অনলাইন ডেস্ক:মোস্তাফিজুর রহমানের সেই হারানো ছন্দ যেন ফিরে এসেছে। করোনার বিরতি কাটিয়ে মাঠে ফেরার পর দুর্দান্ত বোলিং করতে দেখা যাচ্ছে কাটার মাস্টারকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলতি টেস্টেও শুরুটা ছিল চোখে পড়ার মতো।
দারুণ সব ডেলিভারিতে ব্যাটসম্যানদের ক্রমাগত বিভ্রান্ত করেছেন। প্রথম ইনিংসে ২৪ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দুই ব্যাটসম্যানই ফেরেন মোস্তাফিজের বল মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে।
নিজের তৃতীয় ওভারেই উইকেট পান মোস্তাফিজ, তুলে নেন জন ক্যাম্পবেলকে। ষষ্ঠ ওভারে এসে আরও এক উইকেটের দেখা। এবার মোস্তাফিজের দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ হন শায়ান মোসলে।
মোস্তাফিজের প্রথম ৭ ওভারের স্পেলটা ছিল রীতিমত ক্যারিবীয়দের জন্য ভয় জাগানিয়া। ২টি মেইডেনসহ মাত্র ১২ রানে ২ উইকেট তুলে নেন বাঁহাতি এই পেসার। কিন্তু এরপর আর ওতটা ভীতি তৈরি করতে পারেননি ফিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে মোট ১৫ ওভার বল করে ৪৬ রানে সেই ২ উইকেট নিয়েই শেষ করেন।
এমন শুরুর পর কেন হঠাৎ ছন্দপতন? কারণ খুঁজে বের করলেন দেশের ক্রিকেটার গড়ার কারিগর নাজমুল আবেদিন ফাহিম। বিকেএসপিতে প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করা এই ক্রিকেট কোচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মোস্তাফিজের বোলিং অ্যানালাইসিস করতে গিয়ে তুলে এনেছেন অনেকগুলো পয়েন্ট। শুধু তুলে ধরাই নয়, এই সমস্যাগুলো নিয়ে মোস্তাফিজের সঙ্গে দলের পেস বোলিং কোচের কাজ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
নাজমুল আবেদিন ফাহিমের বিশ্লেষণ, সম্প্রতি মোস্তাফিজের বোলিং পারফরম্যান্সে যেসব কারণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো-ডানহাতি ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে ওভার দ্য উইকেট বল করার সময় স্ট্যাম্পের কাছ থেকে বল করা।
এর ফলে উইকেট টু উইকেট বল করা এবং বল সুইং করানো, দুটিই সম্ভব হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে এলবিডব্লিউ এবং বোল্ড আউটের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া ব্যাটসম্যান চাইলেও রোম-এর অভাবে হাত খুলে না খেলতে পারছে না। ফলে তার বোলিং ইকোনমিতেও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।
কিন্তু এই উন্নতির ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, আম্পায়ারির ওয়ার্নিং। স্ট্যাম্পের কাছ থেকে বল করার কারণে ফলো থ্রুতে উইকেটের ডেঞ্জার জোনে বারবার পা পড়ে যাচ্ছিল মোস্তাফিজের। যা নিয়ে সতর্ক করেন আম্পায়ার।
আম্পায়ারের সেই সতর্কতার পর মোস্তাফিজকে আবার সেই প্রায় রিটার্ন ক্রিজের কাছ থেকে বল করতে দেখা গেছে। এতে করে বাঁহাতি এই পেসার বেশ কয়েকটি ঝামেলায় পড়ছেন বলে মনে করছেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম। তিনি সেই পয়েন্টগুলো তুলে ধরেছেন।
১. বল ভেতরে ঢোকানোর ব্যাপারে কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে। ফলে ডানহাতির বিরুদ্ধে ইনকামিং ডেলিভারি হচ্ছে না।
২. স্ট্যাম্প হিট করতে চাইলে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে বল পিচ করতে হচ্ছে। তাতে এলবিডব্লিউয়ের সুযোগ কমে যাচ্ছে।
৩. স্ট্যাম্প লাইনে বল পিচ করলে অ্যাঙ্গেলের কারণে তা অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরে দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। তাতে ব্যাটসম্যানরা যথেষ্ট রোম পেয়ে যাচ্ছেন।
৪. রোম পাওয়ার কারণে ব্যাটসম্যান আক্রমণাত্মক শট খেলার সুযোগ পাচ্ছে। তাতে খরুচে হতে হচ্ছে মোস্তাফিজকে।
৫. মোস্তাফিজ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে রাউন্ড দ্য উইকেট যেতে বাধ্য হচ্ছে। নতুন বলে এটা খুব ভালো অপশন নয়।
৬. সবমিলিয়ে বোলারের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরছে।
নাজমুল আবেদিন ফাহিম যোগ করেন, আম্পায়ারের ওয়ার্নিংয়ের আগে এবং পরের বোলিং পার্থক্য দেখলেই বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে। তার আশা, বোলিং কোচ অটিস গিবসন এই বিষয়গুলো নিয়ে মোস্তাফিজের সঙ্গে কাজ করে দ্রুতই সমাধান বের করতে পারবেন।
প্রতিনিধি