Home » শীতের প্রকোপ কমেনি, তার মাঝে বৃষ্টির শঙ্কা

শীতের প্রকোপ কমেনি, তার মাঝে বৃষ্টির শঙ্কা

মাঘের শীতে বাঘ পালায় প্রবাদ বাক্যটির যথার্থতা প্রমাণে মরিয়া প্রকৃতি। এবছর মাঘ আসার আগে থেকেই তীব্র শীতে কাঁপছে দেশ। শীতের প্রকোপে ভোগান্তিতে পড়েছেন ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষ, যা এখন চরম আকার ধারণ করেছে। শীতজনিত রোগের প্রকোপও বেড়ে গেছে। সূর্যের দেখা নেই বেশ কদিন ধরেই, কুয়াশায় আকাশ ঢাকা থাকছে সারা দিনই। সেইসঙ্গে আরও ভয় ধরানোর খবরই জানালো আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সংস্থাটি জানিয়েছে, পুরো জানুয়ারি মাসজুড়েই এমন আবহাওয়া থাকতে পারে। এমনকি আগামীকাল বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দেশের বিভিন্নস্থানে হালকা বা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, এই বৃষ্টির কারণে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। তবে সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ১৮ জানুয়ারি রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে হালকা বৃষ্টি বা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।

তিনি বলেন, বৃষ্টির পর আকাশ পরিষ্কার হলে আবার তাপমাত্রা কিছুটা কমে যাবে। কুয়াশার অবস্থা প্রায় একই থাকবে বলে তিনি জানান।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকাল ছিল বরিশালে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ঢাকার ১৪ দশমিক ৮ থেকে ১ ডিগ্রি কমে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রিতে নেমেছে। এদিকে ১২ ডিগ্রির নিচে থাকা অঞ্চলগুলো হচ্ছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১০; বান্দরবানে ১০ দশমিক ২; নওগাঁর বদলগাছীতে ১০ দশমিক ৩; বগুড়ায় ১০ দশমিক ৪; তেঁতুলিয়ায় ১০ দশমিক ৭; বরিশালে ১০ দশমিক ৮; ভোলা, নীলফামারীর ডিমলা ও কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১১, খুলনায় ১১ দশমিক ৩, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও দিনাজপুরে ১১ দশমিক ৪, রাঙামাটিতে ১১ দশমিক ৫; নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ৬; চট্টগ্রামে ১১ দশমিক ৭; রংপুর, রাজশাহী ও গোপালগঞ্জে ১১ দশমিক ৮; কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও পাবনার ঈশ্বরদীতে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

কুয়াশার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও বুধবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

তবে সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতর।

দেশব্যাপী তীব্র শীতে বেড়েছে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ। রাজধানী শিশু হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল থেকে ছবি তুলেছেন নাসিরুল ইসলাম।
এদিকে শীতের তীব্রতায় বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। বাংলা ট্রিবিউনের রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, রবিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪৬ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৩৮০ রোগী। এই ওয়ার্ডে ২০০ শয্যার বিপরীতে এসব রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. নাদিম সরকার জানান, শীত বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। হাসপাতালে শিশু ও ডায়রিয়া বিভাগে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। গত ১ সপ্তাহে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে প্রায় ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি। এছাড়াও অনেকে বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে।

মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ধূমপানজনিত কিংবা মাটির চুলার কারণে যারা অসুস্থ তারাই এ সময় হাসপাতালগুলোতে বেশি ভর্তি হয়ে থাকেন। ঠান্ডাজনিত রোগের মধ্যে এটিও অন্যতম। তাই তাদের এ সময় আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘শীতের সময় সাধারণত নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, অ্যাজমা জাতীয় অসুখগুলো বেড়ে যায়। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ে। এর বাইরে তীব্র শীতে হার্টঅ্যাটাকের ঘটনাও বাড়ছে। এজন্য যাদের হার্টের সমস্যা আছে, তাদের ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল না করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। এদিকে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে অনেকেই এই সময় আগুন পোহায়। অসাবধানতায় সেই আগুনে পুড়ে যাচ্ছে অনেকেই। আবার অনেকে শীতের কারণে গোসল না করায় চর্মরোগ বেড়ে যাচ্ছে।‘

তিনি বলেন, ‘শীত বেশি হলে শিশু, বৃদ্ধ এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীরা যাতে করে প্রয়োজন ছাড়া বের না হন, সে বিষয়টি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। যদি বের হতেই হয়, তাহলে যেন পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র পরে বের হন।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *