Home » ঢাকাকে কেন্দ্র করে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে করোনা

ঢাকাকে কেন্দ্র করে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে করোনা

রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটকের একটি ছবি ভাইরাল হয়। বুধবার, ২৩ মার্চ, রাত ৯টা ৪৭ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি দেন ওই মেডিক্যাল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহ আহমেদ নুছায়ের। রোগীসহ তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের ছবি দিয়ে তিনি লিখেন, ‘ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালের তৃতীয় তলা থেকে বলছি, করোনার সংক্রমণ খুবই ভয়াবহভাবে বাড়ছে। বিপর্যয় এড়াতে দয়া করে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।’

পরে বুধবার (২৪ মার্চ) ছবির প্রসঙ্গে শাহ আহমেদ বলেন, ‘সেই মুহূর্তে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে তিনটা অ্যাম্বুলেন্স আসে জরুরি বিভাগে, আরও অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শোনা যাচ্ছিল রাস্তায়। এছাড়াও জরুরি বিভাগে ভর্তির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন অনেক রোগী।’

একই হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. সৈয়দ অলী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘এ হাসপাতালের সব ওয়ার্ডই প্রায় রোগীতে ভর্তি। আর এখন ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি করানোই বেশ টাফ হয়ে যাচ্ছে, সামনে আরও হবে। আইসিইউতে বেড পাওয়া এখন সোনার হরিণ। প্রতিদিন ওয়ার্ড থেকে গড়ে পাঁচ থেকে ১০ জন রোগী আইসিইউর অপেক্ষায় থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত মাসের দিকে আমাদের পরিকল্পনা ছিল নন-কোভিড ওয়ার্ড চালু করা। তা আর হয়নি, এরপর আমরা ১১ তলা কেবিন চালু করি। এরপর অবস্থা বেগতিক দেখে ১২ তলা কেবিন আর ৭ তলা ওয়ার্ড খুলে দিয়েছি। এখন অধিকাংশ ওয়ার্ডই পরিপূর্ণ। কোনও বেড ফাঁকা নাই।’ হাসপাতাল এখন বেড বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বলেও জানান তিনি।

দেশে করোনার সংক্রমণের উর্ধ্বগতি চলছে। গত দুইদিন ধরে দৈনিক শনাক্ত হচ্ছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি। গতকাল ( ২৩ মার্চ) রোগী শনাক্ত হন তিন হাজার ৫৫৪ জন। এর আগে সর্বশেষ গত ১৫ জুলাই একদিনে শনাক্ত ছিল তিন হাজার ৫৩৩ জন। এরপর গত আট মাসে একদিনে করোনা শনাক্ত সাড়ে তিন হাজার অতিক্রম করেনি। বুধবার (২৪ মার্চ) শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ৫৬৭ জন এবং মারা গেছেন ২৫ জন।

শীত মৌসুমে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হলেও শীতের সময়ে সংক্রমণের হার কমে আসে, কমে আসে মৃত্যুর সংখ্যা। গত ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৯২ শতাংশ এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল দুই দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে শীতের শেষে আবার বাড়তে শুরু করেছে করোনা রোগী শনাক্তের হার। চলতি মাসের শুরু থেকেই দৈনিক শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করে। ১ মার্চ থেকে শনাক্তের হার চারের ওপরে চলে যায়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে সেটা তিন থেকে চারের ভেতরে ছিল। ৭ মার্চের পর থেকে বাড়তে থাকে এবং সেটা বেড়েই চলেছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, গত বছরে যেটা মে-জুন-জুলাইয়ের দিকে হয়েছিল সেটা এবছরে হয়ে যাচ্ছে মার্চের দিকে। প্রথমেই সবগুলো সরকারি আইসিইউ বেড পূর্ণ হয়ে গেলো। সাধারণ বেডও প্রায় পূর্ণ। অথচ কারো মাঝে একটু সতর্কতাও চোখে পড়ে না। করোনার এই ঊর্ধ্বগতির সংক্রমণ কতোটা ভয়ঙ্কর হতে যাচ্ছে সেটা বোঝা যায় সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালের বেড সংকট দেখলেও। তবে এই সংকট রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে। সারাদেশে সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ এখনও তুলনামূলকভাবে ফাঁকা রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী ঢাকায় করোনা সংক্রমণ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। যার কারণে এখানে তালিকাভুক্ত হাসপাতালের সাধারণ বেড ও আইসিইউ সংকট চলছে। এমনকী তালিকাভুক্ত হাসপাতালের বাইরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও বেড সংকট। বেডের অভাবে রোগীদের ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে করোনাতে আক্রান্তদের জন্য হাসপাতালের বেড সংকট দেখা যাচ্ছে, সংকট রয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ)। করোনা রোগীদের জন্য করোনা ডেডিকেটেড অন্যতম পাঁচ হাসপাতালে আইসিইউ ফাঁকা নেই।

গত ২২ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই নির্দেশ দেয়। নির্দেশনায় বলা হয়, দেশে ক্রমাগত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রাজধানীর মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টার ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছর করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকায় এই হাসপাতালগুলোকে করোনা ডেডিকেটেড করা হয়। তবে পরবর্তীতে রোগীর সংখ্যা কমে আসায়, অন্য রোগীদের জন্যও সেবা চালু করা হয়।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও মহামারী বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘শুরু থেকেই রাজধানী ঢাকাতে করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যু বেশি ছিল।’

ঢাকাতে কেনও পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে জানতে চাইলে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ভারত ছাড়া অন্য সব দেশের সঙ্গে আমাদের প্রধান যোগাযোগ বিমানবন্দর দিয়ে। আর দেশের বাইরে থেকে যারা আসছেন তাদের একটা বড় অংশ ঢাকাতেই থাকেন, এটা হচ্ছে করোনার উৎপত্তি। একইসঙ্গে ঢাকায় ঘনবসতি বেশি। নতুন স্ট্রেইনের সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। কেউ মাস্ক পরছে না, সামাজিক দুরত্ব মানছে না। যার কারণে ঢাকার পরিস্থিতিরি অবনতি হচ্ছে।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *