আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান।বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। সাফল্য গাঁথা এই কর্মময় জীবন কুসমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকাপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস থেকেছেন গৃহবন্দি। সামরিক শাসনামলেও বেশ কয়েকবার কারানির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বারবার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২০ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে জন্মদিনে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় সভাপতির জন্মদিন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। দিনটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, চরম সংকটে দলের হাল ধরেছিলেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা আর দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তার নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। দূরদর্শী ভূমিকায় করোনা সংকট সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে বাংলাদেশ। করোনাসহ সব দুর্যোগেও সচল রেখেছেন দেশের অগ্রযাত্রা। তার সময়োপযোগী নেতৃত্ব দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্ব দরবারেও। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেও আগেই নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, যারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশকে নেতৃত্ব দেন তাদের সংকট ও সম্ভাবনা দুটোকেই সমন্বয় করতে হয়। সংকটে যোগ্য নেতৃত্ব দেওয়া এবং সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাওয়া এর সব যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা সবকিছুই শেখ হাসিনার রয়েছে। ১৯৮১ থেকে ২০২২ দীর্ঘ সময়, তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং সরকারপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যখন যেখানেই দায়িত্ব পালন করেন না কেন তার মূল লক্ষ্য কিন্তু জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। আমার মনে হয়-তিনি যথাযথভাবেই কাজটি করে চলেছেন।
তিনি আরও বলেন, তার এই পথ চলায় মাঝে মাঝে সংকট এসেছে। বড় ধরনের সংকটও এসেছে। তিনি সব সংকট কাটিয়ে দেশকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছেন। যে বাংলাদেশকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে পারি। যে বাংলাদেশে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়। যে দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পায়। আমরা প্রত্যাশা করি-শেখ হাসিনা সাড়ে ১৬ কোটি মানুষকে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবেন। সেই লক্ষ্যে তার পরিকল্পনাও রয়েছে। রূপকল্প-২০৪১ এবং ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছেন। এই পরিকল্পনামাফিক আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে সৎ, যোগ্য ও সাহসী নেতার নাম শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা নিজের ভাগ্য ও সুখের জন্য রাজনীতি করেন না। তিনি রাজনীতি করেন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে, পিতা মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়নে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা দক্ষতা, সততা, সাহসিকতা, দেশপ্রেম এবং সংকটে তার নেতৃত্ব অনন্য। তাকে বলা হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। সংকট মোকাবিলায় তিনি বিশ্বের এক নম্বর প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যে কোনো সংকটে বাঙালির আশার বাতিঘর।
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের সামনে দুর্যোগের সংকটপূর্ণ সময়ে সমাধানের সূত্র তুলে ধরেছেন। যুদ্ধ, অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার প্রভাব এবং স্বার্থগত সংঘাতকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবমুক্তির প্রধান অন্তরায় হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পালটা-নিষেধাজ্ঞার বৈরিপন্থা পরিহার করে আলাপ-আলোচনার তাগাদা দিয়েছেন। তিনি সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তি করে শান্তিপূর্ণ ও টেকসই পৃথিবী গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা তার ভাষণে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের আহ্বান জানান।
শুধু বর্তমান সংকট সমাধানের বার্তাই নয় বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী প্রতিষ্ঠার দিকনির্দেশনা থাকায় বঙ্গবন্ধুকন্যার এ ভাষণে বিশ্বসভায় বাংলাদেশের জনগণের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করছে। ২০০৯ থেকে গত এক যুগে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় যুক্ত হয়েছে অজস্র সাফল্য-স্মারক। অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে সব প্রতিবন্ধকতা সমস্যা-সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, ছিটমহল বিনিময়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয় হয়েছে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন যুগে প্রবেশ করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতুর পাশাপাশি, মহাসড়কগুলো ফোরলেনে উন্নীত হয়েছে। এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে। মাথাপিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৪ বছর ৪ মাসে উন্নীত হয়েছে। যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশে উন্নীত করেছেন। বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত ও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বির্নিমাণে শেখ হাসিনা ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তথা রূপকল্প-২০৪১’ ঘোষণা করেছেন। বাস্তবায়নে কাজও করে যাচ্ছে তার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। এছাড়াও আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, কল্যাণকর ও নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জলবায়ু সহিষ্ণু ব-দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে।
একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং সংকটে যোগ্য নেতা হিসাবে শেখ হাসিনার অবদান আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পদক, পুরস্কার আর স্বীকৃতিতে। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ় মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে।
প্রতিনিধি