দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৩ দিনের জন্য মাঠে থাকবে সশস্ত্র বাহিনী। তারা ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সোমবার রাতে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের মধ্যে বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের পর সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
পিএসও ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘প্রারম্ভিক আলোচনা ছিল। সেখানে কমিশন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনে উনারা সশস্ত্র বাহিনী চাচ্ছেন। কীভাবে মোতায়েন হবে, কোথায় কোথায় কীভাবে কাজ করবে ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের জন্য কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ করবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি যদি সিদ্ধান্ত নেন যে সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনে মোতায়েন হবে, তাহলে অবশ্যই হবে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করেছি—তারা যেভাবে চান, সেভাবেই আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।’
ইসির সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আলোচনা করে আমার মনে হয়েছে—উনারা চাচ্ছেন একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হোক। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হোক। এ ব্যাপারে আমার সামান্যতম কোনও সন্দেহ নেই। উনারা ভেরি সিরিয়াস একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার ব্যাপারে। আমরা সশস্ত্র বাহিনী যদি ডেপ্লয় হই, রাষ্ট্রপতি যদি আমাদের নির্দেশ দেন—তবে অবশ্যই আমরা মোতায়েন হবো এবং কমিশনকে সর্বাত্মক সাহায্য-সহায়তা করবো। যেন একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়।’
অতীতেও সশস্ত্র বাহিনীকে যেভাবে মোতায়েন করা হয়েছে, এবারও সেভাবে হবে বলে উল্লেখ করেন পিএসও। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি—এই ১৩ দিনের জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যাতে হয়, তার জন্য কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। আমরা কমিশনকে আশ্বস্ত করেছি, যে ধরনের সহায়তা চাওয়া হয়, সশস্ত্র বাহিনীর তরফ থেকে সেটা করা হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কিনা, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।’ সেনাবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা (ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার) থাকবে কিনা, তা নিয়েও বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি।
কী পরিমাণ সেনা সদস্য থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে লে. জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘গতবার ৩৫ হাজারের মতো ছিল। এবার যদি বেশি প্রয়োজন হয় আমরা সেটা করবো। গতবার ৩৮৮টি উপজেলায় সশস্ত্র বাহিনী এবং ৮৭টি উপজেলায় বিজিবি ছিল।’
এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি উল্লেখ করে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, ‘আজকে প্রারম্ভিক আলোচনা হয়েছে। যদি কমিশন নিয়োজিত করে, রাষ্ট্রপতি যদি সদয় সম্মতি জানান, তাহলে এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। তখন এটা বলা যাবে। পূর্ব প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। নীতিগতভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করবে বলে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। পিএসও মহোদয় স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, কমিশন যেভাবে চাইবে, তারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করবে।’
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে ও পরে মিলিয়ে ১০ দিন বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। নির্বাচনি এলাকাগুলোতে ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখা হয়।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
বার্তা বিভাগ প্রধান