. ওমর ফারুক, সিনিয়র অফিসার (ক্যাশ), নুর মোহাম্মদ, সহকারী অফিসার, গ্রেড-১ আব্দুর রহিম এবং সহকারী অফিসার (গ্রেড-১), নাহিদা আক্তার। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর আটজনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৭-এ চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা, যা এখনও বিচারাধীন।
মামলার ১ নম্বর আসামি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ ওরফে মহির নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়। তার নাম বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিযোগপত্রে বলা হয়, গ্রাহকদের বন্ধকীকৃত স্বর্ণ ফেরত প্রদানের আবেদনপত্রে কোনও স্বাক্ষর বা অনুমোদন জ্ঞাপন করেননি বিধায় তার ওপর বন্ধকীকৃত স্বর্ণ ফেরতের অর্থ আত্মসাতের দায় বর্তায় না। ফলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত না হওয়ায় অত্র মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বলেন, তার সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা জানি না। তবে কাগজে-কলমে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। কিন্তু আলাদাভাবে মহিউদ্দিন আহমেদ মহি ও তার স্ত্রী নূর জাহানের সম্পদ বিবরণী জমা দিতে আদেশ জারি করা হয়েছিল। এরপর তারা সম্পদ বিবরণী দুদকে দাখিল করেন। সেটা এখন যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও অন্য আসামিদের আলাদাভাবে সম্পদ বিবরণী চাওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে দুই জনের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে যা এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।