গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা) পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৯১২ জন, যা গত ৫৮ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। তার আগের দিন সোমবার (৮ মার্চ) শনাক্ত হয়েছিলেন ৮৪৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর, তার আগের দিন ( ৮ মার্চ) এই সংখ্যা ছিল ১৪।
গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়ায় পাঁচ দশমিক ১৮ শতাংশ। দৈনিক শনাক্তের হার সর্বশেষ এর আগে পাঁচ এর বেশি ছিল গত ১৮ জানুয়ারিতে। এরপর থেকেই শনাক্তের হার কমতে শুরু করে। তবে মার্চের শুরুতে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে শনাক্ত হন ৩৮৫ জন। তারপর থেকেই প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। ১ মার্চে ৫৮৫ জন, ২ মার্চে ৫১৫ জন, ৩ মার্চে ৬১৪ জন, ৪ মার্চে ৬১৯ জন, ৫ মার্চে ৬৩৫ জন, ৬ মার্চে ৫৪০ জন, ৭ মার্চে ৬০৬ জন।
গত ৬ মার্চ দেশে সংক্রমণের ৫২তম সপ্তাহ শেষ হয়। সেদিন স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের সাপ্তাহিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তার আগের সপ্তাহে তুলনায় সে সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে, ধীরে ধীরে সেটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চে প্রথম তিনজন করোনা রোগী শনাক্তের খবর জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তার ঠিক ১০দিন পর প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর খবর জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
তখন থেকে নিয়মিতভাবে রোগী শনাক্ত বাড়লেও দেশে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই রোগী শনাক্তের হার চলে যায় ২০ শতাংশের ওপর এবং জুন মাসে সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করে। আগস্ট মাস থেকে নতুন রোগীর সংখ্যা কমতে দেখা যায়। তারপর থেকে কমতির দিকে থাকে। গত ৩ ফেব্রুয়ারিতে শনাক্তের হার নেমে হয় দুই দশমিক ৯২ শতাংশে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার (৯ মার্চ) আবারও সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াতে কয়েকটি নির্দেশনাও দেন তিনি।
হঠাৎ করেই সংক্রমণ বাড়ছে কেন এ বিষয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, কেউ মাস্ক পরছে না। মানুষের সামাজিক অনুষ্ঠানে যাবার প্রবণতা বেড়েছে। টুরিস্ট স্পটগুলোতে হোটেল নাকি ফাঁকা নেই-এমন সংবাদও দেখছি গণমাধ্যমে। তাহলে কী করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে?
শীতের সময়ে সবাই করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করলেও অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তার বিপরীত বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘শীতে আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ, প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা-থ্রি, রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) ও রাইনোভাইরাস প্রবলভাবে থাকে। এগুলোর কারণেই শীতে সর্দি, কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ার রোগী বেশি দেখা যায়। এসব ভাইরাস রেসপিরেটরি ভাইরাস। করোনাভাইরাসও একই। আর ভাইরাসের নিয়ম হচ্ছে, শরীরে যখন একটি ঢোকে, সেটা সহজে অন্য ভাইরাস ঢুকতে দেয় না। ঢুকলেও বের করে করে দেয়।’
গরম পরতে শুরু করেছে, এসব শীতের রেগুলার ভাইরাস চলে যাবে। তাই সংক্রমণ বাড়তে পারে মন্তব্য করে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, একটা নিচু ঢেউ গরমের দিনে আসতে পারে, কিন্তু অত বড় হবে না, শ্যালো একটা ওয়েভ আসবে।
একইসঙ্গে নতুন স্ট্রেইন বাংলাদেশে ঢুকেছে কিনা-সেটাও এখন গবেষণা করার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। করোনার পুনঃসংক্রমণে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারকে আবার মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য নিয়মিতভিত্তিতে কাজ করা দরকার। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ যা যা করা দরকার তাই যেন সরকার করে।

বার্তা বিভাগ প্রধান