ফের সাত দিনের সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ২২ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত পরবর্তী লকডাউনে কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে।
উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয় এসময় চলমান লকডাউনের সব শর্ত বলবৎ থাকবে। এ বিষয়ে তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার বলেন, চলমান শর্তে ২২ তারিখ থেকে ফের সাত দিনের লকডাউন দেওয়া হয়েছে। ১৪ তারিখ থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের মেয়াদ শেষ হবে ২১ তারিখ রাত ১২টায়। ২২ তারিখ ভোর ৬টা থেকে আবারও সাত দিনের লকডাউন শুরু হবে।
লকডাউন বাড়ানোর বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সোমবার বলেন, জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শক্রমে লকডাউন আরও সাত দিন বাড়ানো হয়েছে। টেকনিক্যাল কমিটি বলছে, ভাইরাসের যে চেইনটি কাজ করছে, লকডাউন অব্যাহত রাখা গেলে সেটি এই মাসের শেষে বা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে পুরোপুরি ভেঙে দেওয়া সম্ভব হবে।
এরআগে, ১৪ এপ্রিল থেকে সাত দিনের সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। ওই নির্দেশনায় বলা হয়-
১. সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
২. সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ-নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবে তবে বিমান সমুদ্র ও স্থলবন্দর ও তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞা আওতাবহির্ভূত থাকবে।
৩. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৪. সব ধরনের পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল, বিমান) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবা এ আদেশের বাইরে থাকবে।
৫. শিল্প কারখানা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।
৬. অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ ও পণ্য, চিকিৎসা, লাশ সৎকার) ব্যতিত কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড দেখিয়ে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
৭. খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা- থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয় ও সরবরাহের জন্য খোলা রাখা যাবে।
৮. শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
৯. কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের বাজারে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত খোলা স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।
১০. বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে।
১১. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুম্মা ও তারাবির নামাজের জামাত বিষয়ে ধর্মমন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে, তা মানতে হবে।
১২. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন এ সমস্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাতে সহায়তা করবে।
১৩. আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি), খাদ্য শষ্য ও খাদ্য দ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা (কোভিড-১৯ এর টিকা প্রদান), বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহ, টেলিফোন, ইন্টারনেট সেবা, গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
এদিকে ঈদের আগে লকডাউন শিথিল করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মানুষের জীবন-জীবিকা এবং ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এ চিন্তা চলছে বলে জানান তিনি। নিজ বাসভবন থেকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সকালে তিনি এ তথ্য জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন লকডাউন চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে এই লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর বিষয়ে সরকার সক্রিয় চিন্তা করছে। ঈদের আগে অবশ্যই লকডাউন শিথিল করা হবে জীবন ও জীবিকার জন্য। ঈদে কেনাকাটা এবং ঘরমুখী মানুষের যাতায়াতের জন্য শিথিল করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এভাবে চিন্তাভাবনা করছে। এ বিষয়ে সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৯ এপ্রিল) সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিবদের জুম মিটিংয়ে লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জুম মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহেমদ কায়কাউস, স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ, স্বরাষ্ট্র সচিব (জননিরাত্তা বিভাগ) মোস্তাফা কামাল উদ্দীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বার্তা বিভাগ প্রধান