Home » বালির লড়াই বৈশালী আর দীপ্সিতার মধ্যেই, কিন্তু মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন

বালির লড়াই বৈশালী আর দীপ্সিতার মধ্যেই, কিন্তু মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন

রাজ্য রাজনীতিতে এখন রংবদলের পালা চলছে। আজ যিনি তৃণমূল ছিলেন কাল তিনি বিজেপি হয়ে যাচ্ছেন। এই আবহে এবার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে। মানুষের নানান সমস্যার সুরাহার কথা নির্বাচনের আগে জনসভায় রাজনৈতিক দলের নেতারা বলে থাকেন। কিন্তু এবার রাজনৈতিক দলের জনসভায় রাজনীতি যেন ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। তার বদলে শোনা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক আক্রমণ প্রতি আক্রমণের পালা। তবে মানুষ কিন্তু নির্বাচনের আগে স্মৃতিতে একটু নাড়া দিয়ে নিচ্ছে। মানুষ আমি আমি কিসের ভিত্তিতে , কাকে, কেন ভোট দেব? এসব ভাবতে ভাবতেই নির্বাচকমণ্ডলী বুথের দিকে আগিয়ে যায়, ভোট দেয়।

আসলে মানুষের স্মৃতির থেকে কোন কিছুই চিরতরে মুছে যায় না। কালের প্রবাহে হয়তো কিছুদিন মানুষ স্মৃতির থেকে বাইরে থাকে। কিন্তু কোনও কোনও ঘটনা আবার সেই স্মৃতিকে গভীর ভাবে নাড়া দিয়ে মানুষকে জাগিয়ে তোলে। তেমনই একটা ঘটনা নির্নবাচনের আগে আবার বালি বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষের চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই বালি পুরসভার আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা । মানুষ চাইলেও এখনো ভুলতে পারেননি বিবেকানন্দ সেতুর ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার কথা, ভুলতে পারিনি স্টিফেন্স কোর্টের অগ্নিকাণ্ড অথবা আমরি হাসপাতালের সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কথা।

মানুষের স্মরণে আছে সারদা-কাণ্ড । একই ভাবে নির্বাচনের আগে ফিরে ফিরে আসছে শ্রীরামকৃষ্ণে-স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি বিজড়িত বেলুড় মঠ পার্শ্ববর্তী অঞ্চল বালি পুরসভার আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে মানুষের মনে সেই ক্ষত আবার যেন যন্ত্রণার কারণ হয়ে ফুটে উঠছে। বালি বিধানসভার মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, সেই ২০১৪-র বালি পুরসভার আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা মাথায় রেখেই এই বিধানসভার বহু মানুষ এবারও ইভিএম-এর বোতামে ছাপ দেবেন বলে ঠিক করেছেন। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী বৈশালী ডালমিয়া। যিনি আগে তৃণমূলের বালির বিধায়ক ছিলেন। এই কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী হয়েছেন দীপ্সিতা ধর। তৃণমূল প্রার্থী শিশু চিকৎসক রানা চট্টোপাধ্যায়। তবে বালির নির্বাচনে প্রধান লড়াই হচ্ছে বৈশালী ডালমিয়া আর দীপ্সিতা ধর-এর মধ্যে। তাই ফিরে আসছে বালি পুরসভার সেই স্মৃতি।

কী সেই ঘটনা ? আসুন একটু অতীতের দিকে তাকানো যাক। ২০১৪ সালে ঘটে যাওয়া বালি পুরসভার আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে এই শান্তিপূর্ণ এবং নিরুপদ্রব অঞ্চল বালিতে তোলপাড় হয়েছিল। এই ঘটনায় এলাকার মানুষের বিশ্বাসে যে ফাটল ধরেছিল তা আজ নির্বাচনের মুখে আবার প্রকট হয়ে উঠছে । এখনও মানুষের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে, নীতিনিষ্ঠ দল সিপিএম-এর ওপর থেকে কী ভাবে সেদিন তোলে গিয়েছিলো মানুষের বিশ্বাস, ভরসা, যা আজও এখানকার মানুষের মনে সজীব।

