দলে যাঁরা প্রথম থেকে ছিলেন, তাঁরা আছেন। কেউ কেউ জোয়ারে আসে আর ভাটায় চলে যায়। কিছু যায় আসে না। কোচবিহারের জনসভা থেকে নাম না করে ফের শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহারে ভাঙনের মুখে তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভা ভোটে এই জেলায় কোনও আসন পায়নি তৃণমূল। একুশের ভোটে আগে এখন ফের দল ছাড়ার হুজুগ উঠেছে। ইতিমধ্যে বিধায়ক মিহির গোস্বামী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সেই পরিস্থিতিতে আজ বুধবার কোচবিহারে কর্মিসভা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার কোচবিহার রাসমেলা ময়দানের জনসভা থেকে মিহিরের দলবদল প্রসঙ্গে মমতা এক পুরনো প্রবাদের কথা উল্লেখ করেন। ‘নতুন বোতলে পুরনো মদ’— মিহির গোস্বামীর দলবদলকে এই বলেই কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ভরা জনসভায় দাঁড়িয়ে এদিন মিহির গোস্বামীর নাম না করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের দল থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। আর তাঁকে বিজেপি দলে নিয়েছে।’ এ নিয়ে মমতার কটাক্ষ, ‘এ আসলে নতুন বোতলে পুরনো মদ।’ একইসঙ্গে এদিন তিনি মিহির গোস্বামীকে আক্রমণ করে বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সে নানারকম মিথ্যা কথা বলে, কুৎসা করে, চরিত্রহনন করে, টাকা–পয়সা খরচ করে, এপার ওপারে অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িত থেকে একটা নির্বাচনে পগারপাড় হয়েছে। কিন্তু আগামীদিনে কী হবে?’
তিনদিনের উত্তরবঙ্গ সফরে বুধবার কোচবিহারে জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। একুশে নির্বাচনের আগে দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। আর সেখানেই দগত্যাগ করতে চলা শুভেন্দু অধিকারীকে নাম না করেই একহাত নিলেন। জানিয়ে দিলেন, কেউ কেউ দল থেকে বেরিয়ে গেলে কিছু যায় আসে না। একইসঙ্গে দলের ‘বেসুরো’ নেতা-মন্ত্রীদেরও বুঝিয়ে দিলেন, থাকার ইচ্ছা না থাকলে দল থেকে বেরিয়ে যেতেই পারেন। কিন্তু যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দলের পাশে থেকেছে, বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করেছে, তাঁরা আগামিদিনেও থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেউ কেউ জোয়ারে আসে, ভাটায় চলে যায়। তাতে কিছু যায় আসে না। যারা প্রথম থেকে ছিল তারা আছে। তারাই লড়বে। জেনে রাখবেন, তারা চরিত্র বদল করতে পারে না। জামা কাপড় বদলানো যায়। কিন্তু আদর্শ বদলানো যায় না।”
এর আগে মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির জনসভা থেকে নাম না করে শুভেন্দুর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানান, “১০ বছর ধরে পার্টির হয়ে খেয়ে, সরকারে থেকে সরকারের সবটা খেয়ে ভোটের সময় এর সঙ্গে ওর সঙ্গে বোঝাপড়া করলে কিন্তু কিছুতেই আমি মেনে নেব না, এটা মনে রাখবেন।” এরপরই দলের ‘বেসুরো’ নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কদের উদ্দেশে যেন বার্তা দিলেন, “এই ১০ বছর ৩৬৫ দিন যাঁরা মানুষের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদেরই পরীক্ষা দিতে হবে। আর এমন পরীক্ষা দেবেন যাতে বিজেপি পরীক্ষা দিতে বসতেই না পারে। আর সিপিএম এবং কংগ্রেস বিজেপির হয়ে দালালি করতে না পারে।”
তাঁর বক্তৃতার হয়তো একটা পার্লামেন্ট ভোটে আমরা হেরেছি। এখন দেখছেন তো জিতে কেমন গুন্ডামি করে বেরাচ্ছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের দল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তাকে বিজেপি নিয়ে এসেছে। আমরা বলিনা, পুরনো বোতলে নতুন মদ। সে কুত্সা করে, নানা রকম বিষয়ে জড়িয়ে থেকে, এপার ওপার করে বড় নেতা হয়েছেন। আমরা ভোট করার জন্য বাঙালি রাজবংশী ভাগাভাগি করি না। হিন্দু মুসলমান, তফসিলি থেকে আদিবাসী আমরা ভাগাভাগি করি না।
আমি রাজবংশী ভাষা বুঝি। রাজবংশী ভাষায় কবিতা লিখেছি, যেমন অলচিকিতেও কবিতা লিখেছি। রাজবংশী ভাষা সহজ সরল। কামতাপুরী রাজবংশী কমবেশি কাছাকাছি। যাঁরা প্রথম দিন থেকে তৃণমূলে ছিলেন তাঁরা আছেন। একটা দুটো জোয়ারে আসে ভাঁটায় চলে যায়। যাঁরা প্রথম দিন থাকে, তাঁরা শেষ দিন পর্যন্ত থেকে যায়। আদর্শ বদল করা যায় না। কৃষকদের জমি খাজনা কোনওদিন দিতে হবে না। আমরা সব মকুব করে দিয়েছি। বিনা পয়সায় রেশন দিচ্ছি। আমাদের সরকার আসবে। আবার ফ্রিতে পাবেন।
কোচবিহারে কী হয়নি? বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, মেডিকেল কলেজ হয়েছে, পলিটেকনিক হয়েছে, আইটিআই হয়েছে, ভাওয়াইয়া সেতু হয়েছে, জয় সেতু হয়েছে। পুরোহিতরা এখন ১ হাজার টাকা করে ভাতা পান, আগামী দিনে ২ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। আমরা লোকনাথ বাবা মন্দিরের জন্য দু’শ আড়াইশ কোটি খরচ করেছি। জল্পেশ মন্দিরের জন্য ৫ কোটি টাকা দিয়েছি। গতকাল শিব মন্দিরে গিয়েছিলাম। সেখানে গেস্ট হাউজ আর ভোগ ঘরের জন্য ১ কোটি টাকা দেব বলেছি। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা যাঁরা নিচুতলায় রয়েছেন, যাঁরা মধ্যতলায় রয়েছেন, আমি আশাকরি তাঁরা বিজেপির গুন্ডামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। সব বাইরের গুন্ডা। বহিরাগত সব বাইরের গুন্ডা। সব চম্বলের ডাকাত। কখনও পুলিশকে ভয় দেখাচ্ছে। কখনও তৃণমূল কর্মীদের ভয় দেখাচ্ছে। মিডিয়ার সব কথা বিশ্বাস করবেন না। কারণ নরেন্দ্র মোদীরা ওদের সব কিনে নিয়েছে। ওরা শুধু বিজেপিকে দেখাবে। আমাদের দেখাবে না। তোমার বিজেপি তো ভারতবর্ষে ক্ষমতায় রয়েছে ৬ বছর। বাংলার জন্য কী করেছ? সব করে দেব আমরা কৈফিয়ত চাইবে ওরা।
নির্বাহী সম্পাদক