সুজন আহম্মেদ, রংপুর: এ যেন প্রকৃতির ক্যানভাস! সবুজের গালিচায় মিশে আছে বেগুনি রঙের সমাহার। দূর থেকে সেই বেগুনি রঙ দ্রুতই চোখে পড়ে। তখন জাগে বিস্ময়! কেননা, সেখানে সমস্তই সবুজ। অন্য রঙের কোনো বংশ পর্যন্ত নেই। তাহলে বেগুনি এলো কোথা থেকে? এমন প্রশ্ন তখন স্বভাবতই জাগে মনে!
তবে এটি শুধু রঙ নয়। এক প্রকারের বেগুনি রঙের ধান। আসন্ন বৈশাখ মাস ঘিরে কৃষকের স্বপ্নকে জড়িয়ে বড় হচ্ছে এই ধানগুলো। চারপাশে সবুজ প্রান্তর। মাঝখানে বেগুনি রঙের ধানক্ষেত। যে কারো প্রথম দর্শনে ধান ভাবতে অবাক লাগবে। চারদিকে বিস্তৃত সবুজ ধান ক্ষেতের মধ্যে বেগুনি রঙের ধান গাছ দেখে অনেকেই অবাক হচ্ছেন।
নীলফামারী জেলায় প্রথমবারের মতো বেগুনি ধান চাষ করছেন সৈয়দপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড নিয়ামতপুর দেওয়ানিপাড়া গ্রামের কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম বাবু এই ধানের চাষি। অনেকেই এই ব্যতিক্রমী ধানের সাথে পরিচিত নন। দেখা বা এই ধান সম্পর্কে জানার সুযোগও হয়নি কখনো।
সবুজের সমাহারে বেগুনি রঙের
অপ্রচলিত এই ধান আবাদের ফলে ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে স্থানীয়দের মাঝে। কৃষকসহ নানান দর্শনার্থী প্রায় প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় করছেন বেগুনি ধান দেখার জন্য। আশপাশের অনেক মানুষ আসছেন তাদের ধান ক্ষেত দেখতে।
সরেজমিনে তার বেগুনি ধান ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে আমন ধান। মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে শিষসহ ধানগাছ গুলো। দূর থেকে মনে হয় ঢেউ খেলছে। বিস্তীর্ণ সবুজের মধ্যে শোভা পাচ্ছে বেগুনি রঙের ধান ক্ষেত। এই বেগুনি রং প্রকৃতিতে এনেছে নতুনমাত্রা।
কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম বাবু জানালেন, এই ধান নাকি ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য উপকারী। নেত্রকোনায় বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বন্ধুকে বেগুনি রংয়ের ধান চাষ করতে দেখে মুগ্ধ হয়ে এ ধান সংগ্রহ করি।
তিনি আরো জানান, জমিতে বীজ রোপণের পর সার দেয়াসহ নিয়মিতভাবে পরিচর্যা করতে হচ্ছে। দ্রুত ফলন দেওয়ায় এই জাতের ধানে রোগ বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। গাছ শক্ত হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টিতেও হেলে পড়ার সম্ভাবনা কম। এই ধানে ফলন বেশি পাওয়ার আশা করছি।
আগামী বৈশাখ মাসে পাকবে এ ধান। তখন কাটা শুরু করবো। যদি ফলন ভালো হয় তবে আগামীতে আরো বেশি জমিতে এই ধানের চাষ করবেন বলে জানান কৃষক শফিকুল ইসলাম বাবু
২৫ শতকের জমিতে এ ধান রোপন করেন তিনি। রোপণ থেকে ধান পাকতে সময় লাগে ১৪০-১৫০ দিন। অন্য জাতের ধানের চেয়ে এ ধানের গোছা প্রতি কুশির পরিমাণ বেশি থাকায় একর প্রতি ফলনও বেশ ভালো। একর প্রতি ফলন ৫৫ থেকে ৬০ মণ হয়ে থাকে। অন্য সব ধানের তুলনায় এ ধান মোটা, তবে পুষ্টিগুণ অনেক। এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু।
নির্বাহী সম্পাদক