ভারতরত্ন, পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী প্রত্যেক বছর বহু মানুষ তাদের সমাজে কাজের নিরিখে এমন সম্মান পেয়ে থাকেন। কিন্তু এই সব পুরস্কার দেখতে কেমন হবে? তা তো ঠিক করা ছিল না। নকশা তৈরি করতে দিল্লিতে থেকে ডাক এসেছিল এক বাঙালির কাছেই। কারণ তিনিই যে সেরা। তাঁর থেকে ভালো আর কে জানেন। তিনি নন্দলাল বসু।
প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অনুরোধে ভারতরত্ন, পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রীসহ বিভিন্ন পুরস্কারের স্কেচ তৈরি করেছিলেন নন্দলাল বসু। ভারতীয় সংবিধানের বইতে যে সমস্ত আঁকা রয়েছে সবই এঁকেছিলেন নন্দলাল বসু। সংবিধান পড়তে হবে না, দেখতেও হবে না। বাঙালি হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সহজ পাঠ মোটামুটি সকলেরই পড়া। সহজপাঠের সমস্ত আঁকা নন্দলাল বসুরই। নন্দলাল বসুর পৈত্রিক ভিটে জেজুর, তারকেশ্বর, হুগলি। বাবার নাম পূর্ণচন্দ্র বসু। ছেলেবেলা থেকেই তিনি প্রবল উৎসাহের সঙ্গে দেব-দেবীর মূর্তি সহ পুতুল তৈরি করতেন। চিত্রকলার প্রতি তাঁর আকর্ষন এবং পড়ালেখায় অমনোযোগীতার কারণে এফ এ পরীক্ষায় পর পর দুবার ফেল করেন। পরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহায্যে কলিকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান। ছাত্র থাকাকালীন তিনি কর্ণের সূর্যস্তব, গরুড়স্তম্ভতলে শ্রীচৈতন্য, কৈকেয়ী, শিবমতি, নৌবিহার প্রভৃতি ছবি এঁকে নিজের প্রতিভার পরিচয় দেন।
তিনি কর্মজীবনের শুরুতে পাটনা, রাজগির, বুদ্ধগয়া, বারাণসী, দিল্লী, আগ্রা, মথুরা, বৃন্দাবন, এলাহাবাদ ভ্রমণ করে উত্তর ভারতের শিল্প ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হন। প্রায় একই সময়ে পুরী থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত প্রায় সমগ্র দক্ষিণ ভারত ভ্রমণ করেন এবং কোণারকের সূর্য মন্দির তাঁকে প্রভাবিত করে।
১৯২১ সালে তিনি বাঘ গুহার নষ্ট হয়ে যাওয়া চিত্রগুলি পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি ভগিনী নিবেদিতার হিন্দু-বৌদ্ধ পুরাকাহিনী বইটির অঙ্গসজ্জা করেন এবং ঠাকুর বাড়ির চিত্র কলার তালিকা তৈরীতেও সাহায্য করেন। ১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত বিচিত্রা সংঘে তিনি শিল্পকলার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৩৫-৩৭ সালে পর পর তিন বছর তিনি কংগ্রসের বার্ষিক সম্মেলনে শিল্প প্রদর্শনী ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৩৭ সালে অনুষ্ঠিত হরিপুরা সম্মেলনে তিনি লোকচিত্রের ধারাবাহী ৮৩টি পট প্রদর্শন করেন যা হরিপুরা পট নামে খ্যাত। ১৯৪৩ সালে তিনি বরোদার মহারাজের কীর্তিমন্দির অলঙ্কৃত করার দায়িত্ব লাভ করেন। এই কীর্তিমন্দিরের চারিদিকের এবং শ্রীনিকেতন ও শান্তিনিকেতনের দেয়ালচিত্র নন্দলাল বসুকে খ্যাতিমান করে তুলে। শেষ জীবনে নন্দলাল বসু তুলি-কালি এবং ছাপচিত্রের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হন এবং এক্ষেত্রে সাফল্যের পরিচয় দেন।
নির্বাহী সম্পাদক