Home » শুভ জন্মদিন প্রিয় ক্যাম্পাস: ভালবাসার আরেক নাম মুরারিচাঁদ(এমসি)কলেজ

শুভ জন্মদিন প্রিয় ক্যাম্পাস: ভালবাসার আরেক নাম মুরারিচাঁদ(এমসি)কলেজ

জেবিন আক্তার :

পাখিদের কলকাকলি আর ঘন সবুজের ছায়াঘেরা প্রিয় ক্যাম্পাস মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ, কখনো বলিনি তোমায় হৃদয়ে জমাট বাঁধা ভালো লাগার কথা। তোমার বুকে ফুটে থাকা কাঁঠালি চাপার সুঘ্রাণ নিয়ে আমি পাড়ি জমিয়েছি জীবনের কতটা পথ। ঘুমের ঘোরে তোমার আঁকাবাঁকা পথে আমি স্বপ্নের জাল বুনি। জীবনানন্দ দাশের মতো আবার আসিবো ফিরে তোমার সবুজ গালিচার পথ ধরে আলতো পায়ে ভালোবাসার নিঃশ্বাস নিতে। হয়তোবা মানুষ নয়, প্রজাপতির ডানা মেলে। আমি অবাক চিত্তে তাকিয়ে রই তোমার মায়াবী রূপের পানে। ভালোবাসি প্রিয়, দূর থেকে এভাবেই বলে যাবো। সূক্ষ্ম অনুভূতির স্নিগ্ধ সুরে বর্ণনা করছিলাম প্রাণের প্রতিষ্ঠান সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের কথা।

জীবনে সেই জায়গাটা নিয়েগেছে রূপ লাবণ্যে ভরা সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজটি। ভালোবাসার আরেক নাম হয়ে ওঠা রূপসী এই ক্যাম্পাসটির জন্মদিন আজ৷ এখন থেকে প্রায় ১১ যুগ আগে ১৮৯২ সালের ২৭ জুন রাজা গিরিশ চন্দ্র রায় তার পিতামহ মুরারিচাঁদের নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। সূর্য ডুবেছে, সূর্য উঠেছে তারপর মাস পেরিয়ে বছর, পেরিয়ে যাচ্ছে যুগের পর যুগ আর এদিকে মুরারিচাঁদ কলেজের সুনাম আর পথচলাও ধাবিত হচ্ছে সামনের দিকেই।

দেশব্যাপী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানটি পূর্বে সিলেটের বন্দর বাজারের নিকট রাজা জি. সি. উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত ছিল। পরে জায়গা সংকুলান না হওয়ার দরুন পরবর্তীতে শহরের টিলাগড় ( পূর্ব নাম থ্যেকারে টিলা) নামক জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়। যার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তৎকালীন আসাম প্রদেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী খান বাহাদুর সৈয়দ আবদুল মজিদ সিআইই। যিনি কাপ্তান মিয়া নামে পরিচিত ছিলেন। সেই থেকে শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে চলছে এখানকার পাঠক্রম। ১৮৯১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিতে এফ. এ. ক্লাস খোলার অনুমতি দিলে ১৮৯২ সালের ২৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে মুরারিচাঁদ কলেজের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে হাঁটিহাঁটি পা পা করে কলেজটি আজ পূর্ণ করলো ঐতিহ্য আর গৌরবের ১২৯ বছর।

গুটিকয়েক শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করা বিদ্যাপীঠটাতে বর্তমানে ১৪ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এসব শিক্ষার্থীকে ঘিরে জ্ঞানদানে ব্রত আছেন একশোর উপর শিক্ষক-শিক্ষিকা। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণির শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানকার শিক্ষা-কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে আছেন। মানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়ার ফলস্বরূপ প্রতিষ্ঠানটিকে একনাগাড়ে তিনবার অঞ্চল সেরা কলেজের স্বীকৃতি দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

সিলেটের টিলাগড় এলাকায় অবস্থিত কলেজটি দেশের সবচেয়ে সৌন্দর্য্যমণ্ডিত ক্যাম্পাস হওয়ায় বরাবরই লেখাপড়ার জন্য এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানের প্রথম সাঁড়িতেই থাকে মুরারিচাঁদের নাম। এখানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের এমসিয়ান কিংবা মুরারিয়ান নামে ডাকা হয়।

বিখ্যাত তামাবিল সড়কের পাশে নান্দনিক ফটক, পাশেই সদ্যনির্মিত দৃষ্টিনন্দন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, সারিবাধা বৃক্ষরাজি, কবিগুরুর ম্যুরাল, মধ্যখানে সুবিশাল জলরাশির শ্বেতপদ্মময় পুকুর, চমৎকার শহিদ মিনার, সুপ্রাচীন লাইব্রেরি, সাথে টিলার উপর দাঁড়িয়ে থাকা একাডেমিক ভবনগুলো সবুজ এই ক্যাম্পাসটির রূপ বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের এই বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের জন্য অনেকেই আদর করে একে প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ বলে ডাকেন। স্বাভাবিক সময়গুলোতে বিকেল হলেই ক্যাম্পাসটিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আগমন চোখে পড়ে। ইট-পাথরের ব্যস্ত শহরের মাঝে এমসি কলেজ যেন শান্তির এক স্নিগ্ধ পরশ। সিলেটের মানুষের কাছে আশির্বাদ হয়ে আছে মুরারিচাঁদ কলেজটি।শিক্ষক – শিক্ষার্থীদের মাঝে চমৎকার মেলবন্ধন কলেজটির সুনাম বরাবরই বাড়িয়ে দিচ্ছে। সিলেটের এই সবুজ আঙিনায় শিক্ষকতা করার সুবাদে সহকর্মী, শিক্ষার্থী কর্মকর্তা, কর্মচারী তথা এমসি পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষগুলোর কাছ থেকে আন্তরিকতা আর ভালবাসা পেয়ে আসার দরুন ক্যাম্পাসটা একটা আবেগ -ভালবাসার জায়গায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আজ ১২৯ বছরে পদার্পণ করল দেশের শতবর্ষী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ। শুভ জন্মদিন আলোর বাতিঘর। প্রিয় ক্যাম্পাসের জন্মদিনে সবাইকে অনিঃশেষ শুভেচ্ছা, আজীবন শুভ কামনা রুপ- লাবণ্যে ভরা প্রিয় মুরারিচাঁদ (এমসি)।

লেখক
জেবিন আক্তার
সহকারি অধ্যাপক
অর্থনীতি বিভাগ
মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ, সিলেট

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *