Home » সিলেটে হাসপাতাল-ক্লিনিকে অক্সিজেনের তীব্র সংকট

সিলেটে হাসপাতাল-ক্লিনিকে অক্সিজেনের তীব্র সংকট

শুক্রবার দিনগত মধ্যরাতে হঠাৎ অক্সিজেন সংকট দেখা দেয় সিলেটের সুবহানীঘাটের কমিউনিটি বেইজড ক্লিনিকে। রাস্তায় যানজটে গাড়ি আটকে থাকায় সময়মতো অক্সিজেন আসেনি সিলেটে। এ কারণে অক্সিজেন সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এ ক্লিনিকে যথাসময়ে সিলিন্ডার পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। রাতে অক্সিজেন সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। ক্লিনিকটিতে ভর্তি সংকটাপন্ন রোগীদের নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন স্বজনরা। সকাল পর্যন্ত প্রায় ৪ ঘণ্টা ওই হাসপাতালে রোগী এবং তাদের স্বজনরা ছিলেন তীব্র আতঙ্কে। এর মধ্যে প্রায় ১১ জন আইসিইউসহ অক্সিজেন সাপোর্টে থাকা রোগী নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপও করেন। কেউ কেউ চলে যান বাড়িতেও।

এভাবে শুধু কমিউনিটি বেইজড ক্লিনিকই নয়, সিলেটের প্রায় প্রত্যেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে একই চিত্র। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ অসহায় বলে দাবি করছেন তারা। কয়েকটি কারণে সিলেটে এমন অক্সিজেন সংকট তৈরি হয়েছে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অক্সিজেন সরবরাহকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সারা দেশে বেড়েছে করোনা ও উপসর্গযুক্ত রোগী। বেশিরভাগ হাসপাতালে বেড খালি নেই। আগের তুলনায় সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসাপতালগুলোতে অক্সিজেন লাগছে অন্তত ৫ গুণ বেশি। এ অবস্থায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান আবুল খয়ের উৎপাদন করছে আগরে মতোই সীমিত আকারে। এছাড়াও আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে সিলেট-ঢাকা যাতায়াতের সকল সড়কেই রয়েছে তীব্র যানজট। যে কারণে সময়মতো সিলেট পৌঁছতে পারছে না অক্সিজেনের গাড়ি। সব মিলিয়ে গত ৫ দিন থেকে সিলেটে চলছে অক্সিজেন সংকট। এ সংকট তীব্র রূপ নিয়েছে এখন। সংকটটি দ্রুত কাটিয়ে ওঠারও কোনো উপায় দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।

সুবহানীঘাটের কমিউনিটি বেইজড ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক মুরশেদুর রহমান শনিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে বলেন, ‘একটু আগেও আমাদের অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্প্রেক্টার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের এই মুহুর্তে চাহিদা ৬০টি সিলিন্ডার। কিন্তু আমাদেরকে তারা দিতে পারবেন মাত্র ২৫টি। এগুলো দিয়ে আমরা রোগীদের আজ রাত পর্যন্ত সেবা দিতে পারবো। এরপর আমরা অসহায়। নতুন সরবরাহ না পেলে রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিতে পারবো না।’

অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘স্প্রেক্টা’র সিলেটের ডিস্ট্রিবিউটর মাসুদ আহমদ শনিবার বিকেলে বলেন, ‘আসলে বিভিন্ন কারণে সিলেটে সময় ও চাহিদামতো অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রথমত সারা দেশে ব্যাপকহারে বেড়েছে অক্সিজেনের চাহিদা। করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গযুক্ত রোগী হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় এ চাহিদা বেড়েছে। এতে মানুষের কোনো হাত নেই। দ্বিতীয়ত: অক্সিজেনের বড় সাপ্লাই পাই আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। এ ক্ষেত্রে বেনাপোল থেকে গাড়ি এসে অক্সিজেন রিলিফ (সরবরাহ) করে দিয়ে যায়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারেণ সাম্প্রতিক সময়ে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা পর সিলেটে আসছে অক্সিজেনবাহী গাড়ি। হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়ায় অক্সিজেন দ্রুত ফুরিয়ে যায়। যে কারণে সংকটটি প্রকট হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, ঈদ উপলক্ষে সিলেট-ঢাকা যাতায়াতের সবকটি সড়কেই দিনরাত যানজট লেগে আছে। তাই অক্সিজের গাড়িও আসতে বিলম্ব হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ সংকট তৈরি হয়েছে। যদি রোগীর সংখ্যা না কমে তবে এ সংকট দ্রুত কাটিয়ে ওঠারও কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালীন সময়ে সিলেটে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। আগে যেখানে প্রতিদিন ৫ হাজার কিউবিক মিটার অক্সিজেনের চাহিদা ছিলো সিলেটে, এখন সেটি বেড়ে প্রায় ২৫ হাজার কিউবিক মিটারে দাঁড়িয়েছে। সিলেটে অক্সিজেন সাপ্লাই দেয় লিন্ডা, স্প্রেক্ট্রা ও ইসলাম নামের ৩টি কোম্পানি। এর মধ্যে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করছে লিন্ডা এবং স্প্রেক্ট্রা। আর শামসুদ্দিন হাসপাতালে অক্সিজেন দিচ্ছে স্প্রেক্ট্রা কোম্পানি।

অপরদিকে, সিলিন্ডারে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়েও সংকট তৈরি হচ্ছে। ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রায় ৫ গুণ সিলিন্ডারের চাহিদা বেড়েছে সিলেটে। অক্সিজেন সরবরাহী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে হঠাৎ করে সিলিন্ডার বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সিলিন্ডার সংগ্রহ করার তাগিদ দিচ্ছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সিলিন্ডার সংগ্রহ করতে পারছে না।

সিলেটে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডের এজেন্ট মো. আলী হোসেন বলেন- ‘অক্সিজেনের গাড়ি সময়মতো সিলেটে আসা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। পাশাপাশি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের সিলিন্ডার দিয়ে এখন সিলেটের সব হাসপাতালে চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। আমরা সাধ্যমতো অক্সিজেনের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছি। সিলিন্ডার সাপোর্ট দিলে আশা করি সময়মতো অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবো।’

তবে সিলেটে করোনা ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি হাপসাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তীব্র লড়াইয়ে নেমেছেন। বর্তমানে সিলেটের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৬ শ রোগী রয়েছে। এর মধ্যে এক শ’ রোগী রয়েছেন আইসিইউতে। এছাড়া, আরও প্রায় ৫ শ রোগীকে ওয়ার্ডে ও কেবিনে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

সিলেটের বেসরকারি ক্লিনিক ও মেডিকেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম হোসাইন জানিয়েছেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন। এখন যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন তা সংগ্রহ করতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে।’

এ সংকট কাটাতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

এদিকে, সিলেটের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট নেই বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. নাফি মাহদি শনিবার দুপুরে বলেন, রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। ধারণক্ষমতার বেশি রোগী বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন। যে কারণে অক্সিজেন চাহিদা বেড়েছে।

তবে হাসপাতালটিতে অক্সিজেনের কো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে ডা. নাফি মাহদি বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সাপোর্ট রয়েছে।
এমন বক্তব্য সিলেট সিভিল সার্জনেরও। জেলার সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল শনিবার বলেন, ওসমানী ও শামসুদ্দিনসহ সরকারি হাসপাতালগুলোকে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি নেই। তবে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *