দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। আগামী ৭ জানুয়ারি সারা দেশে অনুষ্ঠিত হবে ভোট। ভোটের আমেজ এখন সবখানে। ভোট সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলোও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পুলিশের পাশাপাশি ইতোমধ্যে সেনা ও নৌ বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আনসারসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভোটের মাঠে অবস্থান নিয়েছে।
পুলিশ এরইমধ্যে সারা দেশের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোর তালিকা তৈরি করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে। ৪২ হাজার ১৪৯ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০ হাজার কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ৩০০ কেন্দ্রকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা। পুলিশ সদর দফতর সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্রগুলোকেও মূলত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পুলিশ ও গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ১০ হাজার কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ৩০০ ভোটকেন্দ্রকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে সে তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি করে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে কঠোর নিরাপত্তায় নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী রাখারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৭ সদস্যের একটি নিরাপত্তা দল মোতায়েন থাকবে। যাদের মধ্যে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন। এর বাইরে বিজিবি, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), সেনাবাহিনী ও উপকূলীয় এলাকায় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। প্রয়োজন হলে বেসামরিক প্রশাসনকে তারা সহায়তা করবেন।
ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে থাকা ভোটকেন্দ্রের ৭০ থেকে ৮০ ভাগই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে সতন্ত্র ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা তাদের। যে কারণে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে পুলিশ। প্রয়োজনে বিজিবি ও সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নেবে তারা।
এদিকে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় আইন শৃঙ্খলা মনিটরিং সেলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রতিনিধিকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। যে বৈঠকে সারাদেশের ৬৬টি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা, ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় এবং ৬৪টি জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের জুমে সংযুক্ত থাকতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিকল্পনা সাজিয়েছে পুলিশ। ভোটার ও প্রার্থী ছাড়াও ভোটের কাজে নিয়োজিত সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২ লাখ ১২ হাজার পুলিশ বাহিনীর প্রায় পৌনে ২ লাখ সদস্য মাঠে থাকবেন। সব ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করেই পুলিশ কাজ করবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ এ সংক্রান্ত সব কাজে সহায়তা দিতে কাজ করবেন।
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর এলাকায় কমপক্ষে ২৪ হাজার পুলিশ সদস্য ভোটের মাঠে কাজ করবেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সোমবার (১ জানুয়ারি) এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনও নাশকতা কিংবা জঙ্গি হুমকি নেই। তবে সবকিছু মাথায় রেখেই নিরাপত্তা বলয় সাজানো হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ২ হাজার ১৪৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেকই গুরুত্বপূর্ণ কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এক্ষেত্রে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ঢাকার অর্ধেক কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কোনও সমস্যা হবে না। সেসব মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
বার্তা বিভাগ প্রধান