সিলেটে সাংবাদিক পরিচয় দানকারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলার আসামি ফয়ছল কাদিরকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)-৯। মঙ্গলবার দিনগত (১৪ জুলাই) মধ্যরাতে সিলেট সদর উপজেলার পীরেরবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৯ এর এসএসপি সামিউল আলম।
এর আগে গত ৯ জুলাই সিলেট শহরতলির সুরমা গেটে পুলিশ কর্তৃক তার মোটরসাইকেল আটকের পর ফেসবুকে লাইভ করে তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পুলিশে বিরুদ্ধে নানা মিথ্যাচার করেন। পরে রোববার রাতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) শাহপরান থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯টার দিকে শাহপরাণ থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, ফয়ছল কাদেরকে দুই দিন থেকে গ্রেফতার করতে শাহপরাণ থানাপুলিশের দল পৃথক পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়েছে। তবে তিনি আত্মগোপনে আছেন। অবশেষে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে ফয়ছলকে গ্রেফতার করে র্যাব-৯। তাকে শাহপরাণ থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে বুধবারে ভোরে জানান থানার ডিউটি অফিসার এস.আই মামুন।
উল্লেখ্য, লকডাউন চলাকালে গত ৯ জুলাই নিজের কাগজপত্রবিহীন মোটরসাইকেল আটক করায় ক্ষুৃব্দ হয়ে ফেসবুক লাইভ করেন ফয়ছল কাদির (৪০) নামের এক ব্যক্তি। লাইভে যিনি নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। ফেসবুকে লাইভ করার ঘটনায় রোববার রাতে সিলেট নগরের শাহপরান থানায় ফয়ছল কাদিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া।
ফয়ছল কাদির ‘পৃথিবীর কণ্ঠ (পিকে) টিভি’ নামে ফেসবুক ভিত্তিক একটি পেজ পরিচালনা করেন। ফেসবুকে নিজেকে পিকে টিভির সম্পাদক ও মাতৃজগত নামের একটি পত্রিকা সিলেট ব্যুরো প্রধান হিসেবে দাবি করেছেন ফয়ছল। তবে সিলেটের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ তাকে সাংবাদিক হিসেবে চিনেন না বলে জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, লকডাউন চলাকালে গত ৯ জুলাই বিকেলে সিলেট-তামাবিল সড়কের সুরমা গেট এলাকায় তিন আরোহি নিয়ে চলা একটি মোটরসাইকেল আটক করে পুলিশ। ফয়ছল কাদির এই মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন। এসময় তার মাথায় হেলমেট ছিলো না। আটকের পর তিনি মোটর সাইকেলের কাগজপত্র এবং নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেখাতে পারিনি।
ওইদিন ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করা এক পুলিশ সদস্য বলেন, মোটরসাইকেল আটকের পর ফয়ছল কাদির নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পুলিশের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং মোটর সাইকেল ছাড়িয়ে নিতে চান। এতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ফেসবুকে লাইভ করা শুরু করেন। তবে তার মোটাসাইকেলটি ওইদিন আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ সদস্য। তবে পরদিন জরিমানা দিয়ে মোটরসাইকেলটি তিনি ছাড়িয়ে নেন বলে জানায় পুলিশ।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওতে দেখা যায়, মোটর সাইকেল আটকের ঘটনায় ক্ষুব্দ হয়ে কথা বলছেন ফয়ছল কাদির। তার সাথে কেনো এমন আচরণ করা হলো বারবার তা দায়িত্বরত পুলিশের কাছে জানতে চান। পুলিশের উর্ধতন কর্তপক্ষ এবং সাংবাদিকদকের ফোন করে এই ঘটনা জানাচ্ছেন বলেও লাইভে বলতে শোনা যায় ফয়ছলকে।
মোটর সাইকেলটি আটককালে সুরমা গেইটে চেকপোস্টের দায়িত্বে ছিলেন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া। ফয়সাল কাদিরের লাইভ চলাকালেই সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসারকে বলতে শোনা যায়, আপনার গাড়িতে ৩ জন তুলছেন কেনো? গাড়ির কাগজ কই? ড্রাইভিং লাইসেন্স কই? এসব প্রশ্নের জবাবে ফয়ছল বলেন, আমার গাড়ির সেল রিসিট আছে। আমি অসুস্থ। একটি জরুরী নিউজের খবর পেয়ে তাড়াহুড়ো করে বের হয়েছি। তাই এটি সাথে আনতে পারিনি। একটু সময় দিলে নিয়ে আসবো।
এই বাদনাবাদুনের লাইভ ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ফেসবুক লাইভেই অনেকে ফয়সাল কাদিরের আচরণের নিন্দা করে মন্তব্য করেন। সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা, ক্ষমতা প্রদর্শনের নিন্দা করেন মন্তব্যকারীরা। একইসাথে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের আচরণের প্রশংসা করেন তারা।
এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে রোববার রাতে ফয়ছল কাদিরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন মোটরসাইকেল আটককারী সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া। মামলার এজাহারে ফয়ছল কাদিরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য সরাসরি প্রচার করে অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগেও সেই ফয়ছল কাদের ধর্ষণ মামলায় কানাইঘাট থানাপুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বার্তা বিভাগ প্রধান