মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতির কারণে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। সরকারি হিসাবে গত এক মাসে আশ্রয় নিয়েছে ১০ হাজার। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে এই হিসেব ২০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে নতুন অনুপ্রবেশে উদ্বেগ জানিয়েছেন খোদ রোহিঙ্গা নেতারা। আর সচেতন মহল বলছে, এটি দেশের জন্য অশনি সংকেত।
জানা গেছে, গত কয়েক দিনে কাঠের নৌকা করে নাফ নদী ও উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে যাত্রা করেন এসব রোহিঙ্গা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা পৌঁছান মেরিন ড্রাইভের বাহার ছড়া উপকূলে। পরে আশ্রয় হয় বাংলাদেশে বসবাসকারী আত্মীয়দের ঘরে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রবেশ করা এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘প্রথমে আমরা স্বামী-স্ত্রী পার হওয়ার সময় ১২ লাখ টাকা, পরে ৬ সন্তানের জন্য ৬ লাখ টাকা দালালকে দিয়ে আমরা এখানে এসেছি।’
অনুপ্রবেশ করা আরেক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমাদের এদিকে গেলেও মারে, ওদিকে গেলেও মারে। তাই আমরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছি। খুব কষ্ট করে নদীতে ঝাপ দিয়ে আমরা এখানে এসেছি।’
সরকারি হিসেবে গত এক মাসে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলছেন সচেতন মহল। যা দেশের জন্য অশনি সংকেত।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে মিয়ানমার থেকে প্রায় ২০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছেন। মিয়ানমারের মংডুতে আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর লড়াই তীব্র হওয়াতেই সীমান্তের এপারে চলে আসছেন তাঁরা। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) বাধা দিলেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দালালেরা এপারে রোহিঙ্গা নিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কক্সবাজারের সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটা উদ্বেগের বিষয়। এ ধরনের অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে সে জন্য সরকারকে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’
নতুন করে অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন খোদ রোহিঙ্গা নেতারা। অন্যান্য দেশকেও সংকটের সময়ে এগিয়ে আসার আহ্বান তাদের।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সভাপতি ডা. জুবায়ের বলেন, ‘এখন প্রতিদিন যে যেভাবে পারে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে, যা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় পুরো বিশ্বের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে।’
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের দাবি, অর্থের লোভে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উৎসাহিত করছে কিছু দালাল চক্র।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘কিছু দালাল শ্রেণি তৈরি হয়েছে যারা রোহিঙ্গাদের ব্যবসা করছে এবং তাদের এখানে ঢোকার জন্য সহায়তা করছে।’
২০১৭ সালে মিয়ানমারের দমন পীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। সরকারি হিসেবে সব মিলে বর্তমানে সে সংখ্যা ১২ লাখের বেশি।