রমজান মাসে কাঁচা খেজুর দিয়ে দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। যদি কাঁচা খেজুর না পাওয়া যায়, তাহলে সাধারণ যেকোনও খেজুর দিয়েই ইফতার করা যাবে। তবে এটিও যদি না থাকে, তাহলে পানি দিয়েই রোজা ভাঙা যথেষ্ট। এ বিষয়টি মহানবী (সা.) থেকে সাব্যস্ত।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মহানবী (সা.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬৯৬)
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা, তাতে বরকত রয়েছে।’ (তিরমিজি)
ইফতারে খেজুর খাওয়া কি আবশ্যকীয় সুন্নত?
খেজুর দিয়ে দিয়ে ইফতার করা সুন্নত হলেও এটি আবশ্যকীয় সুন্নত নয়। কারণ রাসুল (সা.)-এর সুন্নত দুই প্রকার।
এক. সুন্নতে মুয়াক্কাদা– যে সু্ন্নতের ওপর রাসুল (সা.) নিয়মিত এমনভাবে আমল করতেন যে তা বিশেষ অপারগতা ব্যতিত কখনও ছাড়তেন না।
দুই. সুন্নতে জায়েদা– যে সুন্নতের ওপর রাসুল (সা.) নিয়মিত আমল করলেও ওজরবিহীন মাঝে-মধ্যে তা ছেড়ে দিতেন।)
অর্থাৎ রাসুল (সা.) কিছু কিছু কাজ করেছেন নবী হিসেবে, তা উম্মতের জন্য পালন করা আবশ্যক। এটিই সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আবার তিনি কিছু কাজ করেছেন মানুষ বা ব্যক্তি হিসেবে, ব্যক্তি হিসেবে তিনি যেসব কাজ করেছেন, তা পালন করা উম্মতের ওপর আবশ্যক নয়, তবে তা মেনে চলা ও অনুসরণে অনেক বরকত ও ফজিলত রয়েছে। এটিই হলো সুন্নতে জায়েদা। ইফতারে খেজুর খাওয়া সুন্নতে জায়েদার অন্তর্ভুক্ত।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাসুল (সা.) সাদা কাপড় পরতে পছন্দ করতেন। সাদা কাপড় তার ব্যক্তিগত পছন্দ ছিল, তাই তিনি পোশাকের ক্ষেত্রে সাদা কাপড় প্রাধান্য দিতেন। শরীয়তের বিধান হিসেবে কখনও তিনি সাদা কাপড় পরেননি। আমরা সাদা কাপড় পরলে বরকত আছে, তবে না পরলে কোনও গুনাহ নেই। ঠিক তেমনি পুষ্টিগুণ এবং তৎকালীন মদিনার প্রধান খাবার হিসেবে রাসুল (সা.) খেজুর খেতেন। শরীয়তের বিধান হিসেবে খেতেন না।
রাসুল (সা.) ইফতারিতে খেজুর খেতেন কেন?
এ প্রসঙ্গে অষ্টম শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদ ইমাম ইবনুল কায়্যিম জাওজিয়্যা (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) এর যথাক্রমে কাঁচা খেজুর কিংবা শুকনো খেজুর অথবা পানি দিয়ে ইফতারি করার মধ্যে খুব সূক্ষ্ম রহস্য ও উপকারিতা রয়েছে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, রোজা রাখলে পাকিস্থলি খালি থাকে। তাই লিভার পাকস্থলীতে এমন কোনও পদার্থ পায় না, যা শোষণ করে সে অঙ্গপ্রত্যঙ্গে শক্তি সরবরাহ করবে। কিন্তু মিষ্টি লিভার পর্যন্ত দ্রুত পৌঁছায় এবং এটি লিভারের সহায়কও বটে।
ইবনুল কায়্যিম বলেন, বিশেষত, মিষ্টিটা যদি হয় তাজা খেজুর, তাহলে সেটি খুব দ্রুত লিভার দ্বারা শোষিত হয়। এতে লিভারেরও উপকার হয় এবং একইসঙ্গে শরীর মুহূর্তেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, শুকনো খেজুরের চেয়ে কাঁচা খেজুর আগে হজম হয় এবং সেটি তুলনামূলক বেশি মিষ্টি ও পুষ্টিকর, এজন্য শুকনো খেজুরের আগে কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতারি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু যদি কোনও খেজুরই না থাকে, তাহলে পানি পানের কথা এসেছে। কারণ, পানি পানে পেটের উত্তাপ দূর হয়। অতঃপর পাকস্থলি খাদ্য হজমের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে ওঠে। (যাদুল মাআদ, পৃষ্ঠা : ৪/২৮৭)
ইফতারে কয়টি খেজুর খেতে হয়?
হজরত আনাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত আছে যে- ‘রাসুল (সা.) তিনটি খেজুর খেয়ে রমজানে ইফতার করতে পছন্দ করতেন। অথবা এমন খাদ্য দিয়ে, যা আগুনে রান্না করা হয়নি।’ তবে হজরত আলবানি (রহ.) এই হাদিসটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। (সিলসিলাতুদ দয়িফাহ, পৃষ্ঠা : ৯৬৬)
শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহ.) বলেন, বেজোড় সংখ্যক খেজুর দিয়ে ইফতার করা ওয়াজিব নয়। এমনকি এটিও সুন্নত নয় যে- ইফতারিতে তিন, পাঁচ, সাতটি খেজুর খেতে হবে। তবে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে আল্লাহর রাসুল (সা.) বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (ফাতাওয়ায়ে নুর আলি আদ-দারব, পৃষ্ঠা : ২/১১)
বার্তা বিভাগ প্রধান