Home » সকালে যে চিকিৎসক ‘ফ্রি’ বিকেলে লাগবে ৫০০ টাকা

সকালে যে চিকিৎসক ‘ফ্রি’ বিকেলে লাগবে ৫০০ টাকা

 

৩০ মার্চ থেকে সরকারি হাসপাতালেই বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা শুরু হবে। যেখানে ২০০ থেকে ৫০০ টাকার বিনিময়ে ফিস দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ও সেবা নিতে পারবেন রোগীরা। অর্থাৎ বেলা ৩টা থেকে সরকারি হাসপাতালে চলবে বেসরকারি কার্যক্রম। সোমবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত জানান।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে করে সরকারি চিকিৎসা-ব্যবস্থায় বাড়তি ফিস আদায়ের মাধ্যমে সেটাকে বেসরকারীকরণ করা হবে। এতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অতিরিক্ত আয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়বেন। ফলে দৈনন্দিন স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হবে। শেষ পর্যন্ত সরকারি বিনা মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা টাকা দিয়ে কিনতে জনগণ বাধ্য হবে।

জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট ব্যবসা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সরকারি হাসপাতাল চলে জনগণের টাকায়। সেখানে কোনোভাবেই টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা চলতে পারে না। সেবার মান বাড়াতে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম দুই শিফটে করা যেতে পারে।’

মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ১০টি জেলা ও ২০টি উপজেলা হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবার পাইলটিং শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো ঠিক হয়নি কোন জেলা ও উপজেলায় এই কার্যক্রম শুরু করা হবে।

গতকালের সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সভায় ৮টি জেলা ও ১৬ উপজেলার বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু এখনো পাইলটিং হবে এমন জেলা-উপজেলার তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি। তা ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে প্রস্তুতির দরকার। ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নীতিমালা-২০২৩ চূড়ান্ত করা হলেও এখনো এর সেবামূল্য আদায় ও ব্যয় বিভাজনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের সম্মতি নেওয়া হয়নি। এমনকি হাসপাতালের ক্যাটাগরিভিত্তিক স্ট্যান্ডার্ড অপারেশনাল প্ল্যান (এসএপি) প্রস্তুতের জন্য হাসপাতালগুলোতে কোনো চিঠিও দেওয়া হয়নি।

সোমবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নীতিমালা-২০২৩ চূড়ান্তকরণ সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসকেরা বিনা মূল্যে রোগী দেখেন। বিকেলে বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে না পেরে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে যান। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ‘ফি’ বেশি হওয়ায় দেশের মানুষের চিকিৎসাব্যয় বাড়ে। এ জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ৩০ মার্চ থেকে পাইলটিং প্রক্রিয়ায় দেশের ১০টি জেলা ও ২০টি উপজেলা হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসকেরা বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সম্মানীর মাধ্যমে চিকিৎসা দেবেন। এর সঙ্গে একই সময়ে বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা যাবে।

মন্ত্রী আরও জানান, এসব বিষয় নিয়ে দেশের চিকিৎসকনেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা হয়েছে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। সব মিলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে বৈকালিক ইনস্টিউশনাল প্র্যাকটিস আপাতত ছোট আকারে শুরু করা হচ্ছে। এই কাজের সুফল দেখে দ্রুতই দেশের সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে চালু করা হবে।

চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানী নির্ধারণ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, অধ্যাপক পর্যায়ে ফি ৪০০ টাকা তাঁর সঙ্গে সহযোগী দুজন পাবে ৫০ টাকা করে। সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কনসালট্যান্ট পাবেন ৩০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালট্যান্ট বা সমপর্যায়ের চিকিৎসকগণ পাবেন ২০০ টাকা করে, যাঁদের সহযোগী দুজন পাবেন ৫০ টাকা করে। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় ছোট অস্ত্রোপচারের জন্য ৮০০ টাকা, সিজারের ক্ষেত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা চার্জ ধরা হয়েছে। এর পাশাপাশি হাসপাতালে রোগীদের সার্জারি, ডায়াগনস্টিক/ক্লিনিক্যাল/প্যারা-ক্লিনিক্যাল টেস্টসহ বিভিন্ন রকম পরীক্ষার জন্যও বৈকালিক ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। একজন চিকিৎসককে সপ্তাহে দুই দিন ৩ ঘণ্টা করে সেবা দিতে হবে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। তা ছাড়া এত স্বল্প সময়ে এটা করা সম্ভব হবে না। এত তাড়াহুড়ো করে কেন এটা করা হচ্ছে তা-ই বোধগম্য নয়।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *