চট্টগ্রাম নগরে স্কুলছাত্রদের অনেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অভিভাবকদের অগোচরে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। যুক্ত হচ্ছে এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের করা জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য। এর থেকে উত্তরণে সিএমপি বেশকিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে প্রধান সুপারিশ হচ্ছে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা।
চলতি বছরের শুরুতে নগরের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নগর পুলিশের বিশেষ শাখা (সিটিএসবি) এ জরিপ চালায়। এতে ভিত্তি ধরা হয় গত এক বছরের (২০২৩ সাল) উপস্থিতির হার। জরিপ চালানো হয় ৭৮২ জন শিক্ষার্থীর ওপর। তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নবম-দশম শ্রেণিতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি গড়ে ৪৬ শতাংশ। অনুপস্থিত থাকা ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগ ছাত্র, যাদের অনেকে জড়িয়ে পড়েছে অপরাধে।
সিটিএসবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্লাসে উপস্থিত না থাকায় অন্তত ৯ ধরনের নেতিবাচক প্রভাব সমাজে পড়ছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে সহপাঠীর ওপর প্রাধান্য বিস্তার করছে। সহপাঠীকে শায়েস্তা করতে অপরজনও কোনো না কোনো কিশোর গ্যাং অথবা কথিত রাজনৈতিক বড়ভাইয়ের ছত্রছায়ায় যাচ্ছে। ক্লাস চলাকালে শহরের বিভিন্ন পার্ক, রেস্টুরেন্ট, বিনোদন স্পট, ডার্ক রেস্টুরেন্ট, মার্কেট ও সিনেমা হলে তাদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কুলের খেলাধুলা, চিত্রাংকন, আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানে তারা আগ্রহ হারাচ্ছে। এতে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের একটি অংশ সাইবার জগতে সময় দিচ্ছে। অনলাইনভিত্তিক ভিডিও গেমসের নেশায় বুঁদ হচ্ছে। হরর মুভি জুয়ার নেশা পেয়ে বসছে। জন্মদিন, ভ্যালেন্টাইনস ডেসহ বিভিন্ন উপলক্ষ্য সামনে রেখে রেস্টুরেন্ট পার্কে সময় কাটাচ্ছে।
এসব উদযাপন করার নামে বিকৃত সংস্কৃতি চর্চায় জড়িয়ে পড়ছে। সিগারেট-মাদকের পয়সা জোগাড় করতে চুরি, ছিনতাই এমনকি ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ছে অনেক স্কুলছাত্র।
জরিপে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়— নবম, দশম ও একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির মোট ক্লাসের ন্যূনতম ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ না রাখা; যেসব শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার যৌক্তিক কারণে ৭০ শতাংশের নিচে থাকবে তাদের কারণ বিবেচনার জন্য শিক্ষা বোর্ডের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা রাখা; শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তা অভিভাবককে জানানোর জন্য এসএমএস (খুদে বার্তা) চালু ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও শ্রেণিকক্ষে ৭০ শতাংশ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা।
চট্টগ্রাম নগরে ২০০ কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। একেক দলে রয়েছে ৫ থেকে ১৫ জন। নগরজুড়ে তাদের সদস্যসংখ্যা অন্তত ১ হাজার ৪০০। পুলিশ বলছে, কিশোর গ্যাং পৃষ্ঠপোষকতা বা প্রশ্রয় দিচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ৬৪ ‘বড় ভাই’। গত ছয় বছরে ৫৪৮টি অপরাধের ঘটনায় কিশোর গ্যাং জড়িত বলে জানায় পুলিশ। এর মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি।
সিএমপি কমিশনার পদ রায় বলেন, আমরা মনে করছি অপরাধী হয়ে ওঠার আগেই যদি তাদের থামানো যায়, অর্থাৎ ক্লাসে উপস্থিতির একটা মিনিমাম হার নির্ধারণ করে দেওয়া যায় তবে ঝুঁকিটা কমবে। এ দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষাবোর্ডকে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। আইন করে যদি অন্তত ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয় তবে অপরাধ কমবে। রাষ্ট্র উপকৃত হবে।
প্রতিনিধি