গানের জগত নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছেই। সারেগামাপা এখন বেসুরে। রিয়েলিটি শো-এর জয়ী অর্কদীপ মিশ্রর দিকে একের পর এক কটাক্ষ ছুটে আসছে। তাঁর জয়লাভে খুশি নন দর্শকদের এক বড় অংশ। তাঁদের দাবি, ‘শুধু লোকগান গেয়ে এক জন কী ভাবে সারেগামাপা জিততে পারেন’? শুধু তাই নয়, বিচারকদের সম্পর্কে কুমন্তব্যের ঝড় বয়ে গিয়েছে। এমনও বলা হয়েছে, জয় সরকার নাকি টাকা নিয়ে অর্কদীপকে জিতিয়ে দিয়েছেন। ইমন চক্রবর্তী কেন মঞ্চে উঠে তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, সে নিয়েও মন্তব্য করতে ছাড়েননি কেউ। এ বারে রিয়েলিটি শো-এর ভিতরের খবর জানতে, আনন্দবাজার ডিজিটাল যোগাযোগ করল লোকসঙ্গীত গবেষক ও গায়ক দেব চৌধুরীর সঙ্গে। কেবল অর্কদীপ নন, তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন একাধিক প্রতিযোগীকে। যেমন, অনুরাগ, বিদীপ্তা, জ্যোতি, অনুষ্কা, সৌম্যদীপ, রাহুল, মন্দিরা এবং নীহারিকা।
দেবের কথায় জানা গেল, ২০১৬ সালে অর্কদীপ আরও এক বার সারেগামাপা-তে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু প্রথম ধাপেই বাদ পড়ে যান। তখন তাঁকে প্রস্তুত বলে মনে করেননি বিচারকরা। তার পরে নিজেকে তৈরি করেন এই মঞ্চের জন্য। দেব বললেন, “তার থেকেও বড় কথা, এ বারের সারেগামাপা-য় শুরুতে যে ভাবে ওকে পেয়েছিলাম, ৭ মাস পরে ও যা হয়েছে, তা অভাবনীয়।”
দেব এই প্রথম সারেগামাপা-য় কাজ করছেন। একটি কথা বার বার মনে করিয়ে দিলেন তিনি, এই রিয়েলিটি শো-তে অস্বচ্ছতার কোনও জায়গা নেই। দেবের কথায়, “বিচারকদের কী লাভ এ সব করে?”
দেবের কথায়, “অধিকাংশ মানুষ বলছেন, কেবল লোকগান গেয়ে কী ভাবে জিততে পারে কেউ! কিন্তু তাঁরা বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন, অর্ক কেবল লোকগান গায়নি। গোটা প্রতিযোগিতায় সে একাধিক ঘরানার গান গেয়েছে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘ধিতাং ধিতাং বোলে’ থেকে শুরু করে কৈলাশ খেরের ‘আল্লা কে বন্দে’। মান্না দে, উদিত নারায়ণ, অনুপ ঘোষাল, কার গান না গেয়েছে অর্ক! তবে হ্যাঁ, অর্ক লোকগান গাইতে বেশি পছন্দ করে। সে তো সবারই পছন্দ-অপছন্দ থাকে।”
দেবের কথায় জানা গেল, প্রত্যেক প্রতিযোগী একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। কেউ কাউকে টক্কর দেওয়ার জন্য খারাপ পদক্ষেপ নেননি। একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
নেটমাধ্যমের কুমন্তব্য, সমালোচনা সম্পর্কে দেবের শেষ কথা, “আমরা মুখে বাংলা বাংলা বলি, আবার বাংলা গান গেয়ে জয়ী হলে সমালোচনাও করি। অর্কর এই জয়, বাংলা লোকসঙ্গীতের জয়, এটা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে, কিন্তু এটা নিয়ে যারা অহেতুক ঝামেলা বা খারাপ ভাবে সমালোচনা করছেন তারা আসলে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি এবং শিকড়ের বিরুদ্ধে বলছেন।”
নির্বাহী সম্পাদক