বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক সিলেট জেলা সভাপতি ও সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ৯ বছর পূর্ণ হলো আজ (১৭ এপ্রিল) শনিবার। ২০১২ সালের এই দিনে রাজধানী ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ ‘নিখোঁজ’ হন বিএনপির শক্তিধর এই নেতা। দীর্ঘ এই ৯ বছরেও পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে নেতাকর্মীরা হাল ছাড়েননি। আজও ইলিয়াস আলীর ফেরার আশায় আছেন সবাই।
২০১২ সালের ১৭ই এপ্রিল রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে আড্ডা শেষে ফিরছিলেন বনানীর বাসায়। পথে মহাখালী সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে থেকে গাড়িচালকসহ ‘নিখোঁজ’ হন তিনি। ঘটনাস্থল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় তার ব্যবহৃত গাড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ। ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার ও ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন তার নির্বাচনি এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জের মানুষ। আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ দেন ৩ ছাত্র ও যুবদলকর্মী। দলের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের একজন ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের দাবিতে কয়েক মাস যাবত টানা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
অপরদিকে, স্বামীকে উদ্ধারের আবেদন জানাতে সন্তানদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছুটে গিয়েছিলেন ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা। নানা তথ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ছুটে গেছেন গাজীপুরসহ কয়েক জায়গায়। তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৯টি বছর, ফেরেননি ইলিয়াস আলী।
নিখোঁজের পর ইলিয়াস আলীর তথ্য জানতে হাইকোর্টে একটি রিট করেছিলেন তাহসিনা রুশদীর লুনা। আদালতের নির্দেশনা মেনে কয়েক মাস উদ্ধার অভিযানের তথ্য জানিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সে তৎপরতাও বন্ধ হয়ে গেছে বেশ আগেই।
পিতাকে উদ্ধারে ভূমিকা রাখতে বাংলাদেশ সফররত তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের কাছে চিঠি লিখেছিলেন ইলিয়াসের সে সময়ের ছোট্ট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল।
দেশের পাশাপাশি তাকে উদ্ধারের দাবিতে বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও মুখর হয়ে উঠেছিলেন। ইলিয়াস আলীর মোবাইল নম্বর থেকে বিভিন্নজনের কাছে রহস্যময় ফোনকল আসা, ভারতের কারাগারে তার বন্দিজীবন নিয়ে নানা সময়ে গুঞ্জণ ছড়ালেও শেষ পর্যন্ত সেগুলো পরিণত হয়েছিলো গুজবে।
পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে দীর্ঘ ৯টি বছর পার করেছেন ইলিয়াস আলীর ফিরে আসার অপেক্ষায়। চোখের জল শুকিয়ে গেছে মা সূর্যবান বানুর। দরোজায় কড়া নাড়ার শব্দে এখনো কান পাতেন স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। বাবার অপেক্ষায় এখনো আনমনা হয়ে থাকেন সন্তানরা। কিন্তু আজও ফিরেননি ইলিয়াস আলী। তার গাড়িচালক আনসার আলীরও মেলেনি সন্ধান।
এদিকে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রথমদিকে ইলিয়াসকে উদ্ধারের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও দীর্ঘ ৯ বছরেও তার কোনো সন্ধান দিতে পারেনি তারা। তবুও ইলিয়াস আলী ফিরবেন- এই আশায় এখনও বুক বেঁধে আছেন মা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা।
ইলিয়াস আলীর ‘নিখোজ’র পর বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’। এ ব্যানারে এবং পারিবারিকভাবে প্রতি মাসের ১৭ তারিখ ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও দোয়া মাহফিল হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর এই তারিখে ইলিয়াসের সন্ধানের দাবিতে বিএনপিও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
তবে গত বছর করোনাভাইরাসের কারণে কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি। এবারও হচ্ছে না বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে পারিবারিকভাবে সংক্ষিপ্ত পরিসরে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হতে পারে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম
নির্বাহী সম্পাদক