কলকাতা :
নির্বাচন শেষ। এ বার ফলের অপেক্ষা ২ মে গণনা (Vote Counting)। গণনা নিয়ে চিন্তায় নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India) । চিন্তার কারণ একাধিক। এক দিকে যেমন গণনাকেন্দ্রে করোনা বিধি মেনে চলতে হবে, তেমনই নিরাপত্তা বলয়ও রাখতে হবে নিশ্ছিদ্র। নির্বাচন কমিশন এই দুটো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই গণনা কেন্দ্রের নীল নকশা তৈরি করেছে। ৮ দফা নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। তাই এবার গণনা অর্থাৎ নির্বাচনের শেষ পর্বে নিরাপত্তায় আর ত্রুটি রাখতে চাইছে না নির্বাচন কমিশন।
রবিবার, ২ মে রাজ্যের ২৩ জেলার ২৯২টি (292 counting center in West Bengal ) কেন্দ্রের ভোট গণনা হতে চলেছে। করোনা সংক্রমণের (Corona Virus) কথা মাথায় রেখে এবার মোট ১০৮টি গণনা কেন্দ্র করা হয়েছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যা ছিল ৯০টি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের কথা ভেবেই অন্য বারের তুলনায় এবার গণনাকেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে । কোন জেলায় কত গণনাকেন্দ্র হবে প্রধানত তা ঠিক করেন জেলাশাসক। একটি গণনা কেন্দ্রে এক বা তার বেশি বিধানসভা আসনের ভোট গণনা হয়। যেমন কলকাতার ১১ আসনের ভোটগণনার জন্য গণনাকেন্দ্র ৬টি। এর মধ্যে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ( Netaji Indoor Stadium) চৌরঙ্গি, এন্টালি, বেলেঘাটা, জোড়াসাঁকো ও শ্যামপুকুর আসনের গণনা হবে। কলকাতা বন্দর, ভবানীপুর, রাসবিহারী ও বালিগঞ্জ, প্রত্যেকটি আসনের জন্য আলাদা আলাদা করে গণনাকেন্দ্র করা হয়েছে। আবার মানিকতলা ও কাশিপুর-বেলগাছিয়ার ভোটগণনা হবে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। অর্থাৎ একটি গণনাকেন্দ্রে এক বা একাধিক বিধানসভা আসনের গণনাও হবে। একই রকম ভাবে জলপাইগুড়ির ৭টি আসনের জন্য ২টি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১ আসনের জন্য ১৪টি, হাওড়ার ১৬ আসনের জন্য ১২টি, হুগলির ১৮ আসনের জন্য ৭টি, পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি আসনের জন্য ৫টি, পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৫টি আসনের জন্য ৪টি, পূর্ব বর্ধমানের ১৬টি আসনের জন্য ১১টি, পশ্চিম বর্ধমানের ৯টি আসনের জন্য ২টি, পুরুলিয়ার ৯টি আসনের জন্য ৩টি গণনাকেন্দ্র করা হয়েছে।
ভোট (West Bengal Assembly Election 2021) গ্রহণের জন্য যেমন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়, তেমনই ভোট গণনার জন্যও থাকে কড়া নিরাপত্তা। ১০৮টি গণনাকেন্দ্রের জন্য মোট ২৫৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে কমিশনের তরফে। গণনাকেন্দ্রে মূলত ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় রাখা হয় । ত্রিস্তরীয় বলয়ের একেবারে বাইরে রাখা হয়েছে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী, RAF, কম্যান্ডো ও কুইক রেসপন্স টিমের সদস্যরা। গণনাকেন্দ্রের বাইরে জমায়েত বা অশান্তি হলে তা রাখবেন এরা । মাঝের বলয়ে থাকবেন পুলিশের ডিসি পদমর্যাদার উচ্চপদস্থ আধিকারিক এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী। একেবারে শেষ বা তৃতীয় বলয় অর্থাৎ গণনা কক্ষ ও স্ট্রং রুমে থাকবে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী।
নির্বাচন কমিশনের অনুমতিপত্র ছাড়া গণনা কক্ষে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। নির্নবাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া গণনা কেন্দ্রে রাজ্য পুলিশও প্রবেশ করতে পারবে না । গণনা কক্ষ বা কাউন্টিং হলে শুধুমাত্র প্রবেশ করতে পারবেন রিটার্নিং অফিসার, গণনা পর্যবেক্ষক, গণনা সহকর্মী, মাইক্রো অবজার্ভার, কাউন্টিং এজেন্ট, সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থী ও এজেন্টরা। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য গণনাকেন্দ্রের মধ্যে সিসিটিভি-তে নজরদারি চালাবে নির্বাচন কমিশন। অশান্তি এড়াতে গণনাকেন্দ্রের ১০০ মিটার এলাকা জুড়ে থাকবে ১৪৪ ধারা।
এবার গণনার নিরাপত্তার পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে গণনায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে গণনা শুরু হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে পুরো গণনা কেন্দ্রটি জীবাণুমুক্ত করা হবে। স্ট্রং রুমে যেখানে ইভিএম ও ভিভিপ্যাট রয়েছে সেখানেও করা হবে জীবাণুমুক্ত করার কাজ। যাঁরা গণনাকেন্দ্রের মধ্যে থাকবেন তাঁদের সকলের করোনা পরীক্ষা করা হবে। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গণনা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে ;পারবেন না। তবে যাঁরা করোনা টিকার দু’টি ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রত্যেকের মুখে মাস্ক ও ফেস শিল্ড বাধ্যতামূলক ভাবে থাকতে হবে বলে নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে । গণনা কক্ষের মধ্যে পর্যাপ্ত দূরত্ব-বিধিও মেনে চলতে । কোনও ব্যক্তি করোনা বিধি না মানলে তাঁর বিরুদ্ধে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন।
অন্য বার একটি কক্ষে গণনার জন্য সাধারণত ১৪টি টেবিল রাখা হত। এ বার করোনা বিধি মানতে দূরত্ব-বিধি বজায় রাখার জন্য ৭টি করে টেবিল রাখা হবে গণনা কক্ষে । এর ফলে গণনা কক্ষের সংখ্যাও এবার বেশি হবে । তবে গণনা কক্ষের আয়তন বড় হলে ১৪টি টেবিল রাখা যেতে পারে। এই বর্ধিত ব্যবস্থার জন্য এবার গণনা অন্যবারের তুলনায় তাড়াতাড়ি শেষ হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
নির্বাহী সম্পাদক