এই নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন? এই প্রশ্ন করতেই নানান উত্তর এলো মানুষের মধ্য থেকে। কেউ বললেন, “বুঝতে পারছি না এই সময়ে কাকে ভোট দেব ।” কেউ আবার ভোটার কথা বলতেই খানিক চুপ থেকে বালি পুরসভার ২১ কোটি টাকা তছরুপের ঘটনা নিয়ে কথা বলে উঠলেন। বললেন, “বালি বিধানসভা এলাকার বালি পুরসভার আর্থিক কেলেঙ্কারি এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছে। আজও নির্বাচনের আগে সেই আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা মনে পরে যায়। আসলে ভোটের আগের সময়টা হলো জনগণের।”

কেউ আবার সিপিএম-এর কেলেঙ্কারির বলতে গিয়ে কলকাতার বিজন সেতুর উপরে নিরীহ ১৯ জন আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে বললেন, আপনারা বিজনসেতুর ঘটনা ভুলে গেলেন?

সেই বালি বিধানসভায় এবারে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বৈশালী ডালমিয়া। তিনিও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছেন। তৃণমূলে থেকে তিনি কাজ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। বলেছেন তাঁর বিধানসভার অধীনে যে সব পুরসভা রয়েছে সেখানকার বেশিরভাগ জায়গায় তৃণমূলীদের দুর্নীতি, কাটমানি খাওয়ার কথা। আর এসবের বিরুদ্ধে মুখ খুলেই বৈশালী ডালমিয়া তৃণমূলে ব্রাত্য হয়েছেন।
তবে বৈশালী ডালমিয়ার বিধানসভা অঞ্চলের মানুষের অনড় ওপরে ভরসা আছে, সেটা তারা নিজেরাই বলছেন। এখানকার মানুষ মনে রেখেছেন। তারা বলছেন, “লকডাউন এর সময় যেভাবে বালির সমস্ত মানুষের পাশে বৈশালী দাঁড়িয়ে ছিলেন, বালির মানুষেরা সেটা মনে আছে।” আর এই কারণেই বৈশালীর ডালমিয়ার দৃঢ় বিশ্বাস, “পরিবর্তনের লক্ষ্যে বালির মানুষ তার পাশেই থাকবেন।”

পথপাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন যুবক বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন, বৈশালী ডালমিয়া দল ত্যাগ করেন নি, দল বৈশালীকে শোকজ করায় তিনি এসেছেন পরিবর্তনের লক্ষ্যে তার পুরোনো জায়গা বালিতে।

তাহলে কি ধরে নিতে হবে যে, বালি বিধানসভা এবারে “পরিবর্তনের উপরে পরিবর্তন” চাইছেন? জানা যাবে ২ মে তারিখে, অপেক্ষায় থাকবো আমরা, অপেক্ষায় থাকবেন নির্বাচনে যারা ওই বিধানসভা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারাও।

তবে একটা কথা বলাই যায় পুরনো ক্ষতচিহ্ন গুলো বালির মানুষ ভোলেনি সেটা শহরের আনাচে-কানাচে কান পাতলেই বোঝা যাবে। আর তাই কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে রয়েছেন বাম-কংগ্রেস সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত প্রার্থীরা। কেননা মানুষ তৃণমূলকে দেখেছে ১০ বছর। ৩৪ বছর দেখেছে বামফ্রন্টকে। এবার তারা কী তাহলে বিজেপিকে ভোট দিয়ে আসল পরিবর্তন আনবেন? সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ২ মে পর্যন্ত। তবে তার আগে নজর রাখতে হবে বালি বিধানসভায় মানুষ নিজেদের ভোটটা দিতে পারেন কি না সেদিকে ।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *