Home » মেয়েদের ক্রিকেট এত বৈষম্যের শিকার কেন

মেয়েদের ক্রিকেট এত বৈষম্যের শিকার কেন

ডেস্ক নিউজ: বিসিবি এশিয়ার অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ড। ক্রিকেট ছাড়াও বেশ কয়েকটি ফেডারেশনকে আর্থিক সাহায্য করে বিসিবি। অথচ নারী ক্রিকেটারদের যথেষ্ট পারিশ্রমিক দিতে কেন জানি গড়িমসি তাদের! মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে স্পন্সরদের আগ্রহ কমই থাকে। শুধু বাংলাদেশে নয়, পুরো ক্রিকেট দুনিয়ার ক্ষেত্রে এটা বাস্তবতা। তাই অনেক দেশেই মেয়েদের ক্রিকেটে ভর্তুকি দিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট বোর্ড।  এশিয়া কাপ জয়ী সালমার দলের জন্য দুই কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। প্রত্যেক ক্রিকেটার পাবেন ১০ লাখ টাকা। তবে ছেলেদের তুলনা টাকার অঙ্কটা কমই বলা যায়। গত বছর শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজে ড্র করেই এক কোটি টাকার পুরস্কার পেয়েছিলেন মুশফিক-সাকিবরা। ছয় কোটি টাকা পেয়েছিলেন ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে একটি টেস্ট হারিয়েই। মার্চে শ্রীলঙ্কার নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে উঠে মিলেছিল এক কোটি টাকা। ছেলেদের মতো মেয়েরাও ‍উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দিচ্ছেন দেশে। তবু তারা পিছিয়ে কেন? কেন এশিয়া কাপ জয়ের পরদিন পুরস্কারের ঘোষণা এসেছে? ছেলেদের ক্ষেত্রে তো সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গেই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। জানতে চাইলে বিসিবির একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য সেভাবে বাজেট নেই। আমরা তাই হুট করে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। ভবিষ্যতে মেয়েদের জন্য বড় বাজেট রাখা হবে। এই মেয়েরা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। তাদের নিয়ে তো আমাদেরই ভাবতে হবে।’ ছেলেদের তুলনায় পুরস্কারের টাকা কি কিছুটা কম হলো? এমন প্রশ্নে বেশ বিরক্তই হলেন তিনি, ‘কী বলেন! যারা আগে তেমন কিছুই পায়নি তারা এখন প্রত্যেকে ১০ লাখ টাকা করে পাচ্ছে। এটা কম হলো! ছেলেদের সঙ্গে তুলনা করে লাভ নেই। সব কিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমরা এই টাকার ব্যবস্থা করেছি।’ সাবেক ক্রিকেটার সাথিরা জাকির জেসি অবশ্য আশাবাদী। তার আশা, পরিস্থিতির উন্নতি হবে শিগগিরই। তিনি বলেছেন, ‘মেয়েদের ক্রিকেটে স্পন্সরশিপ থেকে কিছুই পাওয়া যায় না, যে কারণে ফান্ডও থাকে না। হুট করে তাই পুরস্কার ঘোষণা করা কঠিন। মনে হয় এজন্য পুরস্কার ঘোষণা করতে বোর্ড মিটিং ডাকতে হয়েছে। হয়তো ভবিষ্যতে এই ধারা পরিবর্তন হবে, মেয়েরা নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে পারবে।’ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটি মেয়েকে একটি ছেলের চেয়ে অনেক বাধার সামনে পড়তে হয়। ক্রিকেটও এর ব্যতিক্রম নয়। অনেক প্রতিকূল পথ পেরিয়ে সালমা-রুমানা-জাহানারাদের মাথায় আজ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। অথচ কত বাধার পাহাড়ই না পেরোতে হয় তাদের! আন্তর্জাতিক তো দূরের কথা, ঘরোয়া ক্রিকেটেই খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় না মেয়েদের, মাঠ সঙ্কটের কারণে বসে থাকতে হয় মাসের পর মাস। পুরস্কারের মতো বেতনের ক্ষেত্রেও তারা বৈষম্যের শিকার। ছেলেদের বেতন নিয়মিত বাড়লেও মেয়েদের বেতন বাড়ে না। এমনকি এনিয়ে প্রস্তাবও ওঠে না বোর্ড মিটিংয়ে। ম্যাচ ফি’র ক্ষেত্রেও বিরাট বৈষম্য। গত বছর জাতীয় লিগে মাত্র ৬০০ টাকা ম্যাচ ফি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল ক্রীড়াঙ্গনে। তবু বাড়েনি ম্যাচ ফি। পুরুষ ক্রিকেটাররা সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে শুরু করে চার লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পাচ্ছেন এখন। অথচ নারী ক্রিকেটাররা তিন ক্যাটাগরিতে বেতন পান ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা।  ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে পার্থক্যটা রীতিমতো দৃষ্টিকটু। ছেলেদের ম্যাচ ফি ৩০ হাজারের বিপরীতে মেয়েদের মাত্র ৬০০ টাকা!  আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও একই অবস্থা। ওয়ানডেতে ছেলেদের দুই লাখ টাকা ম্যাচ ফি’র বিপরীতে মেয়েদের ৮ হাজার টাকা। টি-টোয়েন্টি খেললে ছেলেরা পায় এক লাখ ২৫ হাজার, আর মেয়েদের সন্তুষ্ট থাকতে হয় ছয় হাজার টাকা নিয়ে। পারিশ্রমিকে এত ব্যবধান কেন? বিসিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পরিচালক বলেছেন, ‘পারিশ্রমিকের এ বৈষম্য সহজে দূর করা সম্ভব নয়। এজন্য যথেষ্ট সময় প্রয়োজন। একটা সময় এদেশে মেয়েদের ঘরোয়া ক্রিকেট বলতে কিছু ছিল না। এখন আন্তর্জাতিক সিরিজের পাশাপাশি ঘরোয়া টুর্নামেন্টও তারা খেলেছে। আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে আমরা মেয়েদের সব ধরনের সুবিধা দিতে পারবো।’ অনেক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে নারী ক্রিকেটাররা এশিয়া কাপের শিরোপা উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশকে। মেয়েরা যে ছেলেদের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কম পাচ্ছেন, বোর্ড কর্মকর্তাদেরও সেই উপলব্ধি হচ্ছে।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *